তুমি কি এই প্রবন্ধটি পড়তে কোনো ডিজিটাল ডিভাইসের সহায়তা নিয়েছো?
ধরা যাক, তুমি একটি মোবাইল ফোনের সাহায্যে এই মুহুর্তে প্রবন্ধটি পড়ছো। তুমি কি জানো যে তোমার হাতের মুঠোর মধ্যে থাকা মোবাইল ফোনটি তৈরি করতে এবং ব্যবহার উপযোগী করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে?
মোবাইল ফোনটি ব্যবহারযোগ্য করতে এতে ব্যবহার করা হয়েছে কোবাল্ট, সোনা কিংবা লিথিয়ামের মতো দুষ্প্রাপ্য ধাতু। এসব ধাতু খনি থেকে উত্তোলণ, নিষ্কাষন এবং পরিশোধন, পরিবহন ইত্যাদি কাজের জন্য পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। প্রযুক্তিগত এসকল উপকরণ মানুষের জীবনযাত্রাকে একদিকে যেমন সহজ করে তোলে তেমনি অন্যদিকে আমাদের অসচেতনতা কিংবা অবিবেচনা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণতঃ ডিজিটাল ডিভাইসের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাবের কথা আলোচনা করার সময়ে আমরা মানসিক, শারীরিক অথবা সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির কথা বলে থাকি। তবে ডিজিটাল ডিভাইসের ক্ষতিকর প্রভাব পরিবেশের উপরেও নিদারুণ ভাবে পরিলক্ষিত হয়। যেমনঃ
১। ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনে প্রয়োজন হয় বিভিন্ন দুষ্প্রাপ্য ধাতুর। এসব ধাতুর পরিশোধন ও নিষ্কাশন প্রক্রিয়া অত্যন্ত দূষণ-প্রবণ।
২। ১৬ টির বেশি ধাতু বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনে ব্যবহার হয়ে থাকে। মাইক্রোফোন ও স্পিকার প্রস্তুতিতে লোহা, ডিভাইসগুলির কাঠামোপ্রস্তুত করতে অ্যালুমিনিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আর ইলেক্ট্রনিক সার্কিট প্রস্তুতিতে ব্যবহার হয় সোনা, তামা, ইত্যাদির মতো ধাতুর। এছাড়াও লেড বা লিথিয়ামের ব্যবহার ব্যাটারি প্রস্তুতিতে জনপ্রিয়। এসকল ধাতুর বেশিরভাগেরই উত্তোলণের সময়ে বিষাক্ত উপজাত (বাই-প্রোডাক্ট) তৈরি হয়। (৩২০ টন ধাতু বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস প্রস্তুতিতে প্রতি বছর ব্যবহার হয়)*
৩। উল্লেখিত ধাতুগুলি টেকসই হওয়ায় পরিবেশে দীর্ঘদিন টিকে থাকে এবং এদের নিষ্পত্তিকরণ (ডিসপোজাল) এবং পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়াও পরিবেশের জন্য বিষাক্ত বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে।
৪। ডিজিটাল ডিভাইস সমূহের ৮০ শতাংশ কার্বন ফুটপ্রিন্ট, এর প্রস্তুতিকালীন সময়ে পরিলক্ষিত হয়।**
(কার্বন ফুটপ্রিন্ট হলো কোনো নির্দিষ্ট কাজের কারণে উৎপন্ন হওয়া মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের (কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, ইত্যাদি) পরিমাণ)
৫। নিত্যনতুন প্রযুক্তি ও ডিজাইনের উদ্ভাবনের কারণে মানুষ নিয়মিত ডিভাইস পরিবর্তন করে থাকে। এর ফলে বিপুল পরিমানে অপচনশীল বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে।
ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার আমাদের জীবনকে আধুনিক ও সহজতর করেছে ঠিকই তবে এর উৎপাদন বহুলাংশেই পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে । তাই, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে টেকসই ও সহনশীল প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে কি মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করে দিব? ঠিক তা নয়, আসলে আমরা সচেতনভাবে মোবাইল ব্যবহার করব এবং পরিবেশের ক্ষতির পরিমাণ যতটা সম্ভব কমিয়ে আনার চেষ্টা করব। এটা কি আদৌ সম্ভব? সম্ভব, আমাদের কিছু কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন পৃথিবীর জন্য বিরাট পরিবর্তন সাধন করে। যেমনঃ
১। ঘন ঘন মোবাইল বদল করাকে স্মার্টনেস হিসেবে দেখার কিছু নেই। এর ফলে পরিবেশের উপর কী ধরণের বিরূপ প্রভাব পড়ছে এখন আমরা জানি। তাই যত্নের সাথে নিজের মোবাইলটি দীর্ঘ দিন ব্যবহারের মানসিকতা ধারণ করব এবং অন্যকে উৎসাহিত করব।
২। নষ্ট মোবাইল যেখানে সেখানে ফেলবো না। নিকটস্থ মোবাইল সারাইয়ের দোকানে দিতে পারি, যেখানে এর অনেক যন্ত্রাংশ পুনরায় ব্যবহৃত হতে পারে।