শিশু অনলাইনে কী করতে পারবে, কী করতে পারবে না সে সম্পর্কিত ধারণা

অনেক সময় অভিভাবকরা ইন্টারনেট জগতের সবকিছু না জানার কারণে তাদের সন্তানদের ইন্টারনেট থেকে দূরে রাখতে চান। আমরা ভাবি যে ইন্টারনেট আমাদের সন্তানদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। কিন্তু ইন্টারনেট বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা দিয়ে থাকে। আমাদের সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য আমাদের সন্তানদের প্রয়োজন অনুযায়ী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত।

 ইন্টারনেটে শিশুরা যা যা করতে পারে

 ১। অনলাইনে পড়াশোনা

ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিশুরা তাদের আগ্রহের বিষয়ে অনেক কিছু খুঁজে বের করতে পারে। সঠিক ব্যবহার জেনে কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ের ছাত্ররাও অনলাইন লাইব্রেরিতে গিয়ে তাদের পছন্দ মতন বই এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ খুঁজে বের করতে পারবে। শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেট ব্যবহার  করে তাদের স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে পারে এবং তাতে অনেক রকম তথ্য যোগ করতে পারে , ছবি, ভিডিও যোগ করতে পারে।

 ২। একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে জ্ঞানার্জন

একাডেমিক পড়াশোনার বাইরেও গণিত, বিজ্ঞান, সাহিত্য, সঙ্গীত, ছবি আঁকা, প্রোগ্রামিং, গ্রাফিক ডিজাইন এর মত বিভিন্ন বিষয়ে শিশুদের আগ্রহ থাকে। অনলাইনে এসব বিষয়ে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে, কোর্স, ওয়ার্কশপে অংশ নিয়ে শিশুরা এসব বিষয়েও শিখতে পারে।

 ৩। অনলাইনে ক্লাস করা

যেকোনো দীর্ঘমেয়াদী আপদকালীন সময়ে শিশুদের স্কুল বন্ধ থাকলেও পড়াশোনার যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য অনলাইন ক্লাস করতে পারে।

 ৪। অনলাইনে পরীক্ষা দেয়া

অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি প্র্যাকটিক

ল পরীক্ষা বাদে অনলাইন মাধ্যম ব্যবহার করে স্কুলের সব পরীক্ষাই দেয়া সম্ভব।

 ৫) ভার্চুয়াল জগত ঘুরে দেখা

ভার্চুয়াল জগতে তারা বিভিন্ন খেলার সাথে পরিচিত হয় অন্য খেলোয়াড়দের সাথে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে, এর মাধ্যমে তারা উপার্জন করতে পারে। Virtual Worlds Management কোম্পানির মতে এসব ভার্চুয়াল খেলা বাচ্চাদের কাছে এত জনপ্রিয় যে তারা এইরকম ২০০ টি সাইট নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটিতে শিক্ষামূলক বিষয় রয়েছে যা তাদের খেলোয়াড় বানানোর পাশাপাশি সামাজিক ও নাগরিক দায়িত্ব নিতে শিখাবে। তারপরও নিরাপত্তার দিকে অভিভাবকদের দৃষ্টি রাখতে হবে।

 ৬) বিনোদনের মাধ্যম

শিশুরা অনলাইনের মাধ্যমে বিভিন্ন বিনোদনমূলক ভিডিও দেখতে পারে, ভিডিও গেম খেলতে পারে। ভিডিও করে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে শেয়ার করতে পারে । তবে শিশুরা যাতে ক্ষতিকর দিকগুলো এড়িয়ে চলতে পারে সে ব্যাপারে অভিভাবক শিশুদের সতর্ক করে দিবেন।

 ইন্টারনেটে শিশুরা যা যা করতে পারবে না

শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দেওয়ার ভাল দিকের পাশাপাশি কিছু খারাপ দিকও আছে তাই অভিভাবকদের উচিত বাচ্চাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করার ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা। এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় থেকে নিরাপদে রাখা।

 ১) অপরিচিত কারো সাথে যোগাযোগ রাখা

বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিশুরা অপরিচিত লোকদের সাথে যোগাযোগ করতে পারে। এই যোগাযোগের ব্যাপারে শিশুদের সতর্ক করে দিতে হবে বা  এ ধরনের যোগাযোগ যথাসম্ভব বন্ধ রাখতে হবে। কারণ এ ধরনের যোগাযোগে শিশু বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিতে পরতে পারে। শিশুর অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে এসব লোক তাদের ক্ষতি করতে পারে বা গ্রুমিং করতে পারে।

 ২) ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা

শিশুরা যাতে অনলাইনে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার না করে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখুন। ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা সব বয়সী মানুষের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে শিশুরা অনেক ব্যাপারে অনভিজ্ঞ থাকায় তাদের জন্য এই ঝুঁকির পরিমাণ আরও বেশি। 

৪)  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট তৈরি

শিশুরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন: Facebook, Twitter, Instagram এ অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে চাইতে পারে। তবে এসব জায়গায় অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য বয়সের বাধা আছে। ১৩ বছরের নিচের কেউ এখানে অ্যাকাউন্ট করতে পারে না। আবার বয়স ১৩ বছর হয়ে গেলেও শিশুর মানসিক বিকাশের প্রতি লক্ষ্য রেখে তখনই তাকে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে দেয়া উচিত না। 

 ৫। শিশুর অনুপযোগী অ্যাপে ডাউনলোড, সাইটে প্রবেশ

কিছু অ্যাপ ও সাইট আছে যেগুলো আমাদের সাইবার নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর। আবার কিছু অ্যাপ এবং সাইটের কন্টেন্টের ক্ষেত্রে বয়সের সীমা নির্ধারণ করে দেয়া থাকে। কিছু কন্টেন্ট এবং সাইট শুধুই প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। এসব জায়গা থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হবে।