ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন (কম্পিউটার, মোবাইল, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রাংশ), এবং ডিজিটাল কার্যাদি (ইন্টারনেটে সম্পাদিত কাজ) এর ফলে তৈরি বর্জ্য এবং শক্তি খরচ হওয়ার ঘটনাকে ডিজিটাল দূষণ বলা হয়। ডিজিটাল দূষণের ফলে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই, পরিবেশের উপর ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিরোধে সোচ্চার হওয়া অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন উপায়ে পরিবেশের উপরে ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষতিকর প্রভাবের প্রতিকার করা সম্ভব। যেমন –
১। তোমার পরবর্তী ডিজিটাল ডিভাইসটি কেনার উদ্দেশ্য কী?
ডিজিটাল দূষণের সবচেয়ে বড় কারণ হল প্রযুক্তিগত বর্জ্যের অপরিকল্পিত অতিব্যবহার । নতুন ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে আমাদের সচেতন মনোভাব প্রযুক্তিগত বর্জ্য হ্রাসে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারে। মনে রাখতে হবে, তোমার যদি একটি পুরোপুরি কার্যকরী ল্যাপটপ বা মোবাইল ডিভাইস থাকে, তাহলে শুধুমাত্র চকচকে মডেলের নতুন একটি ডিভাইস কেনার ইচ্ছা কেবল অর্থের অপচয়ই না, বরং এরফলে তুমি অপচনশীল ও বিষাক্ত প্রযুক্তিগত বর্জ্য উৎপাদনে সরাসরি যুক্ত হলে । সুতরাং, তোমার পরবর্তী ডিজিটাল ডিভাইসটি কেনার পূর্বে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন থাকবে।
২। পুরানো যন্ত্রগুলি রিসাইকেল করো -
অকেজো, নষ্ট হয়ে যাওয়া ডিজিটাল ডিভাইসগুলি যেখানে সেখানে বর্জ্য হিসেবে না ফেলে দিয়ে নিকটবর্তী কোনো একটি বর্জ্য পুনর্ব্যবহারকরণ প্রোগ্রামের সাহায্যে রিসাইকেল করো কিংবা কোন সারাইখানায় দিয়ে দাও।
৩। পরিবেশবান্ধব সার্চ-ইঞ্জিন ব্যবহার করো –
Ecosia নামের একটি সার্চ ইঞ্জিন বিভিন্ন বিজ্ঞাপনদাতাদের থেকে উপার্জিত অর্থের অংশবিশেষ ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন অঞ্চলে পুনর্বনায়নের কাজ করে থাকে। Ecosia প্রায় ৯০০০ পুনর্বনায়নযোগ্য স্থানে ১২.৩ কোটির উপরে গাছ লাগিয়েছে। এধরণের সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলির মহৎ উদ্দেশ্যকে সমর্থন করা যায়।
৪। অপ্রয়োজনীয় ট্যাবগুলিকে বন্ধ করে দাও –
অপ্রয়োজনীয় ট্যাব কম্পিউটার বা মোবাইলের শুধুমাত্র পরিচালন দক্ষতাই কমায় না, বরং ব্যাটারির ক্ষয়ক্ষতিও করে থাকে। মনে রাখবে, প্রতিবার তুমি একতি ওয়েবপেইজ খলার মানে হলো কিছু কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরন হওয়া। তাই, অপ্রয়োজনীয় ট্যাব বন্ধ রাখতে হবে।
৫। স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা সহনীয় মাত্রায় কমিয়ে রাখা-
হার্ভার্ড ল’ স্কুলের একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মোবাইল বা কম্পিউটারের স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা ১০০% থেকে কমিয়ে ৭০% আনা হলে তা চোখের জন্য সহনশীল পর্যায়ে থাকে। এবং এর মাধ্যমে প্রায় ২০% শক্তি সঞ্চয় করা সম্ভব।
ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার আমাদের জীবনকে আধুনিক ও সহজতর করেছে ঠিকই তবে এর উৎপাদন বহুলাংশেই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। তাই, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে টেকসই ও সহনশীল প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।