সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একসাথে অনেক মানুষের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ থাকায় আমাদের রাষ্ট্রে ও সমাজে এই সেক্টরের বেশ বড় একটা প্রভাব আছে। এই মাধ্যম ব্যবহার করে দেশকে উত্তাল করে দেয়া যেমন খুব সহজ কাজ আবার এর সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন নিশ্চিত করাও সম্ভব। সচেতন নাগরিক হিসেবে জাতীয় ও সামাজিক ঐক্য বৃদ্ধিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কীভাবে ব্যবহার করবে?১। একটা সমন্বিত লক্ষ্য স্থির করার ক্ষেত্রেএই দেশে, এই সমাজে অনেক ধরণের মানুষ পাশাপাশি বসবাস করে। পারস্পরিক সহাবস্থানের জন্য একে এপরকে ভালোমতো জানা, বোঝা খুবই জরুরি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের বাস্তব জীবনের অন্য একটা রূপ হওয়ায় এখানেও সব ধরণের মানুষই পারস্পরিক সহাবস্থান করছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে খুব সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়, একে অপরের সাথে চিন্তা ও মতামত শেয়ার করা যায়। এ ধরণের পারস্পরিক যোগাযোগ এমনকি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে একই সাথে হতে পারে বলে এই মাধ্যমের গুরুত্ব তুলনামূলক-ভাবে বেড়ে গেছে। সেক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একে অপরের সম্পর্কে জানার মাধ্যমে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি করা সম্ভব।২। সন্ত্রাস ও অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে একজোট হবার প্লাটফর্মদেশের বিভিন্ন অনিয়ম, অপরাধ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে একজোট হবার জন্য এই সময়ে বেশ জনপ্রিয় একটি মাধ্যম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এখানে অনলাইন ইভেন্ট খোলার মাধ্যমে যেকোনো উদ্দেশ্যে অনেক মানুষ একসাথে হওয়া যায়। যেমন ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন, ইভটিজিংয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে এ ধরণের কিছু আন্দোলন যেখানে সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে একত্র হয়েছিলো।৩। অন্য যেকোনো ভালো উদ্দেশ্যে একত্র হওয়া খুব সহজনানান প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে ব্যক্তি বা সাংগঠনিক পর্যায়ে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা বা শীতকালে শীতবস্ত্র বিতরণসহ বিভিন্ন ধরণের সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একত্র হওয়ার জন্যও খুব ভালো একটি মাধ্যম হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। ৪। নিজেদের দাবি আদায়, অধিকার বঞ্চিত হলে সবাইকে জানানো খুব সহজ।আগে কেউ বঞ্চিত হলে বা কারো দ্বারা নির্যাতিত হলে সারাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছানো কঠিন ছিলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থাকায় যে কেউ বিপদে পরলে, লাঞ্ছিত বা নির্যাতিত হলে খুব সহজেই আশেপাশের সবাইকে জানাতে পারে। নিজস্ব এই মাধ্যমটি ব্যবহার করে খুব সহজেই বৃহত্তর জনসাধারণের কাছে পৌঁছানো যায়। মানুষকে পাশে পাবার পূর্বশর্ত হচ্ছে জনসাধারণের কাছে জানানো। জানানো সহজ হয়ে গেলে সকলকে পাশে পাওয়াও অনেক সহজ। ৫। আপদ-কালীন সময়ে সামগ্রিক যোগাযোগ এবং সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহারঘূর্ণিঝড়, বন্যা, মহামারীসহ বিভিন্ন দুর্যোগের সময়ে সারা দেশের মানুষের মধ্যে জরুরি তথ্য আদান-প্রদান, সাহায্যের আবেদন জানানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার হতে পারে।৬। সামাজিক যোগাযোগ অসত্য ও গুজব ছড়ানো প্রতিহত করাসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সহজে তথ্য প্রচারের সুবিধা কাজে লাগিয়ে অনেকেই বিভিন্ন ধরণের অসত্য ও মিথ্যা তথ্য প্রচার করে। সমাজে এ ধরণের মিথ্যা তথ্য প্রচারের অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব আছে। সেজন্য মিথ্যা তথ্য থেকে সত্য তথ্য আলাদা করে নেবার জন্য সকলের পারস্পরিক যোগাযোগকে কাজে লাগাতে পারলে খুব ভালোমতো গুজব প্রতিহত করা সম্ভব। ৭। রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অনলাইনে সক্রিয়তা চালানো যায়বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী সংগঠন আমাদের দেশ ও সমাজের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকে। এ ধরণের কর্মকাণ্ড প্রতিহত করার জন্যে অনলাইনে বিভিন্ন ধরণের সচেতনতামূলক প্রচারণা করা যায়। এই প্রচারণা থেকে সাধারণ মানুষ সচেতন হতে পারবেন। এবং যেসব অপরাধী এই মাধ্যমটাকে ব্যবহার করে কার্যসিদ্ধি করতে চায় তারা মানুষকে আর ভুল বোঝাতে পারবে না। ৮। কমিউনিটি, কিংবা স্থানীয় পর্যায়ের অথবা আরও বৃহত্তর পরিসরে সকলের জন্য মঙ্গলজনক কোন কাজে মানুষকে একত্রিত করার ক্ষেত্রে। যেমন- গ্রামে একটা লাইব্রেরি স্থাপন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এলাকা নিশ্চিতকরণ, শীত বস্ত্র বিতরণ ইত্যাদি কাজের জন্য সচেতন নাগরিক হিসাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উত্তম ব্যবহার করা যায়।
আরও জানুন