গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য ডিজিটাল লিটারেসি ও সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের অধীন ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার ও ডিজিটাল সিকিউরিটি এজেন্সির উদ্যোগে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়।
আরও জানুনতথ্যপ্রযুক্তির বিস্ময়কর বিকাশের এই যুগে প্রযুক্তির আশীর্বাদের পাশাপাশি আছে বড় ধরনের ঝুঁকিও। ভার্চুয়াল জগতের সেই ঝুঁকির অন্যতম শিকার আমাদের শিশুরা। ২০২১ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ৩০ শতাংশ শিশু অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হয় এবং শতকরা ৮ ভাগ শিশু শিকার হয় যৌন হয়রানির।
আরও জানুনশিশু ও তাদের অভিভাবকদের জন্য নিরাপদ ইন্টারনেট ও প্রাকশৈশব বিকাশের লক্ষ্যে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে শিশুদের প্রিয় অনুষ্ঠান সিসিমপুর-এর নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিসেমি ওয়ার্কশপ বাংলাদেশ।
আরও জানুনদেশব্যাপী কানেক্টিভিটি ও ডিজিটাল ডিভাইসের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করেছে সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচী। কিন্তু অসচেতনার কারণে সব মানুষ সমানভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে পারছে না। ২০১৯ সালে ব্রাক ইন্সটিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি) থেকে পরিচালিত রুরাল বাংলাদেশের ডিজিটাল লিটারেসি সার্ভের তথ্য অনুযায়ি, দেশের জেলা শহরগুলোতে ৪১% মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারে, ভিডিও কল করতে পারে ১৫% মানুষ, ইমেইল করতে পারে মাত্র ১০%। অনলাইন শপিং বা অনলাইন আর্নিংয়ে ৫% এরও কম মানুষ দক্ষতা দেখাতে পেরেছে। এছাড়া সাইবার জগতের নিরাপত্তার বিষয়েও তারা অসচেতন। তাই ডিজিটাল ডিভাইস ও কানেক্টিভিটি ব্যবহারের জন্য সঠিক ভাবে তথ্য অনুসন্ধান করতে পারা, অনলাইন নিরাপত্তার দিকগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: নাগরিকদের দায়-দায়িত্ব, ডিজিটাল জীবনাচারণ, ডিজিটাল মাধ্যমে মানুষের কাঙ্খিত আচরণ, জন সম্পৃক্ততা, অনলাইন লেনদেন-এই সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে এবার দেশব্যাপী মানুষকে সচেতন ও শিক্ষিত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের (আইসিটি) উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে ‘বাংলাদেশ সরকারের জন্য নিরাপদ ই-মেইল ও ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প। এর আওতায় চুড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে জাতীয় কারিকুলাম প্রস্তুতের কাজ। দেশের শীর্ষ ডোমেন এক্সপার্টরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লিটারেচার রিভিউ ও ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনের মাধ্যমে একটি খসড়া কারিকুলাম প্রস্তুত করেছেন। এই কারিকুলাম চুড়ান্ত করতে অংশীজনদের মতামত জানতে গতকাল সোমবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম, সভাপতিত্ব করেন বিসিসির নির্বাহী পরিচালক ড. মো: আব্দুল মান্নান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সাইফুল আলম খান। অনুষ্ঠানে প্রকল্পের ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/JoinDLC) উদ্বোধন করেন এন এম জিয়াউল আলম। অনুষ্ঠানে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন স্টেক হোল্ডাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সিসিমপুর, ঢাকা টিটিসি, এটুআই, সেভ দি চিলড্রেন, মালালা ফাউন্ডেশন, এনসিটিবি, ঢাকা রেসিডেন্টশিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ক্যাম্পে, ডিনেট, অগ্নি ফাউন্ডেশন, ইউনেস্কো, রেডিকুলাস, স্কলাসটিকা, ব্র্যাক, ওয়ালটন, বাংলালিংক, রবি, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, প্রাথমিক ও গণ শিক্ষা মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, বাংলাাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, কারগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিনিধি ও আইসিটি বিভাগের অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে প্রকৌশলী সাইফুল আলম খান বলেন, ‘মাননীয় পপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০০৮ সালের ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার মধ্য দিয়ে গত এক যুগের বেশি সময়ে দেশব্যাপী ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলা এবং ডিজিটাল ডিভাইসে জনগণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের সকল মানুষ প্রযুক্তির এই সুবিধাকে সমানভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। গ্রামাঞ্চল ও শহর অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক পার্থক্য। এর ফলে অনলাইনে মিথ্য সংবাদ বা ভুল তথ্য কে চিহ্নিত করতে না পারা, প্রলোভন ও প্রতারণার শিকার হওয়া, সাইবার শিকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হওয়া, সাইবার বুলিং, নারীদের হয়রানি, অনলাইন এটিকেট সম্পর্কে না জানার মতো সামাজিক, রাজনৈতিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে এই সকল বিষয়ে দেশের সাধারণ জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যেই আমরা এই প্রকল্প গ্রহণ করেছি।’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে এন এম জিয়াউল আলম বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এই ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল সাধারন মানুষের মধ্যে পৌছে দিতে আমরা ডিজিটাল লিটারেসির ওপর দিচ্ছি। এজন্য একটি সেন্টার স্থাপনসহ নানামূখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আপনাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে কারিকুলামটি চূড়ান্ত করা হবে। যার ওপর ভিত্তি করে আমরা বিভিন্ন বয়সের জনসাধারণের জন্য বিভিন্ন ধরনের কনটেন্ট তৈরি করা হবে। দেশব্যাপী নানা ধরনের ক্যাম্পেইন ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। তাই আগামী বাংলাদেশের অনলাইন মাধ্যমটিকে আমরা কিভাবে দেখতে চাই, তার জন্য আপনাদের মূল্যবান মতামত ও আজকের দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা যারা একটি কর্মব্যস্ত দিনেও আমাদের এ কার্যক্রম সফল করার লক্ষ্যে উপস্থিত হয়েছেন, আপনাদেরকে আইসিটি ডিভিশনের কাছ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।’ সভাপতির বক্তব্যে ড. মো: আব্দুল মান্নান বলেন, আজকের বাংলাদেশে যে কোন শিক্ষাস্তরের, যে কোন অর্থনৈতিক অবস্থার মানুষ স্বল্পমূল্যে একটি স্মার্ট ডিভাইস ক্রয় করে ডিজিটাল দুনিয়ার বাসিন্দা হয়ে যেতে পারেন। এই জগত তার কাছে সম্পূর্ণ নতুন হওয়ায়, এই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার সে কিভাবে করতে পারবে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে তার কি করা উচিত, কি উচত নয়, কি কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সতর্কতার পর্যায়গুলোই বা কি-এই সকল বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। এই সকল বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে যেন সে তার জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাতে পারে, তার প্রতি লক্ষ্য রেখেই আমরা ‘বাংলাদেশ সরকারের জন্য নিরাপদ ই-মেইল ও ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। তিনি বলেন, ৩য়-৫ম শ্রেনী, ৬ষ্ঠ-দ্বাদশ শ্রেনী, ২০-৩৫ বছর বয়সের তরুণ-তরুণী, ০-১০ বয়সী শিশুর বাবা-মা, অভিভাবক ও সকল সাধারণ জনগণ এই পাঁচটি টার্গেট অডিয়েন্সের মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের শহর ও গ্রামীণ পর্যায়ে সকল মানুষের কাছে এই জ্ঞান পৌঁছে দিতে চাই। আমাদের এক্সপার্ট টিম উল্লেখিত গ্রুপগুলোর জন্য একটি খসড়া কারিকুলাম প্রস্তুত করেছে। আজকে আপনারা যারা এই কর্মশালায় উপস্থিত হয়েছেন, আপনাদের মতামতের ভিত্তিতে কারিকুলামটি চূড়ান্ত করা হবে। আপনারাই ঠিক করবেন, বাংলাদেশের মানুষের কি জানা প্রয়োজন। আমরা সেটাকেই সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেব। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানের আমাদের কার্যক্রম অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও দেশের ৬৪০টি স্কুল কলেজে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চলমান থাকলেও সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে ‘ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টারে’র একটি স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করার। এই কাজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
আরও জানুন