কখনো নদীর পাড় ধরে অথবা সমুদ্র সৈকতে হেঁটেছো?
নদীর পাড় বা সৈকতে হাঁটার সময় তুমি নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছো যে নরম বালুময় সৈকত অথবা নদীর পাড়ের নরম কাদা জুড়ে তোমার পায়ের ছাপ বা পদচিহ্ন পড়ে রয়েছে?
ইন্টারনেটে তোমার নেওয়া প্রত্যেকটি পদক্ষেপ বা কাজও এভাবে ছাপ বা পদচিহ্ন তৈরি করতে পারে। এ ঘটনাকে বলা হয় ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট। ইন্টারনেটে বিভিন্ন কার্যকলাপ (যেমন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি এবং পোস্ট শেয়ার, বিভিন্ন অ্যাপ, ইমেইল, এবং ওয়েবসাইট ব্যবহার) এর কারণে তুমি নিজের সম্পর্কে যে সকল তথ্য রেখে যাও তাকেই ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট বলে।
তোমার ব্রাউজারে (সার্চ হিস্টোরি) অনুসন্ধান ইতিহাস, পাঠানো মেসেজ সমূহ (মুছে ফেলা বার্তাসহ), ফটো এবং ভিডিও (মুছে ফেলা সহ), বন্ধুবান্ধবের ট্যাগ করা ফটো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিয়্যাক্ট অথবা মন্তব্য করা, এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ব্রাউজিং ইতিহাস, ইত্যাদি ডিজিটাল পদচিহ্ন বা ফুটপ্রিন্টের অন্তর্গত।
ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট দুই ধরণের হতে পারে। যেমন-
প্রত্যক্ষ ফুটপ্রিন্ট- প্রত্যক্ষ ফুটপ্রিন্ট বলতে এমন সকল তথ্যকে বোঝানো হয় যা তোমার সক্রিয় কার্যকলাপের ফলে তৈরি হয়। যেমন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রিয়্যাক্ট অথবা মন্তব্য করার ফলে তৈরি হওয়া ফুটপ্রিন্ট।
পরোক্ষ ফুটপ্রিন্ট- পরোক্ষ ফুটপ্রিন্ট বলতে এমন সকল তথ্যকে বোঝানো হয় যা ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময়ে তোমার অজান্তেই থেকে যায়। উদাহরণ স্বরূপ, তোমার ব্রাউজারের ইতিহাস।
ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট এর ব্যাপারে সচেতন থাকার গুরুত্ব অনেক। এতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত মর্যাদা অক্ষুন্ন থাকে, স্পর্শকাতর তথ্য হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ডিজিটাল পরিমণ্ডলে নিজের পদচিহ্ন বা ফুটপ্রিন্টের ব্যাপারে সচেতন থাকা সম্ভব। পদক্ষেপ গুলি বিশ্লেষণ করলে ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের ব্যাপারে সচেতন থাকার গুরুত্ব বোঝা যায়। যেমন-
১। কেনাকাটার জন্য অথবা সামাজিক যোগাযোগের জন্য তৈরি করা অপ্রয়োজনীয় অ্যাকাউন্টগুলি ডিলিট অথবা নিষ্ক্রিয় করে দাও। এর ফলে তোমার কোনো অতীত কাজের অথবা ব্যক্তিগত মুহুর্তের তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
২। তথ্য সংগ্রহ অথবা জমা রাখে এমন সাইট গুলি থেকে নিজের প্রয়োজনীয়, ব্যক্তিগত এবং স্পর্শকাতর তথ্য গুলি মুছে ফেল। এধরণের সাইট একেবারেই ব্যবহার না করা সবচেয়ে ভালো। এর মাধ্যমে বিভিন্ন থার্ড পার্টি, হ্যাকার বা অনৈতিক বিজ্ঞাপন দাতা প্রতিষ্ঠান তোমার কাছে পৌঁছাতে পারবে না।
৩। জরুরি প্রয়োজনে কোনো ওয়েবসাইটে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন সোশ্যাল সিকিউরিটি নম্বর, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য প্রদান করে থাকলে, কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে এই সকল তথ্য ওয়েবসাইট থেকে মুছে ফেলতে হবে। এর ফলে জালিয়াতরা তোমার অর্থনৈতিক স্পর্শকাতর তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
৪। ফেসবুক ব্যবহার করে কোনো থার্ড পার্টি অ্যাপে লগ ইন করবে না। বিভিন্ন কারনেই আমরা থার্ড পার্টি অ্যাপ থেকে সেবা গ্রহন করে থাকি। এসব অ্যাপে লগ-ইন করার জন্য ফেসবুকের ব্যবহার বহুল প্রচলিত। কিন্তু, এটি একটি ক্ষতিকর অভ্যাস। এর ফলে তোমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টের লগ-ইন তথ্য বেহাত হয়ে যেতে পারে।
৫। সর্বোপরি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় তথ্য শেয়ার করার মাধ্যমে ফুটপ্রিন্ট নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। এর ফলে ব্যক্তিগত মুহূর্তের তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।