বিশ্বায়নের এই যুগে ডিজিটাল পরিষেবা তথা ইন্টারনেটভিত্তিক সেবাসমূহে অভ্যস্ততা বেড়ে চলেছে প্রতিনিয়ত। ডিজিটাল সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সেবা সহজীকরণের কারণে কেনাকাটা, গবেষণা, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা, ভর্তি, অ্যাপয়েন্টমেন্ট, অন্যদের সাথে যোগাযোগ করা ইত্যাদি নানা উদ্দেশ্যে আমাদের দৈনন্দিন জীবন অনেকটাই ইন্টারনেট নির্ভর হয়ে গিয়েছে। ইন্টারনেটের এই বহুমুখী ব্যবহার জীবনকে সহজতর করেছে ঠিকই, তবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সাথে এর সামঞ্জস্যতা ঠিক না রাখতে পারলে বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়।ডিজিটাল পরিমন্ডলে যে কেউ কয়েকটি সম্ভাব্য বিপদের সম্মুখীন হতে পারে। যেমন-১. সাইবার বুলিং (ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে হেনস্তা করা)২. গোপনীয়তা নষ্ট হওয়া।৩. পরিচয় নকলকারীর মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হওয়া।.৪. অপরিণত বয়সীদের কাছে আপত্তিকর ছবি, ভিডিও চলে যাওয়া।৫. অপরিচিতদের কাছে ব্যক্তিগত তথ্য চলে যাওয়া। যা তাদের মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষের নিকট চলে যায়।৬. নেটওয়ার্ক বা ডিভাইসে বিনা অনুমতিতে প্রবেশ করে তথ্য, ফাইল চুরি, পরিবর্তন বা এর ক্ষতি সাধন (হ্যাকিং)।৭. ফিশিং বা নানা প্রলোভন ও প্রতারণার মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ব্যবহারকারী নাম ও পাসওয়ার্ড, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য - ইত্যাদি সংগ্রহ করা। ৮. ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রবেশ করে ডিভাইসের স্বাভাবিক কাজ বাঁধাগ্রস্ত হওয়া, গোপনে তথ্য সংগ্রহ করা বা নেটওয়ার্কে অবৈধ অনুপ্রবেশ করা, ইত্যাদি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে।সাইবার বুলিং বা অনলাইন হয়রানির শিকার তরুণ-তরুণীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। বিশেষ করে, বিষন্নতা, উদ্বেগ এবং বিচলতার মতো উপসর্গ প্রবল আকার ধারণা করতে পারে। এমন কি, অনলাইন হয়রানির শিকার কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতাও অনেক বেশি।সুতরাং, ব্যক্তিগত বা পেশাগত যেই কারণেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকো না কেন, তোমাকে অবশ্যই ডিজিটাল পরিমণ্ডলের ঝুঁকিগুলি সম্পর্কে শুরুতেই সচেতন হতে হবে।
আরও জানুনআমরা ইতোমধ্যে জেনেছি যে ডিজিটাল পরিমণ্ডলে নানা ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। এসব ঝুঁকি এবং এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষার জন্য সচেতন হওয়া এবং এর থেকে রক্ষা পাবার উপায়সমূহ জানা ও অনুসরণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নিচের পদ্ধতি গুলি অনুসরণ করা যেতে পারে-১. ইন্টারনেটের ক্ষতিগুলো সম্পর্কে অবগত হতে হবে। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে অবগত না হওয়ার ফলে তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন বিপদে পড়ে থাকে। এক্ষেত্রে, সন্দেহজনক কার্যকলাপ পরিলক্ষিত হলে অভিজ্ঞদের কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। ২. নিজের ব্যক্তিগত তথ্যসমূহের প্রতি যত্নবান হওয়া। অভিজ্ঞতাহীনতার কারণে অনেক সময় আমরা ব্যক্তিগত তথ্য উন্মুক্ত করে ফেলি যা মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। সুতরাং, ইন্টারনেট ব্যবহার করার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তথ্যাবলী শেয়ারের সময় সতর্ক হওয়া আবশ্যক।৩। আগন্তুক বা অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে অনলাইনে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।৪। ফিশিং থেকে বাঁচতে ইমেইল কিংবা মেসেজে প্রাপ্ত লিঙ্কসমূহে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সঠিক ঠিকানাটি জানা থাকলে সেই ঠিকানাটি ব্রাউজারে লিখে প্রবেশ করার চেষ্টা করতে হবে।৫। একটি শক্তিশালী ও অনন্য (Unique) পাসওয়ার্ড এর সাহায্যে একাউন্টকে নিরাপদ রাখতে হবে। ভালো হয় দ্বি-মাত্রিক যাচাইকরণ (Two factor authentication) ব্যবস্থা সক্রিয় রাখলে। এর ফলে অন্য কারও পক্ষে সহসাই নেটওয়ার্কে প্রবেশ করা সম্ভব হবে না। ৬। ইন্টারনেট ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে চাইলে কেবলমাত্র নিরাপদ এবং স্বীকৃত মাধ্যমগুলি থেকে কেনাকাটা করতে হবে।৭। ব্যক্তিগত একাউন্টগুলির জন্য ‘প্রাইভেসি সেটিংস তথা নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রক্রিয়াসমূহ’ চালু রাখতে হবে।৮। ‘পুনরুদ্ধার (রিকভারি) ইমেইল/মোবাইল নম্বর’ সংযুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিকল্প ইমেইল এবং নিজের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা যেতে পারে।৯। ম্যালওয়ার/র্যনসমওয়ার ইত্যাদির ক্ষতি থেকে বাঁচতে নিয়মিত তথ্য সংরক্ষণ (ডাটা ব্যাক-আপ) করতে হবে। এছাড়া ডিভাইসের সুরক্ষায় আপডেটেড এন্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।১০। কোনো তথ্য, ফাইল কিংবা নতুন আপডেট ডাউনলোডের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। এক্ষেত্রে উৎসের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করা জরুরি। ১১। একটি হালনাগাদকৃত (আপডেট করা হয়েছে এমন) এন্টি-ভাইরাস ব্যবহার করার মাধ্যমে ডিভাইসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আরও জানুনরকিবুল একজন তরুণ উদ্যোক্তা। আর্থিক লেনদেনের কাজে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি সে মোবাইল ব্যাঙ্কিং সেবা ও গ্রহণ করে থাকে। গতকাল সন্ধ্যায় একজন ক্রেতা তার বিকাশ নম্বরে বেশ কিছু টাকা পাঠায়। আজ সকালে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ‘বিকাশ কর্তৃপক্ষের’ একটি মেসেজ আসে রকিবুলের কাছে। মেসেজটিতে জানানো হয় যে তার অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ বেহাত হয়ে গিয়েছে। মেসেজটিতে অ্যাকাউন্ট ঠিক করতে একটি লিঙ্ক ও দেওয়া হয় এবং রকিবুলকে সেই লিঙ্কে প্রবেশ করে বিকাশ পিন নম্বর ব্যবহার করে অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। রকিবুল মেসেজটির উৎস পর্যবেক্ষণ না করেই আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে লিঙ্কটিতে প্রবেশ করে পিন নম্বর দেয়। ফলে তার বিকাশ অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণ বেহাত হয়ে যায় এবং বিকাশে থাকা টাকাগুলি দুষ্টুচক্র আত্মসাৎ করে। রকিবুলের মতো আরো অনেক তরুণ-তরুণীই এভাবে সামান্য অসাবধানতা বশতঃ হ্যাকিং এর শিকার হচ্ছে এবং ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়া, আর্থিক ক্ষয় ক্ষতি, তথ্য চুরি কিংবা পরিচয় নকল হওয়ার মতো ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছে।তুমি কি জানো হ্যাকিং কী?হ্যাকিং হল কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের ভিতরে থাকা নেটওয়ার্ককে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার একটি প্রচেষ্টা। সহজ কথায় বলতে গেলে, অসৎ উদ্দেশ্যে কম্পিউটারের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে অবৈধভাবে নিয়ন্ত্রণ করাকে হ্যাকিং বলা হয়ে থাকে।অসৎ ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে এবং বিভিন্ন কারণে হ্যাকিং করে থাকে। যারা হ্যাকিং করে তাদেরকে হ্যাকার বলা হয়। একসময়ে হ্যাকিং অসৎ ব্যক্তির খামখেয়ালি হিসেবে পরিচিতি পেলেও এখন তা বিলিয়ন ডলারের অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে পরিণত হয়েছে।অ্যাকাউন্টগুলি যেভাবে হ্যাকিং হয়ে থাকে:প্রযুক্তির অপব্যবহারের অন্যতম উদাহরণ হলো হ্যাকিং। হ্যাকাররা বিভিন্ন কৌশলের সাহায্যে এই অপকর্মটি করে থাকে। যেমন- ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে বিভিন্ন প্ররোচনা প্রদানের মাধ্যমে ক্ষতিকর লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট ব্যবহার করিয়ে। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টকে মনোবিজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যাচাই করা হয় এবং ব্যবহারকারীর জন্য লোভনীয় বা আগ্রহ সঞ্চারক লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট প্রদান করে তাকে এসব লিঙ্ক বা অ্যাটাচমেন্ট ব্যবহারে আগ্রহী করে তোলা হয়। এছাড়াও, ম্যালওয়্যার এর সাহায্যে ব্যাপক হারে হ্যাকিং হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে সরাসরি প্রযুক্তির অপপ্রয়োগের মাধ্যমে হ্যাকাররা ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর অজান্তেই অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে থাকে।প্রযুক্তির অপপ্রয়োগ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের মনোবিজ্ঞানিক যাচাই পদ্ধতি ছাড়াও আরো কিছু উপায় অবলম্বন করে হ্যাকাররা তোমার অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং করতে পারে। যেমন- বটনেট ব্যবহার করে, ব্রাউজার হাইজ্যাকিং করে, র্যানসমওয়্যার ব্যবহার করে, ভাইরাস প্রয়োগ করে, ইত্যাদি। হ্যাকিং এর উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে এই অসৎ কাজটিকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করা হয়েছে। যেমন-ক) আর্থিক লাভের উদ্দেশ্যে - হ্যাকাররা ক্রেডিট কার্ড নম্বর চুরি করা, একাউন্ট সম্পর্কিত স্পর্শকাতর তথ্য সংগ্রহ বা সম্পূর্ণ ব্যাঙ্কিং সিস্টেম হ্যাকের মাধ্যমে প্রতারণা করে থাকে।খ) কর্পোরেট বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে গুপ্তচরবৃত্তি করার উদ্দেশ্যে – অনেক সময়ে কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের হ্যাকাররা সুবিধা অর্জনের জন্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের পণ্য এবং পরিষেবাগুলির তথ্য চুরি করে থাকে।গ) জাতীয় নথিপত্র চুরির উদ্দেশ্যে – আন্তর্জাতিক মহলে প্রভাব ও প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্য অনেক সময়ে শক্তিশালী দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি প্রতিযোগী দেশের জাতীয়, স্পর্শকাতর এবং গুরূত্ববহ তথ্য চুরি করে থাকে। হ্যাকিং থেকে বাঁচতে যে সকল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি –- মালওয়্যার ও র্যানসমওয়্যার এর হাত থেকে বাঁচতে ‘এন্টি মালওয়্যার নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ ও ‘এন্টি-র্যানসমওয়্যার নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গুগলের ‘প্লে স্টোর’ থেকে এই জাতীয় বিভিন্ন সফটওয়্যার ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ইসেট, ক্যাস্পারস্কি, অ্যাভাস্ট ইত্যাদির ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়।- অ্যাপ্স সমূহ ডাউনলোড ও ব্যবহারের পূর্বে এর উৎসের যোগ্যতা ও যথার্থতা যাচাই করতে হবে। ‘প্লে স্টোরে’ বিভিন্ন অ্যাপের রিভিউ দেওয়া থাকে। তাছাড়া, ব্যবহারকারীরা নিজেদের বিভিন্ন অভিজ্ঞতাও মতামত সেকশনে লিখে থাকেন। অ্যাপ্স ডাউনলোড ও ব্যবহারের পূর্বে এই সকল রিভিউ এবং মতামত যাচাই করে নিতে হবে।- নিয়মিত সফটওয়্যার গুলি হালনাগাদ (আপডেট) করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত উৎস থেকে হালনাগাদ ফাইল নামাতে হবে। গুগল প্লে স্টোর, আই টিউন্স, সফটোনিক, সফটপিডিয়া ইত্যাদি সাইটগুলি থেকে নির্ভরযোগ্য আপডেটসমূহ ডাউনলোড করা যায়।- ইন্টারনেট ব্যবহারকালীন সময়ে অপরিচিত এবং অপ্রয়োজনীয় ওয়েবসাইট ও লিঙ্কে প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে হবে। - নিয়মিত পাসওয়ার্ড হালনাগাদ করতে হবে এবং একটি শক্ত পাসওয়ার্ড নির্বাচন ও ব্যবহার করতে হবে। শক্ত বলতে অনুমান করা কঠিন এমন পাসওয়ার্ড। যেমন- অনেকে পাসওয়ার্ড হিসেবে মোবাইল নাম্বার কিংবা জন্মতারিখ ব্যবহার করে, যেটা অনুমান করা সহজ। তা না করে যদি সংখ্যা, চিহ্ন, ছোট হাতের-বড় হাতের বর্ণ মিলিয়ে একটা ১২-১৩ ডিজিটের পাসওয়ার্ড বানানো যায়, তাহলে সেটা যে কারো পক্ষে অনুমান করা কঠিন হবে।
আরও জানুনতুমি কি এই প্রবন্ধটি পড়তে কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের সহায়তা নিয়েছো?ধরা যাক, তুমি একটি মোবাইল ফোনের সাহায্যে এই মুহুর্তে প্রবন্ধটি পড়ছো। তুমি কি জানো যে তোমার হাতের মুঠোর মধ্যে থাকা মোবাইল ফোনটি তৈরি করতে এবং ব্যবহার উপযোগী করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে? মোবাইল ফোনটি ব্যবহারযোগ্য করতে এতে ব্যবহার করা হয়েছে কোবাল্ট, সোনা কিংবা লিথিয়ামের মতো দুষ্প্রাপ্য ধাতু। এসব ধাতু খনি থেকে উত্তোলণ, নিষ্কাষন এবং পরিশোধন, পরিবহন ইত্যাদি কাজের জন্য পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। প্রযুক্তিগত এসকল উপকরণ মানুষের জীবনযাত্রাকে একদিকে যেমন সহজ করে তোলে তেমনি অন্যদিকে আমাদের অসচেতনতা কিংবা অবিবেচনা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণতঃ ডিজিটাল ডিভাইসের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাবের কথা আলোচনা করার সময়ে আমরা মানসিক, শারীরিক অথবা সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির কথা বলে থাকি। তবে ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষতিকর প্রভাব পরিবেশের উপরেও নিদারুণ ভাবে পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ১। ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য ধাতুর। এসব ধাতুর পরিশোধন ও নিষ্কাশন প্রক্রিয়া অত্যন্ত দূষণ-প্রবণ। ২। ১৬ টির বেশি ধাতু বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনে ব্যবহার হয়ে থাকে। মাইক্রোফোন ও স্পিকার প্রস্তুতিতে লোহা, ডিভাইসগুলির কাঠামোপ্রস্তুত করতে অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আর ইলেক্ট্রনিক সার্কিট প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয় সোনা, তামা, ইত্যাদির মতো ধাতুর। এছাড়াও লেড বা লিথিয়ামের ব্যবহার ব্যাটারি প্রস্তুতিতে জনপ্রিয়। এসকল ধাতুর বেশিরভাগেরই উত্তোলণের সময়ে বিষাক্ত উপজাত (বাই-প্রোডাক্ট) তৈরি হয়। (৩২০ টন ধাতু বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস প্রস্তুতিতে প্রতি বছর ব্যবহার হয়)*৩। উল্লেখিত ধাতুগুলি টেকসই হওয়ায় পরিবেশে দীর্ঘদিন টিকে থাকে এবং এদের নিষ্পত্তিকরণ (ডিসপোজাল) এবং পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়াও পরিবেশের জন্য বিষাক্ত বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ৪। ডিজিটাল ডিভাইস সমূহের ৮০ শতাংশ কার্বন ফুটপ্রিন্ট, এর প্রস্তুতিকালীন সময়ে পরিলক্ষিত হয়।**(কার্বন ফুটপ্রিন্ট হলো কোনো নির্দিষ্ট কাজের কারণে উৎপন্ন হওয়া মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের (কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ইত্যাদি) পরিমাণ) ৫। নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও ডিজাইনের উদ্ভাবনের কারণে মানুষ নিয়মিত ডিভাইস পরিবর্তন করে থাকে। এর ফলে বিপুল পরিমানে অপচনশীল বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে। ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার আমাদের জীবনকে আধুনিক ও সহজতর করেছে ঠিকই তবে এর উৎপাদন বহুলাংশেই পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে । তাই, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে টেকসই ও সহনশীল প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে কি মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে দিব? ঠিক তা নয়, আসলে আমরা সচেতনভাবে মোবাইল ব্যবহার করব এবং পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণ যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। এটা কি আদৌ সম্ভব? সম্ভব, আমাদের কিছু কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন পৃথিবীর জন্য বিরাট পরিবর্তন সাধন করে। যেমনঃ ১। ঘন ঘন মোবাইল বদল করাকে স্মার্টনেস হিসেবে দেখার কিছু নেই। এর ফলে পরিবেশের উপর কী ধরণের বিরূপ প্রভাব পড়ছে এখন আমরা জানি। তাই যত্নের সাথে নিজের মোবাইলটি দীর্ঘ দিন ব্যবহারের মানসিকতা ধারণ করব এবং অন্যকে উৎসাহিত করব। ২। নষ্ট মোবাইল যেখানে সেখানে ফেলবো না। নিকটস্থ মোবাইল সারাইয়ের দোকানে দিতে পারি, যেখানে এর অনেক যন্ত্রাংশ পুনরায় ব্যবহৃত হতে পারে।
আরও জানুনকখনো কি এমন ঘটনার সম্মুখীন হয়েছো, যখন কেউ তোমার পরিচিত সেজে ফোনকল, ইমেইল ইত্যাদিতে যোগাযোগ করে তোমার কাছে আর্থিক সাহায্য কিংবা ব্যক্তিগত তথ্য জানতে চেয়েছে? তোমার উত্তর যদি হ্যা হয়ে থাকে তাহলে তুমি ‘ফিশিং’ এর শিকার হয়েছো।ইন্টারনেটে যে সকল জালিয়াতি অহরহ হয়ে থাকে, ফিশিং তার মধ্যে অন্যতম। ফিশিং হল একটি সাইবার অপরাধ যেখানে একটি অবৈধ (ক্ষতিকর, জালিয়াত) চক্র, প্রতিষ্ঠান কিংবা মানুষ ইমেইল, টেলিফোন বা বার্তার মাধ্যমে তোমার পরিচিত হিসেবে নিজেকে জাহির করে এবং তোমার ব্যক্তিগত তথ্য, ব্যাঙ্কিং এবং ক্রেডিট কার্ডের বিশদ বিবরণ এবং পাসওয়ার্ডের মতো সংবেদনশীল তথ্য প্রদানের জন্য তোমাকে প্রলুব্ধ করে। হরহামেশা যে ঘটনা আমরা দেখে থাকি তা হলো- খুব পরিচিত কিংবা ঘনিষ্ঠজন হঠাৎ করে মেসেঞ্জারে বিপদের কথা বলে কিছু টাকা বিকাশ করতে বলে কিংবা মোবাইলে ফ্লেক্সি করতে বলে। আবার অনেকে ফোনকল করে বিকাশের কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিয়ে গোপন তথ্যের পাশাপশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এগুলো ফিশিং এর খুবই কমন পদ্ধতি।জালিয়াত চক্র পরবর্তীতে এইসকল তথ্য তোমার গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টসমূহে প্রবেশ করতে ব্যবহার করবে এবং এর ফলে তুমি একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য বা কনটেন্ট চুরির পাশাপাশি আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে পারো। ফিশিং চেনার উপায়ঃ ফিশিং থেকে বাঁচতে হলে ফিশিং চক্র কিভাবে এই জালিয়াতি করে থাকে তা বুঝতে পারা জরুরি। বিভিন্ন উপায়েই ফিশিং করা হয়ে থাকে। যেমনঃ১। অবিশ্বাস্য ও লোভনীয় অফার - লোভনীয় অফার এবং মনোযোগ আকর্ষণকারী বিবৃতি খুবই দ্রুত মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ, কোনো একটি ফোনকল, বার্তা বা ইমেইলের মাধ্যমে জানানো হলো যে তুমি একটি আইফোন, লটারি বা অন্য কোনো অসাধারন পুরস্কার জিতেছো। এ ধরণের চমকপ্রদ শিরোনাম অনেক সময়ে তোমাকে ক্ষতিকর লিঙ্কে প্রবেশ করতে প্ররোচিত করতে পারে। মনে রাখবে, কোনো অবস্থায়ই সন্দেহজনক ইমেইলে ক্লিক করা যাবে না। কিংবা জীনের বাদশা সেজে অঢেল ধনসম্পদের মালিক বানিয়ে দেবার আশ্বাস দিয়ে হাদিয়া হিসেবে কিছু টাকা পাঠানোর কথা বলে ধীরে ধীরে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় অসাধু চক্র। ২। জরুরী মুহূর্তের অবতারণা - সাইবার অপরাধীদের মধ্যে একটি প্রিয় কৌশল হল তোমাকে জরুরি মুহূর্তের আবহ প্রদান করে পরিস্থিতির নির্বিচারে কাজ করতে বাধ্য করা। যেমনঃ খুবই আকর্ষনীয় ও সীমিত সময়ের জন্য কোনো অফার এর বিজ্ঞাপন দেওয়া। এর মাধ্যমে ধারণা দেওয়া হবে যে, প্রতিক্রিয়া জানাতে তোমার হাতে মাত্র কয়েক মিনিট আছে। এই ধরণের ইমেইলগুলি উপেক্ষা করাই ভাল৷৩। আতঙ্কগ্রস্থ করে ফেলা- মাঝেমাঝে তারা তোমাকে জানাতে পারে যে, অবিলম্বে তোমার ব্যক্তিগত বিবরণ হালনাগাত না করলে অ্যাকাউন্টটি স্থগিত করা হবে। এধরণের পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে বার্তা প্রেরকের যথাযোগ্যতা যাচাই করা অধিক শ্রেয়। মনে রাখতে হবে, বেশিরভাগ নির্ভরযোগ্য সংস্থাগুলি একটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার আগে যথেষ্ট সময় দেয় এবং তারা কখনই পৃষ্ঠপোষকদের ইন্টারনেটে ব্যক্তিগত বিবরণ আপডেট করতে বলে না। সন্দেহ হলে, একটি ইমেলের লিঙ্কে ক্লিক করার পরিবর্তে সরাসরি উৎস যাচাই করাই বুদ্ধিমানের কাজ।৪। হাইপারলিঙ্ক – ইমেইলে অনেক সময়ে একটি সাধারণ হাইপারলিঙ্ক সংযোগ করার মাধ্যমেও ফিশিং করা হয়ে থাকে। লিঙ্কটি দেখে স্বাভাবিক মনে হলেও আসলে এটি ফিশিং এর মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে। এক্ষেত্রে, প্রকৃত URL না দেখিয়ে অথবা একটি ভুল বানান সহ একটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইট এর লিঙ্ক পাঠিয়ে ফিশিং করা হয়ে থাকে। (উদাহরণস্বরূপ www.bankofarnerica.com – এখানে 'm' একটি 'r' এবং একটি 'n', দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়েছে।)৫। সংযুক্ত ফাইলসমূহের মাধ্যমে – তুমি কখনোই একটি অপরিচিত অথবা অযাচিত উৎসের ইমেইল খুলবে না। এছাড়াও যদি ইমেইলের সংযুক্তি অংশে কোনো অযাচিত বা অপ্রয়োজনীয় ফাইল দেখতে পাও যা তুমি প্রত্যাশা করোনি, তাহলে এটি খুলবে না! এগুলির সাহায্যে প্রায়শই র্যানসমওয়্যার বা ভাইরাসের মতো ক্ষতিকর বস্তু কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে।
আরও জানুনকখনো নদীর পাড় ধরে অথবা সমুদ্র সৈকতে হেঁটেছো?নদীর পাড় বা সৈকতে হাঁটার সময় তুমি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে নরম বালুময় সৈকত অথবা নদীর পাড়ের নরম কাদা জুড়ে তোমার পায়ের ছাপ বা পদচিহ্ন পড়ে রয়েছে?ইন্টারনেটে তোমার নেওয়া প্রত্যেকটি পদক্ষেপ বা কাজও এভাবে ছাপ বা পদচিহ্ন তৈরি করতে পারে। এ ঘটনাকে বলা হয় ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট। ইন্টারনেটে বিভিন্ন কার্যকলাপ (যেমন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি এবং পোস্ট শেয়ার, বিভিন্ন অ্যাপ, ইমেইল, এবং ওয়েবসাইট ব্যবহার) এর কারণে তুমি নিজের সম্পর্কে যে সকল তথ্য রেখে যাও তাকেই ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বলে।তোমার ব্রাউজারে (সার্চ হিস্টোরি) অনুসন্ধান ইতিহাস, পাঠানো মেসেজ সমূহ (মুছে ফেলা বার্তাসহ), ফটো এবং ভিডিও (মুছে ফেলা সহ), বন্ধুবান্ধবের ট্যাগ করা ফটো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিয়্যাক্ট অথবা মন্তব্য করা, এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ব্রাউজিং ইতিহাস, ইত্যাদি ডিজিটাল পদচিহ্ন বা ফুটপ্রিন্টের অন্তর্গত।ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট দুই ধরণের হতে পারে। যেমন-প্রত্যক্ষ ফুটপ্রিন্ট- প্রত্যক্ষ ফুটপ্রিন্ট বলতে এমন সকল তথ্যকে বোঝানো হয় যা তোমার সক্রিয় কার্যকলাপের ফলে তৈরি হয়। যেমন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিয়্যাক্ট অথবা মন্তব্য করার ফলে তৈরি হওয়া ফুটপ্রিন্ট।পরোক্ষ ফুটপ্রিন্ট- পরোক্ষ ফুটপ্রিন্ট বলতে এমন সকল তথ্যকে বোঝানো হয় যা ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময়ে তোমার অজান্তেই থেকে যায়। উদাহরণ স্বরূপ, তোমার ব্রাউজারের ইতিহাস।ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট এর ব্যাপারে সচেতন থাকার গুরুত্ব অনেক। এতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকে, স্পর্শকাতর তথ্য হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ডিজিটাল পরিমণ্ডলে নিজের পদচিহ্ন বা ফুটপ্রিন্টের ব্যাপারে সচেতন থাকা সম্ভব। পদক্ষেপ গুলি বিশ্লেষণ করলে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের ব্যাপারে সচেতন থাকার গুরুত্ব বোঝা যায়। যেমন- ১। কেনাকাটার জন্য অথবা সামাজিক যোগাযোগের জন্য তৈরি করা অপ্রয়োজনীয় অ্যাকাউন্টগুলি ডিলিট অথবা নিষ্ক্রিয় করে দাও। এর ফলে তোমার কোনো অতীত কাজের অথবা ব্যক্তিগত মুহুর্তের তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।২। তথ্য সংগ্রহ অথবা জমা রাখে এমন সাইট গুলি থেকে নিজের প্রয়োজনীয়, ব্যক্তিগত এবং স্পর্শকাতর তথ্য গুলি মুছে ফেল। এধরণের সাইট একেবারেই ব্যবহার না করা সবচেয়ে ভালো। এর মাধ্যমে বিভিন্ন থার্ড পার্টি, হ্যাকার বা অনৈতিক বিজ্ঞাপন দাতা প্রতিষ্ঠান তোমার কাছে পৌঁছাতে পারবে না।৩। জরুরি প্রয়োজনে কোনো ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য প্রদান করে থাকলে, কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে এই সকল তথ্য ওয়েবসাইট থেকে মুছে ফেলতে হবে। এর ফলে জালিয়াতরা তোমার অর্থনৈতিক স্পর্শকাতর তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।৪। ফেসবুক ব্যবহার করে কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপে লগ ইন করবে না। বিভিন্ন কারনেই আমরা থার্ড পার্টি অ্যাপ থেকে সেবা গ্রহন করে থাকি। এসব অ্যাপে লগ-ইন করার জন্য ফেসবুকের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। কিন্তু, এটি একটি ক্ষতিকর অভ্যাস। এর ফলে তোমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগ-ইন তথ্য বেহাত হয়ে যেতে পারে।৫। সর্বোপরি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় তথ্য শেয়ার করার মাধ্যমে ফুটপ্রিন্ট নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। এর ফলে ব্যক্তিগত মুহূর্তের তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
আরও জানুনডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন (কম্পিউটার, মোবাইল, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ), এবং ডিজিটাল কার্যাদি (ইন্টারনেটে সম্পাদিত কাজ) এর ফলে তৈরি বর্জ্য এবং শক্তি খরচ হওয়ার ঘটনাকে ডিজিটাল দূষণ বলা হয়। ডিজিটাল দূষণের ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই, পরিবেশের উপর ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিরোধে সোচ্চার হওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন উপায়ে পরিবেশের উপরে ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতিকার করা সম্ভব। যেমন – ১। তোমার পরবর্তী ডিজিটাল ডিভাইসটি কেনার উদ্দেশ্য কী?ডিজিটাল দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ হল প্রযুক্তিগত বর্জ্যের অপরিকল্পিত অতিব্যবহার । নতুন ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন মনোভাব প্রযুক্তিগত বর্জ্য হ্রাসে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারে। মনে রাখতে হবে, তোমার যদি একটি পুরোপুরি কার্যকরী ল্যাপটপ বা মোবাইল ডিভাইস থাকে, তাহলে শুধুমাত্র চকচকে মডেলের নতুন একটি ডিভাইস কেনার ইচ্ছা কেবল অর্থের অপচয়ই না, বরং এরফলে তুমি অপচনশীল ও বিষাক্ত প্রযুক্তিগত বর্জ্য উৎপাদনে সরাসরি যুক্ত হলে । সুতরাং, তোমার পরবর্তী ডিজিটাল ডিভাইসটি কেনার পূর্বে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকবে।২। পুরানো যন্ত্রগুলি রিসাইকেল করো -অকেজো, নষ্ট হয়ে যাওয়া ডিজিটাল ডিভাইসগুলি যেখানে সেখানে বর্জ্য হিসেবে না ফেলে দিয়ে নিকটবর্তী কোনো একটি বর্জ্য পুনর্ব্যবহারকরণ প্রোগ্রামের সাহায্যে রিসাইকেল করো কিংবা কোন সারাইখানায় দিয়ে দাও।৩। পরিবেশবান্ধব সার্চ-ইঞ্জিন ব্যবহার করো –Ecosia নামের একটি সার্চ ইঞ্জিন বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতাদের থেকে উপার্জিত অর্থের অংশবিশেষ ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে পুনর্বনায়নের কাজ করে থাকে। Ecosia প্রায় ৯০০০ পুনর্বনায়নযোগ্য স্থানে ১২.৩ কোটির উপরে গাছ লাগিয়েছে। এধরণের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলির মহৎ উদ্দেশ্যকে সমর্থন করা যায়।৪। অপ্রয়োজনীয় ট্যাবগুলিকে বন্ধ করে দাও –অপ্রয়োজনীয় ট্যাব কম্পিউটার বা মোবাইলের শুধুমাত্র পরিচালন দক্ষতাই কমায় না, বরং ব্যাটারির ক্ষয়ক্ষতিও করে থাকে। মনে রাখবে, প্রতিবার তুমি একতি ওয়েবপেইজ খলার মানে হলো কিছু কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরন হওয়া। তাই, অপ্রয়োজনীয় ট্যাব বন্ধ রাখতে হবে।৫। স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে রাখা-হার্ভার্ড ল’ স্কুলের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা ১০০% থেকে কমিয়ে ৭০% আনা হলে তা চোখের জন্য সহনশীল পর্যায়ে থাকে। এবং এর মাধ্যমে প্রায় ২০% শক্তি সঞ্চয় করা সম্ভব। ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার আমাদের জীবনকে আধুনিক ও সহজতর করেছে ঠিকই তবে এর উৎপাদন বহুলাংশেই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। তাই, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে টেকসই ও সহনশীল প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
আরও জানুন