ইন্টারনেট বা সামাজিক মাধ্যমে তথ্য শেয়ার করার পূর্বে তথ্যের সত্যাসত্য এবং নির্ভরযোগ্যতা যাচাইবাছাই করার প্রয়োজনীয়তা

বাংলাদেশে ভুল তথ্য ছড়িয়ে কাউকে বিপদে ফেলা, কারো সম্মানহানি এমনকি অনেকক্ষেত্রে জীবনের উপরে হুমকিও চলে আসার মত ঘটনা খুব বিরল না। আমাদের সকলেরই কমবেশি এমন অভিজ্ঞতা আছে হয়তো। সাধারণ মানুষ খুব বেশি কিছু না জেনেই শুধুমাত্র একটি ফেসবুক পোস্ট বা ইউটিউবের উস্কানিতেই ক্ষেপে গিয়ে বড় ধরণের অপরাধ করে ফেলে। ফলে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এবং সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। 

আমরা না জেনে না বুঝে অনেক সময় অনলাইন মাধ্যমে অনেক তথ্য বা ঘটনা শেয়ার করি যার মধ্যে অনেক ভুল তথ্য থাকে। আবার অনেকেই আছে ইচ্ছাকৃত-ভাবে বিশৃঙ্খলা তৈরির জন্যে এই কাজগুলো করে থাকে। এবং আমরা নিশ্চিত না হয়েই সেসব তথ্য শেয়ার করে এর প্রচার করে ফেলি। এজন্য অনেকেই নানান অসুবিধায় পড়ে যান, অনেকেরই জানমালের ক্ষতি হয়। সেজন্য যেকোনো তথ্য শেয়ার করার পূর্ব তথ্যটি সঠিক কিনা সে ব্যাপারটি নিশ্চিত হয়ে নেয়া জরুরি। কেননা এধরণের বিশৃঙ্খলার ফলে মানুষে মানুষে বিভেদ তৈরি হয়, বিশ্বাস উঠে যায়, বিপদে কাউকে পাশে পাওয়া যায় না, ফলে সামাজিক বন্ধন আলগা হয়ে পড়ে। সর্বোপরি জাতি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং নানাবিধ সংকট দেখা দেয়। তাই, এই বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

 তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হয়ে নেয়া কেন জরুরী?

১। অনেকেই নানান খারাপ উদ্দেশ্যে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধার করতে চায়।। আমরা না জেনেই যদি তাদের এই তথ্যগুলো শেয়ার করে দেই তাহলে আসলে অপরাধীদের খারাপ চিন্তাটাকে আমরাই বাস্তবে রূপ দেয়ার অংশ হয়ে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে আমরা শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিকেই দোষী করতে পারিনা। আমরাও একইভাবে দোষী।

২। এসব ভুল তথ্য ছড়ানোর অপরাধে আমাদের বিরুদ্ধে যদি কেউ আইনি ব্যবস্থা নেয় তাহলে তার জন্যে আমাদেরই ঝামেলা পোহাতে হবে।

৩। সমাজের নিরাপত্তার এবং আমাদের সকলের শান্তিপূর্ণ জীবনযাপনের জন্যে এই তথ্য-সন্ত্রাস বড় ধরণের হুমকি হয়ে দাড়াতে পারে। বিভিন্ন ধরণের উস্কানি যারা দেয় তারা সুবিধা করতে পারলে প্রতিবেশী ও বন্ধুদের সাথে আমাদের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যাবে যার জন্যে আসলে আমরাও অনেকাংশেই দায়ী।

৪। দেশের সামগ্রিক অবস্থা যদি ভালো না থাকে তাহলে আমাদের নিজেদেরই জীবনযাত্রা আমাদের পরিবার নিরাপদ থাকবে না। সেজন্য এধরণের ভুল তথ্য, উস্কানি যত কম ছড়ায় আমাদের সকলের নিরাপত্তার জন্যেই সেটা ভালো।

 ৫। ভুল তথ্যের ফাঁদে পড়ে  অনেকেই অর্থ-সম্পদ হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। যেমন অনলাইনে ঘরে বসেই শুধুই কিছু সাইটে ক্লিক করে আয়, সহজে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ এসব লোভনীয় তথ্য শেয়ার করে প্রতারণা চক্র মানুষকে ফাঁদে ফেলে। এধরণের কোন কিছু শেয়ারের জন্যে হতে পারে কেউ একজন বিপদে পড়লো। আপনি নিজেও এই ফাঁদ থেকে নিরাপদ নন।

৬। এদেশে অনেকেই বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতি, স্বাস্থ্য-কথা প্রচার করে। সেসব তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে এগুলো ব্যাবহার করতে গেলে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আপনি হয়তো সবার উপকারের কথা ভেবে এসব শেয়ার করেছেন কিন্তু আদতে উপকার নয় ক্ষতি করে ফেলছেন।

৭। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক ধরণের উস্কানি দিয়েই সাধারণ মানুষকে ব্যাবহারের চেষ্টা করা হয়। সেসব থেকে সচেতন না থাকলে বিপদে পড়া লাগবে।

৮। যেকোনো ধরণের ভুল তথ্য, গুজব ছড়ানোর কারণে অনলাইন মাধ্যমের একাউন্ট ব্লক হয়ে যেতে পারে বা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

অনলাইন মাধ্যমে যা দেখবেন তা-ই বিশ্বাস করে নেয়া যাবেনা। তথ্যের প্রাচুর্যের সাথে কিন্তু অনেক তথ্য সঠিক তথ্য বাছাই করে নেয়াটা অনেক কঠিন হয়ে গেছে। সেজন্য কিছু শেয়ারের আগে ভেবেচিন্তে শেয়ার করুন। আপনার বন্ধুতালিকায় থাকা মানুষজনের কাছে আপনার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছে, তারা আপনাকে বিশ্বাস করে। তাই কোন কিছু শেয়ার কিংবা প্রচার করার আগে যাচাই-বাছাই করে নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এর ফলে সবার আগে কেউ যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তারা হলো আপনার বন্ধুবান্ধব- আত্মীয়স্বজন। সুন্দর অনলাইন মাধ্যম থাকলে আমাদের জীবনে এর ভালো প্রভাবই পড়বে। এই ডিজিটাল যুগে তথ্য খুব বড় একটা সম্পদ, একইসাথে বড় একটা অস্ত্রও। আপনি সচেতনভাবে ব্যাবহার করলে সকলেরই উপকার হবে আর না জেনে ব্যবহার করলে এই অস্ত্রে আপনি নিজে এবং আপনার নিকটজনেরা ঘায়েল হতে পারেন।