বর্তমান যুগে - ইন্টারনেট মানুষের জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলছে । সহজে যোগাযোগ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবা পাওয়া এমনকি জীবিকার মত ব্যাপারগুলোর জন্যেও মানুষ অনলাইনের উপর নির্ভরশীল। ডিজিটাল পরিমণ্ডলে মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করতে এবং এর সুফল ভোগ করতে হলে কিছু আদবকেতা মেনে চলা জরুরী। সেজন্য ইন্টারনেট ব্যাবহারের জন্যে এই অনলাইন মাধ্যমে কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না সেই ব্যাপারটা ভালো করে জানা উচিত। জেনে বুঝে অনলাইন মাধ্যম ব্যাবহার করলে একদিকে যেমন অনেক ঝামেলা এড়িয়ে চলা যায়, অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল পাওয়া যায়। ১। পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোনঅনলাইনে কারো সাথে আলাপের ক্ষেত্রে আমরা হয়তো সামনাসামনি আলাপ করছিনা কিন্তু প্রতিটা অনলাইন একাউন্টের পিছনে তো এক একজন মানুষই আছে। যে কথাগুলো সামনাসামনি বলতে পারিনা সেগুলো আমরা অনলাইন বলতে পিছপা হই না অনেকসময় । তা যত তিক্ত-কটু কথাই হোক না কেন। কিন্তু এটা কি ঠিক? আমরা সকলেই ভিন্ন ভিন্ন মানসিক অবস্থা , ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ ধারণ করি। আপনার সাথে কারো মতের মিল নাই, হতে পারে, কিন্তু সেজন্য অশ্রদ্ধা দেখানো উচিত না। পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রেখে যোগাযোগ করুন, যেন একে-অপরের বিপদে-আপদে সাহায্য করতে পারেন। ২। আপনার মন্তব্য কী বোঝাচ্ছে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুনবাস্তব জগতে কথা বলার সময় যোগাযোগের বড় একটা অংশ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বা শারীরিক অভিব্যক্তি। আপনার কথার পাশাপাশি মুখের অভিব্যক্তি কিংবা অঙ্গভঙ্গি অনেক অর্থ বহন করে। অনেককিছুই আমরা মুখে না বললেও বডি ল্যাঙ্গুয়েজে বুঝে নেই। আবার কেউ কিছু না বুঝলে আবার বলে বুঝিয়ে নেয়ারও সুযোগ থাকে এখানে৷ কিন্তু অনলাইনে কোন একটা লেখা বা কথায় এই বাড়তি ব্যাপারগুলো থাকেনা। শুধুমাত্র লেখার মধ্য দিয়েই সবটুকু বুঝে নিতে হয়, যার ফলে ভুল বোঝাবুঝির অবকাশ থাকে। সেজন্য চেষ্টা করা উচিত যাতে সহজ ভাষায় বলা যায়। নাহলে আপনার কথা ভুল বুঝে কেউ কষ্ট পেলে বা রেগে গেলে তো সমস্যাই। কখনো ভুলবোঝাবুঝিসৃষ্টি হলে অপর পক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করুন এবং আপনি সরাসরি কথা বলে এই ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটাতে আগ্রহী এমনটাও জানিয়ে দিতে পারেন। ৩. সার্কাজম ও হিউমারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুনসামনাসামনি যোগাযোগ না হবার কারণে রম্য বা মজা করে বলা কথা অনেকে বুঝতে পারেন না। আবার অনেক সময় ইমোটিকন বা ‘LOL’এই ধরণের কোড দিয়ে সিরিয়াস কথা বলেও আসলে রম্য বোঝানো হয়, যা অনেকেই বুঝতে পারেন না। সেজন্য অনলাইন ফান করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা উচিত। আপনি যা লিখছেন তা আবারো ভালোমত পড়ে দেখে নিন যে আপনার হিউমারটা অধিকাংশ লোকেই বুঝবে কিনা। আবার অনেকসময় হিউমার প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখার সাথে বিশেষ বিশেষ ইমোটিকন এর ব্যবহার করলে অন্যরা বিষয়টি যে নিছক মজা করার জন্য লেখা তা বুঝতে পারে। ৪। অবাঞ্ছিত ব্যক্তির থেকে আপনার তথ্য নিরাপদ রাখুনঅনলাইনের প্রাইভেসি স্যাটিংস এর মাধ্যমে আপনার তথ্য গোপন রাখুন। ব্যক্তিগত তথ্য পাবলিক করে রাখলে বিভিন্ন ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন। সেজন্য আগেভাগেই সতর্ক থাকা ভালো। অনলাইন মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ফোন নাম্বার, ইমেইল এড্রেস, ঠিকানা এসব একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য সকলের সাথে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। ৫. ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এবং গ্রুপের আমন্ত্রণ গ্রহণের আগে ভালোমত দেখে নিননতুন কোন রিকুয়েস্ট আসলে সে ব্যক্তির একাউন্ট ভালমতো দেখে নিন যে এই ব্যক্তিকে আপনি চেনেন কিনা, বা তাকে ফ্রেন্ড লিস্টে রাখতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন কিনা। গ্রুপ বা পেইজের ইনভাইটেশনের ব্যাপারেও খেয়াল রাখবেন যে এগুলো আপনার প্রয়োজনীয় কিনা। যদি না হয় তাহলে এক্সেপ্ট না করাই ভালো। একই কথা মেসেঞ্জারে মেসেজ রিকোয়েস্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যেমন- ফেসবুকে একজন মানুষের বন্ধু না হলেও তিনি আপনাকে মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠাতে পারেন। তাঁর সাথে বন্ধুত্ব করতে না চাইলে কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত মেসেজ পাঠালে তাঁর উত্তর না করে সরাসরি ব্লক করুন। অনেকসময় পরিচিত মানুষজনের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্য চেয়ে মেসেজ আসে, সেক্ষেত্রে তাঁর সাথে কথা না বলে কিংবা ভিডিওকলের মাধ্যমে আসলেই মানুষটি সে কিনা তা নিশ্চিত না হয়ে আর্থিক লেনদেন করবেন না। হুট করেই পাঠানো কোন লিংকে না জেনে বুঝে ক্লিক করবেন না। ৬. কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভালোমত পড়ে, বুঝে নিন অনলাইন ওয়েবসাইট ও অ্যাপের নিয়ম বা কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভালো করে জেনে নিন। বেশিরভাগ অনলাইন ফোরাম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গেমিং সাইটগুলোর নিজস্ব কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বা গ্রাহকদের অনলাইন আচরণের নির্দেশনা থাকে। এসব আচরণ না মানলে অনলাইন মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়। তাই কোন গ্রুপে যুক্ত হবার সময় নিয়মনীতি এবং আচরণবিধি ভালোমত পড়ে নিন। ৭. সহানুভূতিশীল হোনঅনলাইনে মাধ্যমের সবাই ভালোমত জেনে বুঝে ব্যবহার করতে জানে তা কিন্তু না। সেক্ষেত্রে কেউ যদি অযাচিত কোন কথা বলে বা লেখে তাহলে তাদের কে ভালোভাবে বোঝান। তারপরও না বুঝলে ওই সাইটের নিয়ম মেনে রিপোর্ট করুন বা ব্যবস্থা নিন। খুব বেশি আক্রমণাত্মক বা অপমানজনক আচরণ না করাই শ্রেয়। ৮। ব্যক্তিগত আক্রমণকরা থেকে বিরত থাকুন।অনেক সময় দ্বিমত হতে পারে অনেকের সাথে। সেসব ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে বিতর্ক করুন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পারেন। আর পরিচিত মানুষজন কিংবা বন্ধুবান্ধব হলে কথা বলে কিংবা মেসেঞ্জারে আলাদাভাবে আলাপ করে আপনার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারেন।কোন অবস্থাতেই ব্যক্তিগত আক্রমণ করবেন না, ব্যক্তিগত আক্রমণ তিক্ততা বাড়ায়। সেইসাথে আপনাদের মিউচুয়াল বন্ধু যারা আছেন তাদের কাছেও আপনার সম্মান নষ্ট হতে পারে। পরস্পরের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি করে এবং শান্তি বিনষ্ট করে, যার প্রভাব ব্যক্তিজীবনেও পড়ে।
আরও জানুনবেশ কয়েকটি কমিউনিকেশন অ্যাপ প্রচলিত আছে যেমন হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইমো, টেলিগ্রাম, ভাইবার ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে হোয়াটস অ্যাপ এবং মেসেঞ্জার জনপ্রিয় দুইটি কমিউনিকেশন অ্যাপ। হোয়াটসঅ্যাপঅতি পরিচিত এবং বহুল ব্যবহৃত একটি অ্যাপ হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ। আপনার যদি কোন হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট না থেকে থাকে এবং যদি না জানেন কীভাবে একটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলা যায় তাহলে এই লেখা আপনার জন্য। চলুন জেনে নেয়া যাক, খুব সহজেই কীভাবে একটি হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলা যায়।১। প্রথমেই গুগল প্লে-স্টোর বা এপলের অ্যাপ স্টোর থেকে বিনামূল্যে হোয়াটসঅ্যাপ ডাউনলোড করে নিন। তারপর ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ আইকনে ক্লিক করে অ্যাপটি চালু করুন।২। তারপর এই অ্যাপের ব্যবহারবিধি এবং নিরাপত্তা নীতিমালা ভালোমতো পড়ে “এগ্রি এন্ড কন্টিনিউ”(Agree and Continue) এ ক্লিক করে নীতিমালা গ্রহণ করুন।৩। এখন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করার জন্যে কান্ট্রি কোডসহ আপনার দেশ সিলেক্ট করুন। তারপর ফোন নাম্বার দিন। ৪। নাম্বার দেয়ার পর ডান/নেক্সট (Done/Next) এ ক্লিক করুন।৫। যে নাম্বার দিয়েছেন সে নাম্বারে একটি ৬ অঙ্কের কোড আসবে। কোডটি দিলেই অ্যাকাউন্ট চালু হয়ে যাবে।৬। এবার অ্যাকাউন্টে গিয়ে নিজের নাম ও প্রোফাইল ছবি দিয়ে প্রোফাইল সম্পূর্ণ করুন।৭। আপনার ফোনে সংরক্ষণ করা ফোন নাম্বার, ছবি ও ভিডিওতে হোয়াটসঅ্যাপকে এক্সেস দিয়ে রাখতে পারেন ৮। ব্যস, অ্যাকাউন্ট চালু হয়ে গেল। এইবার এখান থেকে আপনার ফোনে যাদের নাম্বার আছে তাদের যে কাউকে মেসেজ, কল দেয়া যাবে। ছবি, ভিডিও বা ফাইল তাদের সাথে শেয়ার করা যাবে। প্রয়োজনে নতুন কোন নাম্বারও যুক্ত করে নিতে পারবেন।৯। বিভিন্ন প্রয়োজনে গ্রুপও খুলতে পারবেন এখানে। একটি গ্রুপে সর্বোচ্চ ২৫৬ জন সদস্য থাকতে পারবেন।১০। হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করা ফাইলের সাইজ সর্বোচ্চ ১০০ এমবি এবং ভিডিওর সাইজ ১৬ এমবি পর্যন্ত হতে পারবে। মেসেঞ্জারকমিউনিকেশন অ্যাপের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের সুবাদে বহুল ব্যবহৃত একটি অ্যাাপ মেসেঞ্জার অ্যাপ। মেসেঞ্জার হচ্ছে ফেসবুকের মেসেজিং অ্যাপ। মেসেঞ্জারের দুইটা অ্যাপ আছে। এর একটি হচ্ছে মেসেঞ্জার আরেকটি মেসেঞ্জার লাইট। মেসেঞ্জারের লাইট ভার্শনটি স্টোরেজ কম ব্যবহার করে এবং অনেক কম ডাটা সার্ভিস ব্যবহার করে। কিন্তু এই অ্যাপে মেসেঞ্জারের মত সকল সুবিধা নেই। মেসেঞ্জার ব্যবহার করবেন কীভাবে?ইন্টারনেট ব্রাউজারের মাধ্যমেআপনার কম্পিউটারে ব্রাউজার দিয়ে ফেসবুক ব্যবহারের সাথে সাথে মেসেঞ্জার ব্যাবহার করা যায়। আবার মোবাইল ফোন এর যেকোনো একটা ইন্টারনেট ব্রাউজার ব্যবহার করে ফেসবুক ব্যবহারের পাশাপাশি মেসেঞ্জারও ব্যবহার করা যায়। সেজন্য মেসেঞ্জার অ্যাপ ডাউনলোড করার কোন প্রয়োজন নেই। মেসেঞ্জার অ্যাপ এর মাধ্যমেআবার স্মার্ট ফোনে মেসেঞ্জার অ্যাপ বা মেসেঞ্জার লাইট অ্যাপ ডাউনলোড করেও মেসেঞ্জার ব্যাবহার করা যায়। গুগল প্লে স্টোর থেকে মেসেঞ্জার ডাউনলোড করে ইন্সটল করার পর ইমেইল বা ফোন এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে পারবেন। ব্যবহার শেষে প্রয়োজনে লগ আউট করে রাখা যাবে।কোন নতুন মেসেজ আসলে সেগুলো মেসেজ রিকুয়েস্ট অপশনে চলে যায়। আপনি দেখে যদি মনে করুন যোগাযোগ করবেন, প্রয়োজন মনে না করলে যোগাযোগ নাও করতে পারেন।কেউ অনলাইনে থাকলে নামের পাশে সবুজ বিন্দু দেখে বোঝা যায়। জুম, গুগল মিটের মত মেসেঞ্জার কলে স্ক্রিন শেয়ার করার সুযোগ আছে। মেসেঞ্জার ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:১। কমিউনিকেশন অ্যাপগুলো দেখতে এবং ব্যবহার করতে প্রায় একই রকম। ফেসবুক মেসেঞ্জারে অডিও এবং ভিডিও কলে কথা বলা যায়। সেজন্য যাকে ফোন দিবেন তার ইনবক্সে গিয়ে অডিও বা ভিডিও কলের আইকনে ক্লিক করতে হবে।২। মেসেঞ্জার মেসেজিং অ্যাপ হিসেবেই শুরুতে বেশি জনপ্রিয় ছিলো। এখানে লিখিত এবং অডিও দুই ধরণের মেসেজই পাঠানো যায়। লিখিত মেসেজ পাঠানোর জন্য মেসেজের বক্সে মেসেজটা টাইপ করে সেন্ড বাটন চাপলেই মেসেজ চলে যাবে। অযাচিত মেসেজ চলে গেলে প্রাপক দেখার আগেই মেসেজটা ডিলিট বা আনসেন্ট করার সুযোগ আছে।৩। মেসেঞ্জারের মাধ্যমে যোগাযোগকে আরও আকর্ষণীয় করতে মেসেজের পাশাপাশি ইমোটিকন, GIF, Sticker ইত্যাদি ব্যবহার করার সুযোগ আছে।৪। যেকোনো ছবি বা ভিডিও মেসেঞ্জারের মোবাইল বা কম্পিউটার যেকোনো ভার্শন থেকেই পাঠানো যাবে। সেজন্য ছবি বা ভিডিও ফোনের কাঙ্ক্ষিত ফোল্ডার থেকে আপলোড করে তারপর পাঠাতে হবে।৪। মেসেঞ্জারের কম্পিউটার ভার্শনে অন্যান্য কাজের পাশাপাশি মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাওয়ারপয়েন্ট, পিডিএফ এই ফাইলগুলো শেয়ার করা যায়। যা মোবাইল ভার্শনে করা যায় না।৫। মেসেঞ্জারে বিভিন্ন গ্রুপ খুলে একই কাজের বা চিন্তার মানুষের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা করতে পারবেন।
আরও জানুনবাংলাদেশে ভুল তথ্য ছড়িয়ে কাউকে বিপদে ফেলা, কারো সম্মানহানি এমনকি অনেকক্ষেত্রে জীবনের উপরে হুমকিও চলে আসার মত ঘটনা খুব বিরল না। আমাদের সকলেরই কমবেশি এমন অভিজ্ঞতা আছে হয়তো। সাধারণ মানুষ খুব বেশি কিছু না জেনেই শুধুমাত্র একটি ফেসবুক পোস্ট বা ইউটিউবের উস্কানিতেই ক্ষেপে গিয়ে বড় ধরণের অপরাধ করে ফেলে। ফলে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। আমরা না জেনে না বুঝে অনেক সময় অনলাইন মাধ্যমে অনেক তথ্য বা ঘটনা শেয়ার করি যার মধ্যে অনেক ভুল তথ্য থাকে। আবার অনেকেই আছে ইচ্ছাকৃত-ভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্যে এই কাজগুলো করে থাকে। এবং আমরা নিশ্চিত না হয়েই সেসব তথ্য শেয়ার করে এর প্রচার করে ফেলি। এজন্য অনেকেই নানান অসুবিধায় পড়ে যান, অনেকেরই জানমালের ক্ষতি হয়। সেজন্য যেকোনো তথ্য শেয়ার করার পূর্ব তথ্যটি সঠিক কিনা সে ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়ে নেয়া জরুরি। কেননা এধরণের বিশৃঙ্খলার ফলে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি হয়, বিশ্বাস উঠে যায়, বিপদে কাউকে পাশে পাওয়া যায় না, ফলে সামাজিক বন্ধন আলগা হয়ে পড়ে। সর্বোপরি জাতি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নানাবিধ সংকট দেখা দেয়। তাই, এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে নেয়া কেন জরুরী?১। অনেকেই নানান খারাপ উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়।। আমরা না জেনেই যদি তাদের এই তথ্যগুলো শেয়ার করে দেই তাহলে আসলে অপরাধীদের খারাপ চিন্তাটাকে আমরাই বাস্তবে রূপ দেয়ার অংশ হয়ে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিকেই দোষী করতে পারিনা। আমরাও একইভাবে দোষী।২। এসব ভুল তথ্য ছড়ানোর অপরাধে আমাদের বিরুদ্ধে যদি কেউ আইনি ব্যবস্থা নেয় তাহলে তার জন্যে আমাদেরই ঝামেলা পোহাতে হবে।৩। সমাজের নিরাপত্তার এবং আমাদের সকলের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্যে এই তথ্য-সন্ত্রাস বড় ধরণের হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে। বিভিন্ন ধরণের উস্কানি যারা দেয় তারা সুবিধা করতে পারলে প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সাথে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে যার জন্যে আসলে আমরাও অনেকাংশেই দায়ী।৪। দেশের সামগ্রিক অবস্থা যদি ভালো না থাকে তাহলে আমাদের নিজেদেরই জীবনযাত্রা আমাদের পরিবার নিরাপদ থাকবে না। সেজন্য এধরণের ভুল তথ্য, উস্কানি যত কম ছড়ায় আমাদের সকলের নিরাপত্তার জন্যেই সেটা ভালো। ৫। ভুল তথ্যের ফাঁদে পড়ে অনেকেই অর্থ-সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। যেমন অনলাইনে ঘরে বসেই শুধুই কিছু সাইটে ক্লিক করে আয়, সহজে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ এসব লোভনীয় তথ্য শেয়ার করে প্রতারণা চক্র মানুষকে ফাঁদে ফেলে। এধরণের কোন কিছু শেয়ারের জন্যে হতে পারে কেউ একজন বিপদে পড়লো। আপনি নিজেও এই ফাঁদ থেকে নিরাপদ নন।৬। এদেশে অনেকেই বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি, স্বাস্থ্য-কথা প্রচার করে। সেসব তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে এগুলো ব্যাবহার করতে গেলে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আপনি হয়তো সবার উপকারের কথা ভেবে এসব শেয়ার করেছেন কিন্তু আদতে উপকার নয় ক্ষতি করে ফেলছেন।৭। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক ধরণের উস্কানি দিয়েই সাধারণ মানুষকে ব্যাবহারের চেষ্টা করা হয়। সেসব থেকে সচেতন না থাকলে বিপদে পড়া লাগবে।৮। যেকোনো ধরণের ভুল তথ্য, গুজব ছড়ানোর কারণে অনলাইন মাধ্যমের একাউন্ট ব্লক হয়ে যেতে পারে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।অনলাইন মাধ্যমে যা দেখবেন তা-ই বিশ্বাস করে নেয়া যাবেনা। তথ্যের প্রাচুর্যের সাথে কিন্তু অনেক তথ্য সঠিক তথ্য বাছাই করে নেয়াটা অনেক কঠিন হয়ে গেছে। সেজন্য কিছু শেয়ারের আগে ভেবেচিন্তে শেয়ার করুন। আপনার বন্ধুতালিকায় থাকা মানুষজনের কাছে আপনার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, তারা আপনাকে বিশ্বাস করে। তাই কোন কিছু শেয়ার কিংবা প্রচার করার আগে যাচাই-বাছাই করে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর ফলে সবার আগে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তারা হলো আপনার বন্ধুবান্ধব- আত্মীয়স্বজন। সুন্দর অনলাইন মাধ্যম থাকলে আমাদের জীবনে এর ভালো প্রভাবই পড়বে। এই ডিজিটাল যুগে তথ্য খুব বড় একটা সম্পদ, একইসাথে বড় একটা অস্ত্রও। আপনি সচেতনভাবে ব্যাবহার করলে সকলেরই উপকার হবে আর না জেনে ব্যবহার করলে এই অস্ত্রে আপনি নিজে এবং আপনার নিকটজনেরা ঘায়েল হতে পারেন।
আরও জানুনবর্তমান সময়ে আমরা যেন তথ্যের সাগরে ভেসে আছি। অজস্র তথ্যের প্রবাহ আমাদের চারপাশে। কিন্তু এগুলোর কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা তা যাচাই করা বেশ কঠিন। তাই এর সুবিধা- অসুবিধা দুইই আছে। ইদানীং অনলাইন মাধ্যমে অসত্য তথ্য প্রকাশ বেশি হওয়ায় সচেতন মানুষ অনেক অনলাইন মাধ্যমের উপর আস্থা রাখেন না। কিন্তু দেশের সকলেই এই ব্যাপারে সচেতন না থাকায় ঘটে যায় নানান অবাঞ্ছিত ঘটনা। যেমন একটা সময় পত্রিকায় ভুল তথ্য ছড়িয়ে দাঙ্গা লাগানো থেকে শুরু করে সমাজের সামগ্রিক শান্তি নষ্ট করা হত। অনলাইন মাধ্যমে কম সময়ে অনেক বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব এবং অনেক বেশি মানুষকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা সম্ভব। সাধারণ মানুষকে কারো বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে সাম্প্রদায়িক হামলা, সাইবার বুলিং, অনলাইনে অপদস্থ করার ঘটনা বাংলাদেশে খুব সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব যে কত বেশি তা বুঝে বা না বুঝেই যারা এই কাজগুলো করছেন তাদেরসহ সকলেরই এই সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। অনলাইনে অসত্য ও সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশে কী সমস্যা হতে পারে? সঠিক তথ্য বাছাই করা কঠিন হয়ে যায়হাজারো তথ্যের মধ্যে সঠিক তথ্য বাছাই একরকম কঠিন হয়ে গেছে। একটা সময় ছিলো যখন মানুষের কাছে তথ্য খুব একটা সহজলভ্য ছিলো না। এখন এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে তথ্য এত সহজলভ্য থাকার পরেও মানুষের মধ্যে এত এত ভুল ধারণার পিছনে বড় একটা কারণ হল সঠিক তথ্যের অভাব। অন্যভাবে বলতে গেলে তথ্যের অনেক উৎস থেকে সঠিক তথ্যটা খুঁজে বের করার ক্ষমতার অভাব। মিথ্যা তথ্য অনেক বেশি পরিমাণে ছড়িয়ে পরলে বেশিরভাগ মানুষই সঠিক তথ্য খুঁজে পাবে না। ভুল তথ্য জেনে বিভ্রান্ত থাকবে, বিপদে পড়বে । অনলাইন মাধ্যমগুলো ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রকাশের মাধ্যম হয়ে যায়আশপাশের অনেককেই বলতে শুনবে নিত্যব্যবহার্য কোন কোন পণ্যে হারাম দ্রব্য মেশানো তাই ব্যাবহার করা যাবেনা। তারপর পঙ্গপাল আসছে দেশে দুর্ভিক্ষ শুরু হবে এমন সব আজগুবি কথা প্রচার করা হয়। এ ধরনের মিথ্যা তথ্য অনেক বেশি প্রচারের ফলে এই ভুল ব্যাপারগুলো অনেক বেশি প্রচার পেয়ে যায়। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গুরুত্ব কমে যায়অনলাইন মাধ্যম মানুষের বাক-স্বাধীনতাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এখন যে কেউ চাইলেই অনলাইনে তার মতামত প্রকাশ করতে পারে। বিভিন্ন বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা করতে পারে। মিথ্যা তথ্যের অনেক বেশি প্রসারের জন্যে মানুষের বাক-স্বাধীনতা এবং সামগ্রিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর অনাস্থা চলে আসে। জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্পর্কে মানুষের মনে ভুল ধারণা তৈরি করেমিথ্যা তথ্য যারা ছড়ায় তাদের বড় একটা অংশ বিজ্ঞানের আবিষ্কারগুলো সম্পর্কে ভুল বুঝিয়ে মানুষকে এগুলো থেকে নিরুৎসাহিত করে। যেগুলো দিয়ে প্রভাবিত হয়ে অনেকেই আধুনিক চিকিৎসা, প্রযুক্তি ব্যাবহার করতে নিরুৎসাহিত হয়। কোন আপদকালীন অবস্থায় অনেক মানুষ এদের অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে নিরাপত্তায় অবহেলা করে। বৈজ্ঞানিক সত্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও ভুল ধারণা তৈরি করে। মানুষের জীবনের উপর হুমকি আসতে পারেধর্মীয় বিশ্বাসের মত ব্যাপারগুলো এদেশে খুবই স্পর্শকাতর। এসব বিষয়ে ভুল তথ্য ছড়িয়ে সহজেই সাধারণ মানুষকে উত্তেজিত করে তাদের ব্যাবহার করা যায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনলাইন মাধ্যমে অনেকেই অসত্য তথ্য ছড়ায়। যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে একদল মানুষ অন্য মানুষের ঘরবাড়িতে হামলা, খুন, ধর্ষণের মত বড় ধরণের অপরাধ করে ফেলে। সঠিক তথ্যের গুরুত্ব কমে যাচ্ছেঅনলাইনে অপ্রয়োজনীয় ও মিথ্যা তথ্যের আধিক্যের কারণে সঠিক এবং জরুরি তথ্যগুলোও প্রয়োজনীয় গুরুত্ব পায়না। মনে করুন অনলাইনে কেউ সাহায্যের আবেদন করেছে। অতীতে যদি কোন মিথ্যা সাহায্যের আবেদনে সাহায্য করে ঠকে থাকেন তাহলে পরবর্তী কারো প্রয়োজনে সাহায্য করতে আগ্রহ পাবেন না। মূল্যবান সময় ও মেধা নষ্ট হচ্ছেমিথ্যা তথ্যের পাঠক, লেখক, প্রকাশক সকলেরই এসব অপ্রয়োজনীয় তথ্য তৈরি ও পাঠ-সূত্রে অনেক সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন। যে সময়টা সকলেই হয়তো কোন সৃজনশীল কাজে ব্যয় করা যেতো।মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস জন্ম নেয় এবং পারস্পরিক বন্ধন আলগা হয়ে পড়ে মানবসমাজের জন্য অনবরত মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রকাশের চূড়ান্ত পরিণতি ভয়াবহ। মানুষ সত্য-মিথ্যার পার্থক্য ধরতে না পেরে বিভ্রান্ত হয়ে যায় এবং তারা কাউকেই আর বিশ্বাস করতে পারে না। ফলে দিন দিন একে অপরের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে এবং বিছিন্ন হয়ে পড়ে। দীর্ঘমেয়াদে এর ফলে সমাজ এবং জাতি দুর্বল হতে থাকে, জনজীবনের সুখ- সমৃদ্ধি বিনষ্ট হয়। অনলাইন মাধ্যমের পরিবেশ আমাদের জীবনে অনেক বড় প্রভাব রাখে। সেজন্য এখানের সামগ্রিক অবস্থা যত বেশি ভালো হবে, আমাদের সকলের জন্যেই তত ভালো হবে ব্যাপারটা। মিথ্যা তথ্যে প্রভাবিত না হয়ে সঠিক তথ্য জেনে কার্যকর অনলাইন আচরণ সকলেরই কাম্য।
আরও জানুনঅনলাইনে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বড় ধরণের প্রভাব আছে আমাদের জীবনে। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে এদেশে মানুষের ঘরবাড়ি পর্যন্ত পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এই মিথ্যা খবরগুলো সত্যের থেকে অনেক বেশি প্রচার পায়। এগুলো অনেক বেশি প্রচার পায়। অনলাইনে অতি প্রচার হওয়াকে বলে ভাইরাল হওয়া। এই ভাইরালের লোভে ভুল তথ্য অসম্ভব-রকম বেড়ে গেছে। একটা সময় ছিলো তথ্য অতটা সহজলভ্য ছিলোনা। এই তথ্যের সহজলভ্যতার যুগে অনেক অনেক তথ্য থেকে সত্য খুঁজে নেয়া কঠিন হয়ে গেছে। বলতে গেলে সঠিক তথ্য এখনো সহজলভ্য হয়নি আসলে। এই বিভ্রান্তিকর অবস্থায় সঠিক তথ্যটি চিনতে না জানলে অনলাইন মাধ্যম আপনাকে বিভ্রান্ত করেই যাবে। কীভাবে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হবেন? ১। ওয়েবসাইটের এড্রেস খেয়াল করুনপরিচিত প্রায় সব ওয়েবসাইটের নিজস্ব ডোমেইন থাকে এবং ওয়েব এড্রেসও নির্দিষ্টই। যেমন যদি কোন সাইটের ওয়েব এড্রেস এর শেষটা হয় .com.co তাহলে আমাদের ভ্রু কোচকানোই স্বাভাবিক। এমন অস্বাভাবিক বা অপরিচিত ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নেবার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। যেমন abcnews.com একটি পরিচিত ওয়েবসাইট কিন্তু abcnews.com.co তেমন পরিচিত নয় , সন্দেহজনক। ২। ওয়েবসাইটের এবাউট আস (About Us) সেকশন পড়ে নিনএখানে সাধারণত সাইটগুলো নিজেদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এসব বলে থাকে। এই জায়গায় সবকিছু সরাসরিই বলা হয়ে থাকে। এখানের লেখা যদি মনে হয় বিভ্রান্তিকর তাহলে সচেতন হতে হবে। ৩। তথ্যসূত্র এবং উদ্ধৃতি আছে কিনা দেখুনসঠিক তথ্য হলে তথ্যসূত্র এবং উদ্ধৃতি থাকবে। এগুলো না থাকা মানে এই তথ্য সঠিক নাও হতে পারে। অনেক অনলাইন নিউজ পোর্টাল আছে যেগুলোতে ভুল তথ্য শেয়ার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়। যেগুলোতে অনেক বিশেষজ্ঞ মতামতও পাবেন যার বেশিরভাগই ভুয়া। ৪। কমেন্ট বক্সে অন্যদের কমেন্ট দেখুনঅনেক আপাত আকর্ষণীয় কিন্তু মিথ্যা খবরের শিরোনাম দেখে এমনকি পুরো লেখাটা পড়েও সত্যি-মিথ্যা যাচাই করা সম্ভব হয়না৷ সেক্ষেত্রে অন্যদের কমেন্ট দেখলেই বোঝা যায়। শিরোনাম এমনভাবে দেয়া হয় যাতে সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ভুয়া তথ্যসূত্র দিয়ে ব্যাপারটা সত্য প্রমাণের চেষ্টাও করা হয়। সেসব যাচাইয়ের ভালো উপায় হচ্ছে অন্যদের কমেন্ট। ৫। খবরের বা লেখার ছবি সার্চ করতে পারেনমিথ্যা খবর যারা বানায় তাদের একটা প্রবণতা হল লেখার মাঝের ছবিগুলো আগের কোন ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করে ব্যাবহার করা। যেমন ধরুন কোন এক জায়গায় কোন এক বিশেষ জাতিকে নির্যাতনের খবর প্রকাশ করা হলো। সেই খবরে ছবি দিয়ে দিলো পূর্বে ঘটা অন্য কোন ঘটনার। এই ছবিটা গুগলে সার্চ করলে যদি দেখেন যে এই একই ছবি পূর্বের কোন খবরে ব্যাবহার হয়েছে তাহলে ধরে নিতে পারেন যে এই খবরটি ভুয়া। কারো চিকিৎসার জন্যে সাহায্যের আবেদন, কেউ বিপদে পড়েছে বলে আর্থিক সাহায্য করতে বলা কিংবা কারো সাফল্যের গল্প, কিছু আবিষ্কারের গল্পও অনেকসময়ই মিথ্যা হয়ে থাকে। ছবি যাচাই করে দেখলেই বুঝতে পারবেন। ৬। গুগলে সার্চ করে দেখে নিনযে তথ্য কোন একটা মাধ্যমে পেয়েছেন সেই তথ্য গুগলে সার্চ করে দেখুন। যদি দেখা যায় এই খবরের বিরুদ্ধেও অনেক খবর আছে তাহলে বিশ্বাস করে ঠকতে যাবেন না। ৭। নিজ প্রজ্ঞা কাজে লাগান, শুরুতেই বিশ্বাস করবেন নাবেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আমরা যে ভুল করি তা হলো কোন রকম যাচাই না করেই বিশ্বাস করে ফেলা। যাচাই না করে অন্ধের মত বিশ্বাস করে ফেলাটা এই মিথ্যা তথ্যের যুগে বড় ধরণের বোকামি। ভালোমতো পড়লেই অনেক তথ্যের সত্যাসত্য যাচাই করে ফেলা যায়। বিশেষ করে পুরো ভিডিও না দেখে, পুরো খবর না পড়ে শুধুমাত্র শিরোনাম দেখে বিশ্বাস করে ফেলা মানে তথ্য সন্ত্রাসের ফাঁদে পরে যাওয়া! ৮। তথ্যসূত্র যাচাই করে দেখুনঅনেক ক্ষেত্রেই মিথ্যা তথ্য হয়তো কোন একটা ফেসবুক পোস্ট বা টুইটারের টুইটকেই তথ্যসূত্র ধরে নেয়। খেয়াল করলেই দেখবেন সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যারা শোনা কথার উপর ভিত্তি করে অনেক কথা ছড়ায়। এই তথ্য কোথা থেকে জানলো তা জিজ্ঞেস করলে প্রায়শই দেখা যাবে কারো থেকে শুনে সে এই কথা বলছে। অনলাইন মাধ্যমেও এই ব্যাপারটা অনেক দেখা যায়। কোন একটা ফেসবুক পোস্ট, ইউটিউব ভিডিও বা টুইট কখনো নির্ভরযোগ্য কোন সূত্র হতে পারেনা। যে লেখা পড়ছো তার তথ্যসূত্রগুলো যাচাই করলে এই লেখার সত্যাসত্য যাচাই করা যাবে। ৯। মজা করে বলা কিনা খেয়াল করুনঅনেক জরুরি বিষয়েও অনলাইনে মজা করে অনেককিছু বলতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে এই রম্য ধাঁচের লেখাগুলো ভালো করে পড়ে তারপর বুঝে সত্য-মিথ্যা বিবেচনা করা প্রয়োজন।এই সতর্কতাগুলো পালনের মাধ্যমে, এই সামান্য সচেতনতার মাধ্যমেই অনেক বিভ্রান্তি এড়িয়ে চলা যায়।
আরও জানুনসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক সময়ই আমাদের বিভিন্ন মানসিক চাপের কারণ হয়ে থাকে। সেসব কারণের মধ্যে সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ সম্পর্কে জেনে নিই চলুন। ১। জীবনে অপূর্ণতার বোধ দেয়াসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা যেসব আপাত নিখুঁত ছবি বা ব্যক্তিদের দেখি সেগুলো যে আসলে নিখুঁত না তা আমরা সকলেই বুঝি। কিন্তু অন্যের অনেক অনেক প্রাপ্তি দেখে আমাদের মধ্যেও নিজেদের জীবন সম্পর্কে, বাহ্যিক সৌন্দর্য সম্পর্কে অপূর্ণতার বোধ চলে আসা অস্বাভাবিক নয়। আমরা এও জানি যে মানুষ সাধারণত নিজের জীবনে ভালো মুহূর্ত ও ঘটনাগুলোই শেয়ার করে, কিন্তু তারপরও নিয়মিত দেখতে দেখতে নিজেদের মধ্যে অবচেতনভাবেই বিভিন্ন ধরণের অপূর্ণতার বোধ চলে আসে। এই অপূর্ণতার বোধটার জন্য আমরা নিজেদের নিয়ে সেভাবে সন্তুষ্ট হতে পারিনা, যার ফলশ্রুতিতে মানসিকভাবে চাপে থাকি। ২। সাইবার বুলিংসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে থাকেন। সাইবার বুলিং এর শিকার হয়েও অনেক সময় এসবের প্রতিকার পান না। এই অবস্থায় হয়রানির শিকার ব্যক্তি কারো সাথে সেসব শেয়ার করতে পারেন না, মানসিক চাপে থাকেন। অনলাইন মাধ্যমে সাইবার বুলিং দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপের বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ৩। আত্মকেন্দ্রিকতাসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অধিক ব্যবহারের ফলাফল হিসেবে আত্মকেন্দ্রিকতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলশ্রুতিতে একজন ব্যক্তি তার বাস্তব জীবনে অন্য সবার সাথে সহজে মিশতে পারেন না। বিভিন্ন মানুষের সাথে সেভাবে যোগাযোগ করতে না পারার কারণে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন এবং এর ফলাফল হিসেবে মানসিক চাপের শিকার হন। ৪। সময় নষ্ট হওয়াখেয়াল করলে দেখবেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সারাদিনের বেশ বড় একটা সময় ব্যয় হয়ে যায়। এই সময় নষ্ট হয়ে যাবার কারণে আমাদের জীবনের অনেক অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সময়মত করা সম্ভব হয় না, সারাদিনে তেমন কিছু না করেও মনে হয় অনেক কিছু করে ফেলেছেন। কিন্তু দিনশেষে সেভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই হয়তো করা হয়ে ওঠেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতি ব্যবহার জনিত এই সমস্যার কারণে অনেক কাজ জমে গেলে স্বভাবতই আমরা মানসিক চাপে ভুগি। এই চাপের কারণে অনেক সময়ই আমাদের অন্যান্যকাজ বিঘ্নিত হয়। ৫। দীর্ঘসূত্রিতাধরুন, অনলাইনে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন, এমন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি নোটিফিকেশন এসে আপনার মনোযোগ ওইদিকে নিয়ে যাওয়ায় যে কাজটি আপনি খুব অল্প সময়েই করতে পারতেন সেই কাজটাই অনেক বেশি সময় জুড়ে করতে হচ্ছে। সেজন্য মানসিক চাপের শিকার হতে পারেন। ৬। ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হওয়াঅনলাইন মাধ্যমের যোগাযোগটা সামনাসামনি না হওয়ায় আমরা অনেক সময়েই অনেকের কথা বুঝতে পারি না। কিংবা অনেক রম্য ধাঁচের বিষয় না বুঝে রেগে যাই যা আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়। আবার সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে অনেক কিছু বোঝার যে সুবিধাটা আমরা পাই তা সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া যায় না। দেখা যায়, সামাজিক মাধ্যমের ইস্যু নিয়ে হয়ত এই দ্বন্দ্বটা আমাদের বাস্তব জীবনেই শুরু হয়ে গেলো। এমন অবস্থাটা মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ৭। অপ্রয়োজনীয় ইস্যুতে উদ্যম নষ্ট করাসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকে সব সময়। এর মধ্যে বেশিরভাগেরই আপনার জীবনে তেমন কোন প্রভাবই হয়তো নেই। কিন্তু এদিকে আপনি এসবের কোন একটি দেখে রেগে গিয়ে এই ইস্যুতে পোস্ট ও কমেন্ট করে অন্যদের সাথে উত্তপ্ত তর্ক করে ফেলেছেন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা সকলেই হয়তো কম-বেশি পরেছি। এসব অপ্রয়োজনীয় বা কম প্রয়োজনীয় বিষয়ে কিছু বলা বা তর্ক করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও সেগুলো আসলে সেভাবে কোন কাজেরই না। আপনার কথা বলায় বা না বলায় এসব ইস্যু কোনভাবেই পরিবর্তন হবে না। কিন্তু আপনি এসব নিয়ে যে তর্ক-বিতর্ক করছেন সেগুলো আপনার মানসিক চাপের কারণ হবে এবং আপনার অন্য কাজকে ব্যহত করে আরও বেশি মানসিক চাপ তৈরি করবে। ৮। অনলাইন প্রতারণাসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সময় আমরা ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক এসব নানান দিক থেকে প্রতারণার শিকার হয়ে থাকি। কখনো কখনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যাওয়া, তথ্য চুরি, ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহারের মত ঘটনায় আমাদের ব্যতিব্যস্ত থাকা লাগে। এ ধরনের পরিস্থিতি স্বভাবতই মানসিক চাপ তৈরি করে।
আরও জানুন