Issue area শিশুর জন্য ডিজিটাল ঝুঁকিসমূহ (শারীরিক, মানসিক, আর্থিক, সামাজিক), নিরাপত্তা এবং তা জানানোর কৌশল

এই ডিজিটাল সময়ে এসে বাস্তব জীবনের ঝুঁকির পাশাপাশি ডিজিটাল জগতের কিছু ঝুঁকি সম্পর্কে ধারণা রাখা অতীব জরুরি। এসব ঝুঁকি শিশুদের অনলাইন মাধ্যম ব্যবহারের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত তাদের অধিক বিশ্বাস প্রবণতা এবং অনভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হয়ে থাকে। আজকের দিনে শিশুর জন্য অনলাইন মাধ্যম বা ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার এড়ানো সম্ভব নয়। তাই এর ব্যবহার সম্পর্কে জানার পাশাপাশি একজন অভিভাবক হিসেবে এই মাধ্যমের ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকলে এবং সে সম্পর্ক শিশুকে সতর্ক করে দিলে এসব ঝুঁকি থেকে দূরে থাকা সহজ হবে। কয়েকটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল ঝুঁকি শারীরিক ঝুকি: ইন্টারনেটের অত্যন্ত বেশি আসক্তি শারীরিক ক্ষতির কারণ।  আমাদের শিক্ষা  ব্যবস্থায় কেবল পড়াশোনা নয়, শারীরিক কর্মকাণ্ডও অন্তর্ভুক্ত থাকে। আর সে কারণেই স্কুল-কলেজে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বিরতি বা টিফিন টাইম দেয়া হয়। তবে ইন্টারনেট এমন একটি গ্লোবাল সিস্টেম যেখানে এর ব্যবহারকারীদের কোনো শারীরিক বা কায়িক পরিশ্রম করার দরকার পড়ে না। তাই যে মানুষ বেশি সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করে সে তুলনামূলকভাবে খেলাধুলা, ব্যায়ামের মতো শারীরিক কার্যক্রম কম করে থাকে। আর এভাবে ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষকে শারীরিকভাবে কম সক্রিয়তার দিকে নিয়ে যায়। এর ফলে শিশুর সঠিক শারীরিক বিকাশ ব্যহত হতে পারে। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে নিদ্রাহীনতা বা ইনসমনিয়া হতে পারে। তাছাড়া বেশি সময় ধরে ডিভাইস ব্যবহারে পিঠ ও ঘাড়ে ব্যথা, চোখের সমস্যাসহ আরও কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। মানসিক ঝুকি: একজন শিশুর মধ্যে ইন্টারনেটে প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য নির্ধারিত চ্যাট রুম এবং সাইবার পর্ণের প্রতি আকর্ষণ বিশেষভাবে বেড়ে যায়। তার চিন্তা-ভাবনায় স্থান করে নেয় এ ধরনের নগ্ন ও বিকৃত রুচির সাইটগুলো। সাধারণত প্রথমদিকে কৌতূহল থাকলেও বেশিরভাগ মানুষই পরবর্তীতে এগুলোতে আর আকর্ষণ বোধ করে না। এসবের প্রতি কারো কৌতূহল ও আকর্ষণ যদি স্থায়ীরুপ লাভ করে তখনই সমস্যা। এছাড়াও অনলাইনে নৃশংস বা মারামারি, হানাহানির ভিডিও দেখলে শিশু মানসিক ঝুকির মধ্যে পড়তে পারে। এমনকি যে কোন ধরনের ঋণাত্মক ভিডিও যেমন ধর্ষণ, বন্যা, দাবানল ইত্যাদি শিশুর মনোজগতে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।    আর্থিক ঝুঁকি: অনলাইনেশিশুর বেশী আকর্ষণ থাকে বিভিন্ন ধরণের অনলাইন গেমস এর প্রতি। ভালো মানের অনলাইন গেমস গুলো ক্রয় করে তারপর ব্যবহার করা যায়। এর ফলে আর্থিক ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরী হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন সাইটে ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে শিশু না বুঝেই অনেক অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে ফেলতে পারে। এমন কি বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে গিয়েও শিশু প্রতারণার শিকার হতে পারে।  ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য শিশুদের অর্থ খরচ করতে হয় । বেশী বেশী সময় ইন্টারনেটে থাকার জন্য বেশী ডাটা ক্রয় করার প্রয়োজন পরে । আবার অনেক ওয়েব সাইট রয়েছে যাদের ভিডিও বা বিভিন্ন তথ্য দেখার জন্য টাকা প্রদান বা সাবস্ক্রাইব করতে হয়। এভাবে সচেতনার অভাবে শিশু বিভিন্ন রকম আর্থিক ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।  সামাজিক ঝুঁকি:  বাস্তব জীবনে সমস্যা তৈরি হতে পারে। সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার এইসব দিনরাত্রি নিয়ে আমাদের জীবন। সব দুঃখ-কষ্টকে সবাই একইভাবে মোকাবেলা করতে পারে না। ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং পেশাগত জীবনে সমস্যা আসতে পারে। অনেকে এইসব দুঃখ-কষ্ট ও সমস্যাকে ভুলে থাকার জন্য ইন্টারনেটকে বিকল্প হিসেবে বেছে নেয়। এভাবে বাস্তব জীবনের সমস্যাকে ভুলতে গিয়ে আরও একটি সমস্যায় পতিত হয়, যার নাম 'ইন্টারনেট আসক্তি'। ডিজিটাল/অনলাইন ঝুঁকি এড়ানোর জন্য যা করা উচিত:১।  আপনার বাড়িতে ডিজিটাল ঝুঁকি সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত। ঘন ঘন আপনার আপনার সন্তানদের নিয়ে বসা উচিত এবং তাদের এইসব নিয়ে সচেতন করতে হবে। আপনার সন্তানের অ্যাপগুলো আপনাদের সবসময় নিরীক্ষণ করতে হবে যে তারা কোন ধরনের ডিজিটাল ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে কিনা।২।  ছবি শেয়ার করার সময় আপনাকে সচেতন থাকতে হবে, আপনাকে ভাবতে হবে ছবি অপরিচিতদের সামনে প্রকাশ করা নিরাপদ কিনা? এ বিষয়গুলোও শিশুদেরকেও নিয়মিত অবহিত করা দরকার। ৩।  কিছু ব্যক্তিগত এবং সনাক্তকারী বিষয় যেমন: জন্ম তারিখ, বাড়ির ঠিকানা, জন্ম নিবন্ধন নম্বর ইত্যাদি শেয়ার না করাই উচিত।৪।  আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে আপনার শিশু মানসিকভাবে সমস্যাগ্রস্ত তখন তাদের সাথে পারস্পরিক কথোপকথন করু। তারা কি বলতে চায় তাদের কি সমস্যা শুনুন এবং তার সমাধান দিন। আশা করা যায় ডিজিটাল ঝুঁকি এড়ানো যাবে।৫।  শিশুরা কখনো কখনো টেক্সট করা, গেম খেলা , ইউটিউবে  ভিডিও দেখে অনেক সময় ব্যয় করে। এতে তদের ঘুমের ক্ষতি হয়। তাদের ঘুমের যাতে ক্ষতি না হয় সেই দিকে অভিভাবকদের নজর দিতে হবে যেন তারা সঠিক সময়ে খাওয়াদাওয়া, ঘুম, নৈমিত্তিককাজ করে।৬।  আপনার শিশুদের সচেতন করুন যেন তারা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে বা ঝূকিপূর্ণ উপায়ে শেয়ার না করে। তাদেরকে অনলাইনে ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ, কোন ধরনের তথ্য কোথায় শেয়ার করা ঝুঁকিপূর্ণ এসব বিষয়ে জানান এবং নিয়মিত মনে করিয়ে দিন।

আরও জানুন
Issue area তথ্য চুরি

ব্যক্তিগত বা পেশাগত যে কারণেই আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকুন না কেন, আপনাকে অনলাইন ঝুঁকিগুলো সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সচেতন না হলে অনলাইন মাধ্যমের বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ যে কয়েকটি সম্ভাব্য বিপদের সম্মুখীন হতে পারে তার মধ্যে ‘তথ্য চুরি’ অন্যতম। বিভিন্নভাবেই ইন্টারনেট থেকে আপনার তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। যেমন: ১। অরক্ষিত ওয়েবসাইট বা অনেকের ব্যবহৃত Wi-Fi-এ শেয়ার করা ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।২। আপনার মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার চুরি হয়ে গেলে এসব ডিভাইস থেকেও ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য ইত্যাদি চুরি হতে পারে।৩। প্রতারকরা ইমেইল হ্যাকিং এর মাধ্যমে ব্যাংক এবং ক্রেডিট কার্ড স্টেটমেন্ট, পূর্ব-অনুমোদিত ক্রেডিট কার্ড অফার, কর-প্রদান সংক্রান্ত তথ্য এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্যের নাগাল পেতে পারে।৪। বিভিন্ন থার্ড পার্টি সোর্স (উৎস) থেকে ব্যক্তিগত তথ্য কিনে নেওয়ার মাধ্যমেও প্রতারকরা অনেক স্পর্শকাতর তথ্যের নাগাল পেতে পারে।৫। ইন্টারনেট তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মচারী, যার কাছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অ্যাক্সেস আছে, এমন মানুষের মাধ্যমেও আপনার ইন্টারনেটে দেওয়া তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে।৬। একজন হ্যাকিং এর শিকার হলে, তার ডিভাইসের মাধ্যমে পরিবারের বা কর্মসংস্থানের অন্যান্য কর্মীদের তথ্য ও চুরি হতে পারে।৭। থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি হয়ে যাওয়া বা বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।৮। ফিশিং এর মাধ্যমে তথ্য চুরি করতে পারে। অর্থাৎ এমন কোন সাইট বা লিঙ্কে আপনাকে নিয়ে গেলো যার মাধ্যমে আপনার ইমেইল, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি তথ্য চুরি করে তারপর আরও মূল্যবান তথ্য চুরি করে ফেলতে পারে।৯। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারকৃত বিভিন্ন তথ্য পাবলিক করে রাখলে এসব তথ্য প্রতারকরা অনায়াসেই চুরি করে ফেলতে পারে।১০। কোন অপ্রয়োজনীয় এবং নকল ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি এবং ব্যক্তিগত তথ্য দিলে তথ্য চুরি হতে পারে।১১। অনেক ওয়েবসাইট বা অ্যাপে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তেমন শক্তিশালী নয়, সেসব অনিরাপদ ওয়েবসাইট তথ্য দিলেও আপনার তথ্য ঝুঁকির মধ্যে থাকবে।মনে রাখবেন, সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন অবৈধ কাজে আপনার তথ্য ব্যবহার করতে পারে। এমনকি ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে টাকা চুরি, আপনার নামে ক্রেডিট কার্ড অথবা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে বা নকল পরিচয়পত্র তৈরি করে আরও বড় কোন অপরাধ করতে পারে। এর ফলে আর্থিক বা সামাজিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ভারও পড়তে পারে আপনারই ওপর। কাজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান ও সংরক্ষণে যত্নবান হওয়া একান্তই জরুরি। নিজে সতর্ক হবার পাশাপাশি প্রাসোঙ্গিক বিষয়গুলো আপনার শিশুকেও অবহিত করুন এবং সচেতন করুন ডিজিটাল দুনিয়ায় সতর্ক আচরণ করতে। 

আরও জানুন
Issue area অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং

হ্যাকিং কী?হ্যাকিং হল কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের সমন্বয়ে তৈরি নেটওয়ার্ককে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার একটি প্রচেষ্টা। সহজ কথায় বলতে গেলে, অসৎ উদ্দেশ্যে কম্পিউটারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করাকে হ্যাকিং বলা হয়ে থাকে।অসৎ ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন কারণে হ্যাকিং করে থাকে। যারা হ্যাকিং করে তাদেরকে হ্যাকার বলা হয়। একসময়ে হ্যাকিং অসৎ ব্যক্তির খামখেয়ালি হিসেবে পরিচিতি পেলেও এখন তা বিলিয়ন ডলারের অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। অ্যাকাউন্টগুলি যেভাবে হ্যাকিং হয়ে থাকে:প্রযুক্তির অপব্যবহারের অন্যতম উদাহরণ হলো হ্যাকিং। হ্যাকাররা বিভিন্ন কৌশলের সাহায্যে এই অপকর্মটি করে থাকে। যেমন- ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন প্ররোচনা প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিকর লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট ব্যবহার করিয়ে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টকে মনিস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে যাচাই করা হয় এবং ব্যবহারকারীর জন্য লোভনীয় বা আগ্রহ সঞ্চারক লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট প্রদান করে তাকে এসব লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলা হয়। এছাড়াও, ম্যালওয়্যার এর সাহায্যে ব্যাপক হারে হ্যাকিং হয়ে থাকে।  এক্ষেত্রে সরাসরি প্রযুক্তির অপপ্রয়োগের মাধ্যমে হ্যাকাররা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অজান্তেই অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে থাকে।প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের মনোবৈজ্ঞানিক যাচাই পদ্ধতি ছাড়াও আরো কিছু উপায় অবলম্বন করে হ্যাকাররা আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারে। যেমন- বটনেট ব্যবহার করে, ব্রাউজার হাইজ্যাকিং করে, র‍্যানসমওয়্যার ব্যবহার করে, ভাইরাস প্রয়োগ করে, ইত্যাদি।হ্যাকিং এর উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে এই অসৎ কাজটিকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন-ক) আর্থিক লাভের উদ্দেশ্যে - হ্যাকাররা ক্রেডিট কার্ড নম্বর চুরি করা, একাউন্ট সম্পর্কিত স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ বা সম্পূর্ণ ব্যাঙ্কিং সিস্টেম হ্যাকের মাধ্যমে প্রতারণা করে থাকে।খ) কর্পোরেট বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গুপ্তচরবৃত্তি করার উদ্দেশ্যে – অনেক সময়ে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের হ্যাকাররা সুবিধা অর্জনের জন্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের পণ্য এবং পরিষেবাগুলির তথ্য চুরি করে থাকে।গ) জাতীয় নথিপত্র চুরির উদ্দেশ্যে – আন্তর্জাতিক মহলে প্রভাব ও প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্য অনেক সময়ে শক্তিশালী দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি প্রতিযোগী দেশের জাতীয়, স্পর্শকাতর এবং গুরূত্ববহ তথ্য চুরি করে থাকে।হ্যাকিং থেকে বাঁচতে যে সকল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি –- মালওয়্যার ও র‍্যানসমওয়্যার এর হাত থেকে বাঁচতে ‘অ্যান্টি মালওয়্যার নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ ও ‘অ্যান্টি-র‍্যানসমওয়্যার নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গুগলের ‘প্লে স্টোর’ থেকে এই জাতীয় বিভিন্ন সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ইসেট, ক্যাস্পারস্কি, অ্যাভাস্ট ইত্যাদির ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়।- অ্যাপ্স সমূহ ডাউনলোড ও ব্যবহারের পূর্বে এর উৎসের যোগ্যতা ও যথার্থতা যাচাই করতে হবে। ‘প্লে স্টোরে’ বিভিন্ন অ্যাপের রিভিউ দেওয়া থাকে। তাছাড়া, ব্যবহারকারীরা নিজেদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতাও মতামত সেকশনে লিখে থাকেন। অ্যাপ্স ডাউনলোড ও ব্যবহারের পূর্বে এই সকল রিভিউ এবং মতামত যাচাই করে নিতে হবে।- নিয়মিত সফটওয়্যারগুলো হালনাগাদ (আপডেট) করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত উৎস থেকে হালনাগাদ ফাইল নামাতে হবে। গুগল প্লে স্টোর, আই টিউন্স, সফটোনিক, সফটপিডিয়া ইত্যাদি সাইটগুলো থেকে নির্ভরযোগ্য আপডেটসমূহ ডাউনলোড করা যায়।-  ইন্টারনেট ব্যবহারকালীন অপরিচিত এবং অপ্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট ও লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে।-  নিয়মিত পাসওয়ার্ড হালনাগাদ করতে হবে এবং একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড নির্বাচন ও ব্যবহার করতে হবে। শক্তিশালী বলতে অনুমান করা কঠিন এমন পাসওয়ার্ড। যেমন- অনেকে পাসওয়ার্ড হিসেবে মোবাইল নাম্বার কিংবা জন্মতারিখ ব্যবহার করে, যেটা অনুমান করা সহজ। তা না করে যদি সংখ্যা, চিহ্ন, ছোট হাতের-বড় হাতের বর্ণ মিলিয়ে একটা ১২-১৩ ডিজিটের পাসওয়ার্ড বানানো যায়, তাহলে সেটা যে কারো পক্ষে অনুমান করা কঠিন হবে।

আরও জানুন
Issue area ফিশিং

মোবাইল ফোন আসার আগের যুগের কথা ভাবুন তো! কেমন ছিলো সময়টা? প্রতারক চক্র বা লোভ দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেবার কোন ঘটনা মনে করতে পারেন? লটারি জেতার সুযোগ, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চাকরি দেবার লোভনীয় অফারের নাম করে টাকাকড়ি হাতিয়ে নেয়ার কথা হয়তো শুনে থাকবেন। এরপর মোবাইল ফোন আসার পরে ফোন করে ভুয়া লটারি জেতার খবর বা জ্বিনের বাদশার কথা বলে, অ্যাকাউন্ট অচল হবার ভয় দেখিয়ে প্রতারণা হয়েছে একটা সময়। ইন্টারনেট আসার পরে এই মাধ্যম ব্যাবহার করে প্রতারণার মাত্রা খুবই বেড়ে গেছে। কিন্তু এই দ্রুত পরিবর্তন হতে থাকা সাইবার জগতের সাথে অনেকেই তাল মেলাতে পারেন না। জ্বিনের বাদশা বা প্রতারকের সহজ শিকার এই সময়ের মানুষ খুব কমই হন। তবে  সঠিক জানার অভাবে অনলাইন মাধ্যমে প্রতারণার পরিমাণ বাড়ছেই। এর বড় একটা কারণ সম্ভবত আমরা যেকোনো লোভনীয় অফার, তথ্য যাচাই-বাছাই না করেই বিশ্বাস করে ফেলি। এমনই একটি অনলাইন প্রতারণার নাম হচ্ছে ফিশিং। আসুন জেনে নেয়া যাক ফিশিং সম্পর্কে। ফিশিং কী?ফিশিং শুনতে হয়তো মনে হচ্ছে মাছ ধরাকে বোঝাচ্ছে। এই কাজটাকে একরকম মাছ ধরাই বলতে পারেন। কারণ প্রতারণার মস্ত বড় টোপ গিলে আপনি ব্যক্তিগত তথ্য থেকে শুরু করে টাকাকড়ি প্রতারকের হাতে তুলে দিতে পারেন! আসলে ফিশিং হচ্ছে অনলাইন মাধ্যম ব্যাবহার করে প্রতারণা। যেমন অনলাইন মাধ্যমে নানান অফারের কথা বলে, আপনার অ্যাকাউন্ট অচল হয়ে গেছে ঠিক করা লাগবে বা এইখানে তথ্য না দিলে আপনার অ্যাকাউন্ট অচল হয়ে যাবে এসব বলে, ফোনে বা অনলাইনে মেসেজে, ইমেইলে, এমনকি আপনার ব্যাবহার করা পরিচিত সাইটের মতই নকল সাইট তৈরি করেও তারা এই ফাঁদ পাততে পারে।ফিশিং কীভাবে করে?প্রথমত, আপনাকে ম্যালওয়ার সংযুক্ত ইমেইল পাঠাতে পারে। সেক্ষেত্রে ইমেইলে কোন লিঙ্ক থাকলে সেই লিঙ্কে দেখেশুনে ক্লিক করবেন। ইমেইলে অ্যাটাচমেন্ট আকারে পাঠানো ফাইল নিশ্চিত না হয়ে ডাউনলোড করবেন না।  এছাড়া ফোনে, ইমেইলে বা অন্য কোনভাবে কোন ব্যক্তিগত পাসওয়ার্ড দিতে বলতে পারে। বৈধ কর্তৃপক্ষের ছদ্মবেশে আপনার পাসওয়ার্ডসহ ব্যক্তিগত অনেক তথ্য ওদের হাতে চলে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য কোন মাধ্যমে স্প্যাম মেসেজ দিতে পারে। এক্ষেত্রে তারা লিঙ্কসহ স্প্যাম মেসেজ লিখে অনেককে ইনবক্সে পাঠায়। এর সাথে আইডি বন্ধের ভয় থেকে শুরু করে অনেক বড় পুরষ্কার জেতার লোভ দেখানো হয়। আপনি লোভে পরে ক্লিক করলেই আপনার আইডি, পাসওয়ার্ড ওদের হাতে চলে যাবে। তৃতীয়ত, প্রচলিত সাইটগুলোর নকল ফিশিং সাইট তৈরি করেও প্রতারক এই কাজ করতে পারে। সেক্ষেত্রে আপনার পরিচিত একটি সাইটের মতই সাইটে আইডি-পাসওয়ার্ড দিতে বলবে বা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বারের পিন নাম্বার দিতে বলবে। পাসওয়ার্ড দেয়ার সাথে সাথেই আপনি সব তথ্য ওদের দিয়ে দিলেন। আমরা এতক্ষণ যে ফিশিং নিয়ে কথা বললাম তাকে বলে স্প্যাম ফিশিং। ব্যাপারটা ফাঁদ পেতে শিকারের অপেক্ষা করার মত। তবে আরেক ধরনের ফিশিং আছে যেখানে একজন ব্যক্তিকে টার্গেট করে ফাঁদ পাতা হয় যাকে বলে স্পিয়ার ফিশিং। এই ফিশিংয়ের লক্ষ্য সাধারণত প্রভাবশালী কেউই হয়ে থাকেন। ফিশিং থেকে বাঁচার উপায়- ব্যক্তিগত ও আর্থিক তথ্য ইমেইল বা অন্য কোন অনলাইন মাধ্যমে শেয়ার করবেন না।-  ইমেইল বা মেসেজে কোন লিঙ্ক কেউ দিলে নিশ্চিত না হয়ে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। সন্দেহ থাকলে ওপেন করবেন না।- ওয়েবসাইটে প্রবেশের আগে সেখানের ওয়েব এড্রেসটি নিশ্চিত হয়ে নিন। অনেক সময় প্রায় একই বানানে অনেক ফিশিং সাইট থাকে। যেমন – youtube.com এ যেতে গিয়ে আপনি  youtude.com এ প্রবেশ করছেন কিনা খেয়াল করুন। বানান প্রায় একই হলেও এগুলো ফিশিং সাইট হতে পারে।- যদি কোন মেইল বা ওয়েবসাইট নিয়ে সন্দেহ হয় তাহলে সেই কোম্পানি বা সেবাদানকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে নিন তারাই আপনাকে মেইল করেছে কিনা। ফিশিং এর শিকার হয়ে গেলে পর কী করবেন?-  সেই অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড দ্রুত বদলে ফেলুন। এই পাসওয়ার্ড অন্য কোথাও থাকলে সেগুলোও বদলে ফেলুন।-  অ্যাকাউন্ট যে ওয়েবসাইটে বা ব্যাংকে তাদেরকে বিষয়টা দ্রুত জানান।-  আপনার অফিসের কাজে এমন হলে দ্রুত আইটি ডিপার্টমেন্টকে জানান বা অভিজ্ঞ কাউকে জানান।-  ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় পুলিশের সহযোগিতা নিন।

আরও জানুন
Issue area শিশুর জন্য নিরাপদ অ্যাপ/সাইট

বর্তমানে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডের অ্যাপ স্টোর গুগল প্লে স্টোরে বিভিন্ন রকম অ্যাপ পাওয়া যায় যা চাইলেই খুব সহজে ইন্সটল করে নিয়ে ব্যবহার করা যায়। প্রতিটি অ্যাপে ঢুকলে নামের নিচে 3+, 7+, 12+, 16+ ও 18+ এমন কিছু লেখা থাকে। এই লেখাগুলো মূলত অ্যাপটি কাদের জন্য ব্যবহার উপযোগী সেটা বলে দেয়। 3+ রেইটেড সব অ্যাপ ৩ বছর বা তার বেশি বয়সের সবাই ব্যবহার করতে পারবে। একইভাবে 18+ রেইটেড মানে হল এইসব অ্যাপ ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সের মানুষদের জন্য ব্যবহার উপযোগী। শিশুদের জন্য 3+ থেকে 12+ পর্যন্ত রেইটেড অ্যাপগুলো ব্যবহার করা নিরাপদ। একইভাবে Age rating করা থাকে অ্যাপল অ্যাপ স্টোরেও। সেখানেও বয়সের এই রেটিং দেখে নিয়ে শিশুদের জন্য নিরাপদ অ্যাপগুলো প্রথমেই আলাদা করা যায়। এছাড়াও অনেক অ্যাপ শিশুদের জন্য আলাদা করে তৈরি করা হয়। এসব অ্যাপের নামের শেষে Kids যুক্ত করে দেয়া হয় আলাদা করে চেনার জন্য। যেমন Khan Academy Kids, Youtube Kids ইত্যাদি। এরকম যেকোনো অ্যাপের Kids ভার্সনগুলো শিশুদের জন্য নিরাপদ। ইউটিউবে রেস্ট্রিক্টেড মোডইউটিউব অ্যাপে ঢুকলে ডানদিকে একদম উপরে গুগল আইকনে ক্লিক করলে সেটিংসসহ বেশকিছু মেনু পাওয়া যাবে। সেটিংসে ক্লিক করলে নিচের দিকে রেস্ট্রিক্টেড মোড নামে একটি অপশন পাওয়া যাবে। এটি অন করে দিলে  শুধু প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য তৈরি ভিডিওগুলো আসা বন্ধ করা যাবে। এতে যেসব ভিডিও ১৮ বা তারচেয়ে বেশি বয়সের মানুষদের জন্য উপযোগী সেগুলো আর আসবেনা। তখন শিশুদের জন্য এই ইউটিউব অ্যাপ ব্যবহার করা নিরাপদ। শিশুদের জন্য ইউটিউবের আলাদা একটি অ্যাপ রয়েছে  Youtube Kids নামে। সেখানে বড়দের অ্যাকাউন্ট দিয়ে লগইন করে দিতে হবে প্রথমেই। তারপর ছোটরা চাইলে এটি ব্যবহার করতে পারবে। ইউটিউব কিডসের ভিডিও কনটেন্টগুলো বাচ্চাদের উপযোগী হওয়ায় এটি ব্যবহার নিরাপদ।গুগলে সেইফ সার্চসেইফ সার্চ (Safe Search) মূলত গুগল সার্চগুলো সীমিত বা রেস্ট্রিক্ট করার উপায়। গুগলের সার্চ করলে যাতে কোনরকম অবাঞ্ছিত ওয়েবসাইট, লিংক বা কোনকিছু না আসে সেজন্য মোবাইলের ব্রাউজার থেকে গুগল সেইফ সার্চ অন্য করে দেয়া যায়। ব্রাউজার থেকে গুগলের সার্চ সেটিংসে গেলে সেখানে Safe Search Filters নামে অপশন পাওয়া যাবে। এখানে Hide Explicit Results অন করে দিলে গুগল সার্চ রেস্ট্রিক্টেড হয়ে যাবে অর্থাৎ সার্চ করলে আর কোনরকম এডাল্ট কন্টেন্ট বা শিশুদের অনুপযোগী কিছু দেখাবে না। এতে করে গুগলের সার্চ থেকে যত ওয়েবসাইটের লিংক আসবে সেগুলো শিশুদের জন্য নিরাপদ হবে।পেইড অ্যাপস দিয়ে নিরাপত্তাKaspersky Safe Kids, Qustodio, McAfee Safe Family, Norton Family এরকম কিছু অ্যাপ মোবাইল এবং কম্পিউটারে চালানো যায় যা শিশুদের জন্য আলাদা করে তৈরি করা হয়েছে যাতে করে শিশুরা নিরাপদে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে ব্রাউজ করতে পারে বা বিভিন্ন নিরাপদ অ্যাপ ব্যবহার করতে পারে। এসব অ্যাপ মূলত শিশুদের অনুপযোগী কনটেন্ট আছে এমন সব ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস বন্ধ করে দেয়। যার ফলে এগুলো ইন্সটল করে নিলে ডিভাইসটি দিয়ে অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটে ব্রাউজ শিশুদের জন্য নিরাপদ ধরে নেয়া যায়।FableVision Studios, AppsChopper, Toca Boca সহ আরও অনেক অ্যাপ ডেভেলপার কোম্পানি শিশুদের জন্য টার্গেট করে গেমস এবং শিক্ষণীয় অ্যাপ তৈরি করে থাকে। এমন ডেভেলপারদের অ্যাপগুলো শিশুদের জন্য নিরাপদ।www.kidsafeseal.com একটি চমৎকার কোম্পানি যা শিশুদের জন্য উপযোগী অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটগুলোকে সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে। যেসব অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটের kidsafeseal সার্টিফিকেট আছে সেসব ওয়েবসাইট শিশুদের জন্য নিরাপদ ধরে নেয়া যায় কোনপ্রকার চিন্তা ভাবনা ছাড়াই। কোন কোন অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের এই সার্টিফিকেট আছে সেটা তাদের Member List থেকে দেখে নেয়া যায়। এই লিস্টের সকল অ্যাপ এবং ওয়েবসাইট শিশুদের জন্য উপযোগী। যেমন- এই লিস্টে caribou নামের অ্যাপটির কথা ধরা যাক। এতে শিশুদের জন্য ভিডিও কলের পাশাপাশি বেডটাইম স্টোরির সুবিধাও পাওয়া যাবে।

আরও জানুন
Issue area শিশু অনলাইনে কী করতে পারবে, কী করতে পারবে না সে সম্পর্কিত ধারণা

অনেক সময় অভিভাবকরা ইন্টারনেট জগতের সবকিছু না জানার কারণে তাদের সন্তানদের ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখতে চান। আমরা ভাবি যে ইন্টারনেট আমাদের সন্তানদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কিন্তু ইন্টারনেট বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে। আমাদের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের সন্তানদের প্রয়োজন অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত। ইন্টারনেটে শিশুরা যা যা করতে পারে ১। অনলাইনে পড়াশোনাইন্টারনেটের মাধ্যমে শিশুরা তাদের আগ্রহের বিষয়ে অনেক কিছু খুঁজে বের করতে পারে। সঠিক ব্যবহার জেনে কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ের ছাত্ররাও অনলাইন লাইব্রেরিতে গিয়ে তাদের পছন্দ মতন বই এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ খুঁজে বের করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট ব্যবহার  করে তাদের স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে পারে এবং তাতে অনেক রকম তথ্য যোগ করতে পারে , ছবি, ভিডিও যোগ করতে পারে। ২। একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে জ্ঞানার্জনএকাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও গণিত, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সঙ্গীত, ছবি আঁকা, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক ডিজাইন এর মত বিভিন্ন বিষয়ে শিশুদের আগ্রহ থাকে। অনলাইনে এসব বিষয়ে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে, কোর্স, ওয়ার্কশপে অংশ নিয়ে শিশুরা এসব বিষয়েও শিখতে পারে। ৩। অনলাইনে ক্লাস করাযেকোনো দীর্ঘমেয়াদী আপদকালীন সময়ে শিশুদের স্কুল বন্ধ থাকলেও পড়াশোনার যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য অনলাইন ক্লাস করতে পারে। ৪। অনলাইনে পরীক্ষা দেয়াঅনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি প্র্যাকটিকল পরীক্ষা বাদে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে স্কুলের সব পরীক্ষাই দেয়া সম্ভব। ৫) ভার্চুয়াল জগত ঘুরে দেখাভার্চুয়াল জগতে তারা বিভিন্ন খেলার সাথে পরিচিত হয় অন্য খেলোয়াড়দের সাথে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে, এর মাধ্যমে তারা উপার্জন করতে পারে। Virtual Worlds Management কোম্পানির মতে এসব ভার্চুয়াল খেলা বাচ্চাদের কাছে এত জনপ্রিয় যে তারা এইরকম ২০০ টি সাইট নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটিতে শিক্ষামূলক বিষয় রয়েছে যা তাদের খেলোয়াড় বানানোর পাশাপাশি সামাজিক ও নাগরিক দায়িত্ব নিতে শিখাবে। তারপরও নিরাপত্তার দিকে অভিভাবকদের দৃষ্টি রাখতে হবে। ৬) বিনোদনের মাধ্যমশিশুরা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিনোদনমূলক ভিডিও দেখতে পারে, ভিডিও গেম খেলতে পারে। ভিডিও করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করতে পারে । তবে শিশুরা যাতে ক্ষতিকর দিকগুলো এড়িয়ে চলতে পারে সে ব্যাপারে অভিভাবক শিশুদের সতর্ক করে দিবেন। ইন্টারনেটে শিশুরা যা যা করতে পারবে নাশিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেওয়ার ভাল দিকের পাশাপাশি কিছু খারাপ দিকও আছে তাই অভিভাবকদের উচিত বাচ্চাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করার ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা। এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় থেকে নিরাপদে রাখা। ১) অপরিচিত কারো সাথে যোগাযোগ রাখাবিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশুরা অপরিচিত লোকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এই যোগাযোগের ব্যাপারে শিশুদের সতর্ক করে দিতে হবে বা  এ ধরনের যোগাযোগ যথাসম্ভব বন্ধ রাখতে হবে। কারণ এ ধরনের যোগাযোগে শিশু বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিতে পরতে পারে। শিশুর অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এসব লোক তাদের ক্ষতি করতে পারে বা গ্রুমিং করতে পারে। ২) ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করাশিশুরা যাতে অনলাইনে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা সব বয়সী মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে শিশুরা অনেক ব্যাপারে অনভিজ্ঞ থাকায় তাদের জন্য এই ঝুঁকির পরিমাণ আরও বেশি। ৪)  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট তৈরিশিশুরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন: Facebook, Twitter, Instagram এ অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে চাইতে পারে। তবে এসব জায়গায় অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য বয়সের বাধা আছে। ১৩ বছরের নিচের কেউ এখানে অ্যাকাউন্ট করতে পারে না। আবার বয়স ১৩ বছর হয়ে গেলেও শিশুর মানসিক বিকাশের প্রতি লক্ষ্য রেখে তখনই তাকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে দেয়া উচিত না।  ৫। শিশুর অনুপযোগী অ্যাপে ডাউনলোড, সাইটে প্রবেশকিছু অ্যাপ ও সাইট আছে যেগুলো আমাদের সাইবার নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। আবার কিছু অ্যাপ এবং সাইটের কন্টেন্টের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া থাকে। কিছু কন্টেন্ট এবং সাইট শুধুই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। এসব জায়গা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে। 

আরও জানুন
Issue area ব্যক্তিগত তথ্য পরিচিতি

ব্যক্তিগত তথ্য হচ্ছে একজন ব্যক্তিকে আলাদা করে চেনার জন্য স্বতন্ত্র তথ্য। এ ধরনের তথ্যগুলো ব্যক্তির পারিবার, পেশা বা ধর্মীয় সূত্রে হতে পারে। কোনগুলো ব্যক্তিগত তথ্য?অনেক ধরনের তথ্য এবং মতামতই ব্যক্তিগত তথ্যের কাতারে পরে যা দিয়ে আসলে একজন ব্যক্তিকে আলাদা করে চেনা যায়। কিছু ব্যক্তিগত তথ্য হচ্ছে – ১। পারিবারিক ও পরিচয় সংক্রান্ত তথ্যনাম, স্বাক্ষর, ঠিকানা, ফোন নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নাম্বার, জন্মদিন, ফিঙ্গার প্রিন্ট ইত্যাদি হচ্ছে এ ধরনের তথ্য। একজন ব্যক্তিকে শনাক্ত করার জন্য এ তথ্যগুলো প্রয়োজন হয়।২। স্পর্শকাতর তথ্যজাতিগত পরিচয়, লিঙ্গ, রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্মীয় বিশ্বাস, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য, ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে তথ্য এগুলো হচ্ছে স্পর্শকাতর তথ্য। এই তথ্যগুলো একজন ব্যক্তির পরিচয়ের বাইরেও চরিত্রায়নের জন্য জরুরি তথ্য। এ ধরনের তথ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোর কোন অসামঞ্জস্যতা সমাজে অনেক জটিল পরিস্থিতি তৈরি করে বলে এগুলো স্পর্শকাতর তথ্য।৩। আর্থিক তথ্যআর্থিক তথ্য হচ্ছে ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, টাকার পরিমাণ, পিন নাম্বার, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, লেনদেনের তথ্য ইত্যাদি। এই তথ্যের সাথে একজন ব্যক্তির আয়-ব্যয়, আর্থিক লেনদেন, সম্পদের পরিমাণের মত বিষয়গুলো জড়িত।৪। পেশা সংক্রান্ত তথ্যপেশা সংক্রান্ত তথ্য হচ্ছে চাকরি ক্ষেত্রের পদ, বেতন, পদোন্নতি সংক্রান্ত তথ্য। এসব তথ্য সমাজে একজন ব্যক্তির অবস্থান ও ভূমিকার সাথে জড়িত বলে এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। ৫। ডিজিটাল তথ্যছবি, ভিডিও, অডিও, লিখিত কোন কন্টেন্ট, ই-মেইল এড্রেস, পাসওয়ার্ড, পিন নাম্বার, মোবাইলের লোকেশনের তথ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রোফাইলের লিঙ্ক ইত্যাদি হচ্ছে ডিজিটাল তথ্য। ডিজিটাল মাধ্যম আমাদের জীবনের বেশ বড় একটা ফ্যাক্টর হয়ে যাওয়ার কারণে এই তথ্যগুলোও অনেক গুরুত্ব বহন করে। ডিজিটাল মাধ্যমে আমাদের পরিচয় এই তথ্যগুলোই।৬। আচরণগত তথ্যএকজন মানুষ কেমন তা বোঝার জন্য যেসব তথ্য জানা প্রয়োজন সেগুলো হচ্ছে আচরণগত তথ্য। যেমন একজন মানুষের কথার ধরন, অন্যদের সাথে ব্যবহার, মেজাজ, ভব্যতা-বোধ, শিষ্টাচার, সদাচার, চিন্তাভাবনা ইত্যাদি হচ্ছে আচরণগত তথ্য।৭। ব্যক্তিগত পছন্দ সংক্রান্ত তথ্যপছন্দ-অপছন্দ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহের মত তথ্যগুলো একজন ব্যক্তিকে বোঝার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। এই তথ্যগুলো দিয়ে অনেক সময় অপরিচিত মানুষকে ভালোমতো না জেনেও যাচাই করে ফেলা যায়।

আরও জানুন
Issue area ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখার গুরুত্ব/ প্রয়োজনীয়তা

অনেকেই অনলাইন মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য খুব বেশি প্রকাশ করেন এবং অনলাইনে প্রাইভেসি সংক্রান্ত ব্যাপারে খুব বেশি সচেতন থাকে না। এসব কারণে কেউ কেউ বিভিন্ন ধরণের ঝুঁকির সম্মুখীন হয়। এজন্য এসব তথ্য গোপন রাখা উচিত। চলুন, জেনে নেয়া যাক ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখার প্রয়োজনীয়তাগুলো- ১। তথ্য চুরি থেকে বাঁচানোঅনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য প্রচারের কারণে অনেকের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির সম্ভাবনা থাকে। তথ্য চুরি থেকে বাঁচানোর জন্য ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখা প্রয়োজন। ফোন নাম্বার, ছবি, পেশা, আর্থিক তথ্য গোপন না রাখলে চুরির সম্ভাবনা অনেক। ২। জালিয়াতচক্র এড়িয়ে চলাঅনেক সময় জালিয়াতচক্র কাউকে টার্গেট করে তার ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে তথ্য জালিয়াতি থেকে শুরু করে আর্থিক জালিয়াতির মত ঘটনা ঘটিয়ে থাকে। এসব ঝামেলা এড়িয়ে চলার জন্য গোপনীয়তা জরুরি। ৩। অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তাসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা বিভিন্ন ওয়েবসাইটের অ্যাকাউন্ট, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার জন্য অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য যেমন- ইমেইল এড্রেস, পাসওয়ার্ড, পিন নাম্বার, ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড, অ্যাকাউন্ট নাম্বার এসব তথ্য গোপন করে রাখা খুবই জরুরি। কেউ এসব তথ্য জেনে গেলে আপনার অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে। কখনো কখনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট থেকে জালিয়াতি করে টাকা ট্রান্সফার করে নিতে শোনা যায়। এসবের ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টটি যিনি ব্যবহার করছেন তারও দায়ভার আছে। কেননা তিনি এসব তথ্য অন্য মানুষের কাছে গোপন না রাখায় তারা এসব তথ্য পেয়ে গেছে। ৪। পারিবারিক নিরাপত্তার জন্যআমরা কখন কোথায় যাচ্ছি, কী করছি এসব দৈনন্দিন তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি অনেকটাই। এসব তথ্য যত কম দেয়া যায় ততই ভালো। কারণ এসব তথ্য থেকে আপনাকে এবং আপনার পরিবারের গতিবিধি নজরদারি করা খুবই সহজ। কেউ আপনার পরিবারের কোন ক্ষতি করতে চাইলে বা অন্য কোন ধরনের অপরাধ করতে চাইলে নজরদারি করে আপনাকে বিপদে ফেলার পরিকল্পনা করতে পারে। ৫। ব্যবসায়ীদের কাছে বিজ্ঞাপনের লক্ষ্যে পরিণত না হবার জন্যআমাদের কোন ধরনের পণ্য পছন্দ, কোন বিষয়ে আগ্রহ বেশি এসব বিষয় কিন্তু সামাজিক মাধ্যমে আমাদের এক্টিভিটি থেকে খুব সহজেই বুঝে নেয়া সম্ভব। আবার ফেসবুকের এলগরিদমের মাধ্যমে এসব তথ্য থেকে আপনার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, পছন্দ-অপছন্দ সম্পর্কে ধারণা করে তারপর আপনার সামনে বিজ্ঞাপন দেয়া শুরু করে। এবং এসব বিজ্ঞাপনের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমরা প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে বিভিন্ন পণ্য কিনে থাকি। অর্থাৎ আমাদের অনলাইন এক্টিভিটি থেকে তথ্য নিয়ে পরোক্ষভাবে আমাদের কোন একটা পণ্য বা সেবার ভোক্তা বানিয়ে দেয়া হয় খুব সহজেই। কারো দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে চলার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে যত কম ব্যক্তিগত তথ্য দেয়া যায় তার চেষ্টা করতে হবে। ৬। সাইবার অপরাধের শিকার না হবার জন্যঅনলাইনে সাইবার অপরাধের একটা ধরন হচ্ছে কারো ছবি বা ভিডিও নিয়ে তা অন্য কোন অবাঞ্চিত, অযাচিত এবং কুরুচিপূর্ণভাবে এই ছবিগুলো ব্যবহার করা। অনলাইনে নিজের ছবি বা ভিডিও দেয়ার ক্ষেত্রে এজন্যই সতর্ক থাকা উচিত। ছবি শেয়ার করলেও তার গোপনীয়তা কতটা আছে তা নিশ্চিত হয়ে দেয়া উচিত। ৭। অপব্যবহার রোধ করার জন্যঅনেক সময় একটি ঘটনার ছবি অন্য জায়গায়, একটি ঘটনার তথ্য অন্য ঘটনার সাথে জুড়ে দিয়ে নানান গুজব ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হয়। ব্যক্তিগত তথ্যের এ ধরনের অপব্যবহার রোধ করার জন্য সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে তথ্য গোপন করে রাখা খুব জরুরি।

আরও জানুন