সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মানসিক চাপের সম্ভাব্য কারণসমূহ

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অনেক সময়ই আমাদের বিভিন্ন মানসিক চাপের কারণ হয়ে থাকে। সেসব কারণের মধ্যে সম্ভাব্য কয়েকটি কারণ সম্পর্কে জেনে নিই চলুন।

 ১। জীবনে অপূর্ণতার বোধ দেয়া

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা যেসব আপাত নিখুঁত ছবি বা ব্যক্তিদের দেখি সেগুলো যে আসলে নিখুঁত না তা আমরা সকলেই বুঝি। কিন্তু অন্যের অনেক অনেক প্রাপ্তি দেখে আমাদের মধ্যেও নিজেদের জীবন সম্পর্কে, বাহ্যিক সৌন্দর্য সম্পর্কে অপূর্ণতার বোধ চলে আসা অস্বাভাবিক নয়। আমরা এও জানি যে মানুষ সাধারণত নিজের জীবনে ভালো মুহূর্ত ও ঘটনাগুলোই শেয়ার করে, কিন্তু তারপরও নিয়মিত দেখতে দেখতে নিজেদের মধ্যে অবচেতনভাবেই বিভিন্ন ধরণের অপূর্ণতার বোধ চলে আসে। এই অপূর্ণতার বোধটার জন্য আমরা নিজেদের নিয়ে সেভাবে সন্তুষ্ট হতে পারিনা, যার ফলশ্রুতিতে মানসিকভাবে চাপে থাকি।

 ২। সাইবার বুলিং

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে থাকেন। সাইবার বুলিং এর শিকার হয়েও অনেক সময় এসবের প্রতিকার পান না। এই অবস্থায় হয়রানির শিকার ব্যক্তি কারো সাথে সেসব শেয়ার করতে পারেন না, মানসিক চাপে থাকেন। অনলাইন মাধ্যমে সাইবার বুলিং দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপের বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

 ৩। আত্মকেন্দ্রিকতা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অধিক ব্যবহারের ফলাফল হিসেবে আত্মকেন্দ্রিকতা একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলশ্রুতিতে একজন ব্যক্তি তার বাস্তব জীবনে অন্য সবার সাথে সহজে মিশতে পারেন না। বিভিন্ন মানুষের সাথে সেভাবে যোগাযোগ করতে না পারার কারণে বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন এবং এর ফলাফল হিসেবে মানসিক চাপের শিকার হন।

 ৪। সময় নষ্ট হওয়া

খেয়াল করলে দেখবেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের সারাদিনের বেশ বড় একটা সময় ব্যয় হয়ে যায়। এই সময় নষ্ট হয়ে যাবার কারণে আমাদের জীবনের অনেক অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ সময়মত করা সম্ভব হয় না, সারাদিনে তেমন কিছু না করেও মনে হয় অনেক কিছু করে ফেলেছেন। কিন্তু দিনশেষে সেভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিছুই হয়তো করা হয়ে ওঠেনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অতি ব্যবহার জনিত এই সমস্যার কারণে অনেক কাজ জমে গেলে স্বভাবতই আমরা মানসিক চাপে ভুগি। এই চাপের কারণে অনেক সময়ই আমাদের অন্যান্যকাজ বিঘ্নিত হয়।

 ৫। দীর্ঘসূত্রিতা

ধরুন, অনলাইনে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন, এমন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি নোটিফিকেশন এসে আপনার মনোযোগ ওইদিকে নিয়ে যাওয়ায় যে কাজটি আপনি খুব অল্প সময়েই করতে পারতেন সেই কাজটাই অনেক বেশি সময় জুড়ে করতে হচ্ছে। সেজন্য মানসিক চাপের শিকার হতে পারেন।

 ৬। ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হওয়া

অনলাইন মাধ্যমের যোগাযোগটা সামনাসামনি না হওয়ায় আমরা অনেক সময়েই অনেকের কথা বুঝতে পারি না। কিংবা অনেক রম্য ধাঁচের বিষয় না বুঝে রেগে যাই যা আমাদের নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন দ্বন্দ্বের জন্ম দেয়। আবার সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থেকে অনেক কিছু বোঝার যে সুবিধাটা আমরা পাই তা সামাজিক মাধ্যমে পাওয়া যায় না। দেখা যায়, সামাজিক মাধ্যমের ইস্যু নিয়ে হয়ত এই দ্বন্দ্বটা আমাদের বাস্তব জীবনেই শুরু হয়ে গেলো। এমন অবস্থাটা মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

 

৭। অপ্রয়োজনীয় ইস্যুতে উদ্যম নষ্ট করা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে আলাপ-আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক চলতে থাকে সব সময়। এর মধ্যে বেশিরভাগেরই আপনার জীবনে তেমন কোন প্রভাবই হয়তো নেই। কিন্তু এদিকে আপনি এসবের কোন একটি দেখে রেগে গিয়ে এই ইস্যুতে পোস্ট ও কমেন্ট করে অন্যদের সাথে উত্তপ্ত তর্ক করে ফেলেছেন। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা সকলেই হয়তো কম-বেশি পরেছি। এসব অপ্রয়োজনীয় বা কম প্রয়োজনীয় বিষয়ে কিছু বলা বা তর্ক করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও সেগুলো আসলে সেভাবে কোন কাজেরই না। আপনার কথা বলায় বা না বলায় এসব ইস্যু কোনভাবেই পরিবর্তন হবে না। কিন্তু আপনি এসব নিয়ে যে তর্ক-বিতর্ক করছেন সেগুলো আপনার মানসিক চাপের কারণ হবে এবং আপনার অন্য কাজকে ব্যহত করে আরও বেশি মানসিক চাপ তৈরি করবে।

 ৮। অনলাইন প্রতারণা

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সময় আমরা ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক এসব নানান দিক থেকে প্রতারণার শিকার হয়ে থাকি। কখনো কখনো অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যাওয়া, তথ্য চুরি, ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহারের মত ঘটনায় আমাদের ব্যতিব্যস্ত থাকা লাগে। এ ধরনের পরিস্থিতি স্বভাবতই মানসিক চাপ তৈরি করে।