Issue area ডিজিটাল পরিমণ্ডলে অপরাধ ও শাস্তি

বর্তমান সময়ে সাইবার জগত আমাদের অন্য একটি বাস্তবতা হয়ে উঠেছে। এই সাইবার জগতে কাটানো সময়গুলো আমাদের ব্যক্তি জীবনে অনেক বেশিই প্রভাব ফেলছে। ডিজিটাল পরিমণ্ডল আমাদের জীবনযাত্রা যেমন সুবিধাজনক করেছে, তেমনি বিভিন্ন অপরাধকর্মও হয়ে উঠেছে আরো সহজ। আমরা নিজেরাও অনেক সময় না জেনে ও না বুঝে নানান অপরাধের শিকার হচ্ছি, ক্ষেত্রবিশেষে অপরাধও করছি। একটা রাষ্ট্রে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন ও শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কার্যকরী আইন প্রয়োগ জরুরি। তেমনি এই পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বিভিন্ন সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।আমরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নাম সকলে শুনলেও কোন কোন অপরাধ এই আইনের আওতায় পড়ে সেগুলো অনেকেই জানি না। অনলাইনে কোন কোন অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ আছে এবং কোনগুলো বাংলাদেশী আইনে অপরাধ সেসবও অজানাই রয়ে গেছে।এই আইনের আওতায় থাকা গুরুত্বপূর্ণ কিছু অপরাধ এবং এর শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে আমাদের জন্য অনেক ঝামেলা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। সেই সাথে আইন প্রদত্ত নিরাপত্তাসমূহও হবে সহজলভ্য।উল্লেখযোগ্য সাইবার অপরাধ এবং এর শাস্তিসমূহ :১। কোন ডিজিটাল তথ্য ভাণ্ডারে বেআইনি প্রবেশের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৭ বছরের জেল এবং ২৫ লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। ডিজিটাল তথ্য ভাণ্ডারের ক্ষতিসাধনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের জেল এবং ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হতে পারে। এই অপরাধ আবারো করলে অনধিক ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।  ২। অনলাইনে স্প্যাম মেসেজ (জাঙ্ক মেসেজ) শেয়ার করা, হ্যাকিং, কম্পিউটার ভাইরাস ছড়ানো এবং অনলাইনে আর্থিক জালিয়াতি করলে ৬ মাস থেকে ৩ বছরের জেল এবং ২ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। এই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে শাস্তির পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।৩। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও এসব জাতীয় বিষয়ের অবমাননা করলে বা তাতে মদদ দিলে সর্বোচ্চ ১০ বছরের জেল এবং ১ কোটি টাকা জরিমানা হতে পারে। এই অপরাধ একাধিকবার করলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।৪। অনলাইন মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক বা অন্য কোন সুবিধা নেয়ার জন্য প্রতারণা এবং মিথ্যা পরিচয় বা ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা এই দুই ক্ষেত্রেই অনধিক ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। একই অপরাধ আবারও করলে শাস্তির মাত্রা বেড়ে ৭ বছরের জেল এবং ১০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে।৫। অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, ব্যবহার যেমন – নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, ফোন নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, ফিঙ্গার প্রিন্ট, ব্যাংক একাউন্ট নম্বর, ডিএনএ প্রোফাইল বা অন্য যেকোনো পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য ব্যবহার করা একটি সাইবার অপরাধ। এই অপরাধে অনধিক ৫ বছরের জেল এবং ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হতে পারে। একই অপরাধ আবারো করলে শাস্তির পরিমাণ বেড়ে ৭ বছরের জেল এবং ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে।৬। রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা এবং জনগণ বা এর কোনো অংশের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করার জন্য কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে বৈধ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে বা বেআইনিভাবে অনুপ্রবেশ করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ১ কোটি টাকা জরিমানা করা হতে পারে। এই অপরাধে আবারও জড়িত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড হতে পারে।৭। কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীর অনুভূতিতে আঘাত করে ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে এমন তথ্য প্রচার বা মতামত প্রদান করলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। অপরাধের পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে শাস্তি বেড়ে ১০ বছরের জেল এবং ২০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে।৮। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করে বা করায়, যা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় তাহলে অনধিক ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। এই অপরাধ পুনরাবৃত্তি করলে শাস্তির পরিমাণ বেড়ে গিয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আওতায় থাকা অপরাধ এবং এর শাস্তির পরিমাণ জানাই যথেষ্ট নয়। এই আইনের মাধ্যমে সঠিক নাগরিক অধিকার আদায় করে নিয়ে ব্যক্তিজীবন ও ভার্চুয়াল জীবন সবখানেই নিরাপদ থাকার নিশ্চয়তা না পেলে মানুষের আস্থা কমে যাবে দিন দিন। এই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং তা মেনে চলার প্রক্রিয়াটি শুরু হোক আইন সম্পর্কে জানার মাধ্যমেই।  

আরও জানুন
Issue area কপিরাইট সংরক্ষণে করণীয়

ধরা যাক, আপনি বাজারে গিয়ে একটি টাকাও খরচ না করে সংসারের দরকারী সকল পণ্য নিয়ে বাড়িতে ফিরে এলেন। ব্যাপারটি ক্রেতা হিসেবে আপনার জন্য খুবই সুবিধাজনক হতে পারে। কিন্তু একজন বিক্রেতার পক্ষে এটি মোটেও সুখকর নয় যে ক্রেতা তার দোকান থেকে কোন টাকা না দিয়েই সকল পণ্য নিয়ে যাচ্ছে। এর সাথে আরেকটি উদাহরণ যোগ করা যাক। আমরা বিদেশি লেখকদের বই কিনে পড়ে থাকি। কিন্তু এই বইগুলো খুবই ব্যয়বহুল বিধায় আমরা তুলনামূলক অনেক কম দামে বইটির নকল কিনে নিয়ে আসি।প্রথম উদাহরণটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং বাস্তবে তা সম্ভব নয়। কিন্তু দ্বিতীয় উদাহরণটি আমাদের বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কিত এবং হরহামেশাই এটি ঘটছে। মেধাসম্পদের ক্ষেত্রে এভাবে একজন কোন একটা পণ্য ক্রয় করে সেই পণ্যকে কপি করে অনেকের কাছে বিক্রি করে থাকে। নতুন করে এই বিক্রির কোন অংশ যিনি আসল মালিক তিনি পান না। বরং যিনি সেটার কপি বা পাইরেসি করছেন তিনি পেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে পাইরেসি বন্ধে কার্যকর কপিরাইট আইন এই মেধাসম্পদের নিরাপত্তা দেয়।মেধাসম্পদ, পাইরেসি এবং কপিরাইট আইন কী?একজন কবি যে কবিতা লেখেন, শিল্পী যে গান করেন, ছবি আঁকেন বা ভাষ্কর্য নির্মাণ করেন, চলচ্চিত্রকার/নাট্যকার যে সিনেমা/নাটক তৈরি করেন সেসবই হচ্ছে তার ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি বা মেধাসম্পদ। মেধাসম্পদের বেআইনি কপি করে যদি কেউ তা বিক্রি বা ব্যবহার করে তাহলে এটি হবে পাইরেসি। এই পাইরেসি বন্ধ এবং মেধাসম্পদের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা আইনই হচ্ছে কপিরাইট আইন।কোন বস্তুগত জিনিসের যেমন মালিকানা থাকে, তেমনই প্রতিভা ও মেধা দিয়ে তৈরি সম্পদেরও মালিকানা থাকে। কপিরাইট মানে হচ্ছে মেধাসম্পদের উপর মালিকানার স্বীকৃতি। কোন মেধাসম্পদের ব্যবহার, বিপণন বা ক্রয়-বিক্রয়ের উপর যিনি তা সৃষ্টি করলেন তার অধিকার সুরক্ষিত করে এই কপিরাইট আইন। বাংলাদেশে কপিরাইট আইন আছে, কিন্তু সে আইন মানার চর্চা ও প্রয়োগ না থাকায় অনেকেই এই বিষয়ে জানেন না। এই বিষয়ে তাই আমাদের জানা, মানা এবং চর্চা করা প্রয়োজন। কপিরাইট আইন ভঙ্গের কারণ ও ক্ষতিকপিরাইট সংরক্ষণে বাংলাদেশে আইন থাকলেও নেই এই আইনের কার্যকর প্রয়োগ। এর মূল কারণ সম্ভবত ব্যবহারকারী এবং  উৎপাদক এই দুই দলের কারোরই কপিরাইট আইন ও আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা না থাকা। সেই সাথে সাংস্কৃতিক কিছু কারণও হয়তো দায়ী। যেমন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় বা জীবনে চলার পথে আমরা অন্যের কোন মেধাসম্পদ থেকে কিছু নিলে বা সরাসরি ব্যবহার করলে সেজন্য মূল মালিককে কৃতিত্ব দিতে অভ্যস্ত নই। আবার নিম্ন আয়ের দেশ হওয়ায় সকলেই মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে বিনোদন বা বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতির জন্যে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে সাধারণত আগ্রহী নন। আবার ডিজিটাল প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে নতুন নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা নতুন বিপণন ব্যবস্থা তৈরি করতে না পারাও বড় একটি কারণ।  সর্বোপরি বলা যায়, এই আইন সম্পর্কে ভালোভাবে জানা এবং আইনের প্রয়োগ থাকলে মেধাসম্পদের নিরাপত্তা দেয়া অনেক সহজ হয়ে যাবে। কপিরাইট আইন ভঙ্গের কারণে সৃজনশীল মানুষদের বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হচ্ছে এবং এই ক্ষতি আমাদের শিল্প-সাহিত্য-চলচ্চিত্র ইত্যাদির বিকাশের অন্তরায়। একজন লেখক বই প্রকাশ করার পর সেই বই যদি কপি করে কেউ মুনাফা করে ফেলে বা তা বিনামূল্যে সবার কাছে ছড়িয়ে দেয় তাহলে লেখক আর নতুন কোন বই লিখে বিক্রির আশাই হয়তো করবেন না। এভাবেই চলচ্চিত্র নির্মাতা, সঙ্গীত শিল্পী বা এ ধরনের যে কোন শিল্পই পাইরেসির কারণে ক্ষতির শিকার হচ্ছে।বাংলাদেশে কপিরাইট আইন ও কপিরাইট সংরক্ষণ করার উপায় কী?বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালে প্রথম কপিরাইট আইন করা হয়। এরপর ২০০০ সাল এবং ২০০৫ সালে এই আইন পরিবর্তন করা হয়। সর্বশেষ পরিমার্জন করা হয় ২০১৮ সালে।বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদগুলো পেটেন্ট অফিস থেকে নিজ নামে পেটেন্ট করে নিতে হয়। পেটেন্ট করা মানে হচ্ছে সরকারি রেজিস্ট্রেশন করে নিজ নামে এই সম্পদের সামগ্রিক অধিকারের স্বীকৃতি নেয়া। পরে যদি অন্য কেউ এটি ব্যবহার করে তাহলে সে মূল নির্মাতাকে কৃতিত্ব দিবে এবং ক্ষেত্রবিশেষে মুনাফার ভাগ দিবে।কপিরাইট সংরক্ষণে এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে --      যেকোন মেধাসম্পদ তৈরির পর তা সরকারি কপিরাইট অফিসে রেজিস্ট্রেশন বা তালিকাভুক্ত করতে হবে। এর মাধ্যমে যিনি তা তৈরি করেছেন তার নামে সম্পদটির স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত হয় এবং এর ভিত্তিতে ভবিষ্যতে কপিরাইট দাবি করা যাবে। তাই রেজিস্ট্রেশন না করলে কোন মেধাসম্পদের কপিরাইট দাবি করে এর পাইরেসির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া যাবে না।-      পাইরেসি হলে উপযুক্ত প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ করতে হবে।-      সবার মধ্যে কপিরাইটের ব্যাপারে যথাযথ সচেতনতা তৈরি করতে হবে।-      সকল ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ কঠোর করতে হবে। 

আরও জানুন
Issue area বিদ্যমান আইনানুসারে অনলাইনে ক্ষতির শিকার হলে করণীয়

ডিজিটাল পরিমণ্ডলে সতর্ক থাকার পরেও বিভিন্ন ক্ষতির শিকার হয়ে যাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। এত এত ওয়েবসাইট, অ্যাপ, লিঙ্কের মধ্যে কোনটা আসল আর কোনটা প্রতারণা তা বোঝা বেশ কঠিন। অনলাইনে যৌন হয়রানি, একাউন্ট হ্যাকিং, অশালীন আচরণ, ছবি এডিট করে অশ্লীল প্রচারণা, ছদ্মবেশে সম্পর্কের ফাঁদে ফেলার মত ব্যাপারগুলো সমাজে অহরহই ঘটছে। ডিজিটাল মাধ্যমে চাইলে কারো ব্যাপারে নেতিবাচকভাবে প্রচারণা করা সম্ভব। এত সহজে যে ব্যাপারগুলো অপরাধীরা ঘটাচ্ছে সেগুলো আইনের আওতায় না আসার কারণে দিন দিন এর পরিমাণ বেড়েই চলেছে। তাছাড়া বিকাশ/নগদ জালিয়াতির কারণে, লটারি জেতার কথা শুনে বা অমুক ওয়েবসাইটে এতগুলো ক্লিক করলে এত টাকা উপার্জনের প্রলোভনে ব্যক্তিগত তথ্য এবং টাকাপয়সা হারাচ্ছেন অনেকেই। এভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের বেশিরভাগই সামাজিকভাবে অপমানিত হবার ভয়ে অথবা নিজেই অবহেলা করে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অপরাধীকে শাস্তির আওতায় আনেন না। যার ফলে পার পেয়ে গিয়ে ঐ অপরাধী আবারো নতুন করে অন্য কারো ক্ষতি করছে। অনলাইনে অপরাধের শিকার হলে আমরা কীভাবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা  নিতে পারি সেই বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হলো –১। সময়ক্ষেপণ না করে ঘনিষ্ঠ কাউকে জানান:যখনই বুঝতে পারবেন যে আপনি সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েছেন তখনই ঘনিষ্ঠ কাউকে বিস্তারিত জানান। সে হতে পারে এমন কেউ যে আপনার পরিস্থিতি বুঝবে এবং আপনাকে দোষারোপ না করে সমস্যাটা সমাধানের চেষ্টা করবে।২। প্রমাণ রাখুন:অপরাধের যেসব প্রমাণ আপনার হাতে আছে সেসব স্ক্রিনশট নিয়ে এবং সম্ভব হলে ইউআরএল সহ সেইভ করে রাখুন। কারণ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে এগুলো আপনার কাজে লাগবে। সম্ভব হলে বিশ্বাসযোগ্য কাউকে এই প্রমাণগুলো পাঠিয়ে রাখুন।৩। অপরাধীকে ব্লক করে দিন:অপরাধীর সাথে সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। ফোনে কল ও মেসেজ ব্লক করে দিন এবং সেই সাথে অন্যান্য মাধ্যমগুলোতেও ব্লক করে দিন।৪। আপনার ব্যবহৃত ডিজিটাল প্লাটফর্মের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করুন:যদি আপনার মনে হয় যে আপনার অ্যাকাউন্ট অনলাইনে ফিশিং, হ্যাকিংয়ের শিকার হয়েছে তাহলে সাথে সাথেই আপনার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলুন। টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি দ্বিতীয় একটি মাধ্যম, যেমন আপনার ফোনে এসএমএস ও ইমেইলে নিশ্চিত হয়েই অ্যাকাউন্টে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার ব্যবস্থা চালু করুন। এক্ষেত্রে কেউ আপনার পাসওয়ার্ড পেয়ে গেলেও অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে গেলে আপনার কাছে মেইল বা মেসেজ চলে আসবে।৫। জিডি করে রাখুন:নিকটস্থ থানায় অপরাধের বিবরণসহ একটি জিডি করে রাখুন। তাহলে পুলিশের কাছে এই অপরাধের একটা রেকর্ড থাকবে।৬। ভিক্টিমের পাশে থাকুন:আপনার পরিবারের বা বন্ধুদের মধ্য কেউ সাইবার অপরাধের শিকার হলে তাকে দোষারোপ না করে তার পাশে থাকুন। দোষারোপ করলে বরং আপনাকে এই ব্যাপারে বিস্তারিত নাও জানাতে পারে। সেক্ষেত্রে আইনী সহায়তা নেয়া কঠিন হয়ে যাবে।৭। দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করুন:যিনি অপরাধের শিকার হন তার পক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া কষ্টসাধ্য। কেননা মানসিক আঘাত ও অস্থিরতা কাটিয়ে উঠে সহজে ব্যবস্থা নেয়া খুবই কঠিন। তারপরেও যত দ্রুত সম্ভব আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন ভিক্টিমের কাছের লোক যারা এই ব্যাপারটা জানেন।৮। সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে যুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করুন:সরাসরি থানায় গিয়ে মামলা করা যেতে পারে, তবে পুলিশের যেসব ইউনিট সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে তাদের কাছে গেলে ফলাফল পাবার সম্ভাবনা বেশি। যেমন - নারীদের জন্য আছে পুলিশের ফেসবুক পেইজ ‘Police Cyber Support for Women PCSW’ (লিঙ্ক https://www.facebook.com/PCSW.PHQ)। এছাড়া সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করে ডিএমপি-র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের ‘সাইবার ক্রাইম ইউনিট’। অনলাইনে মানুষ ছোটখাট কিছু অপরাধ করে, যেগুলো তারা সরাসরি হয়তো করতো না।। এর পিছনে একটি কারণ সম্ভবত এইখানে মানুষের সাথে মুখোমুখি ঝামেলায় জড়ানোর সম্ভাবনা নেই। ভার্চুয়াল জগত তাদের মুখোশের মত কাজ করে। ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলে অনেক অপরাধই এভাবে ঘটে চলেছে। অনেকেই এগুলো আইনের আওতায় আনেন না। এমনকি এসবের শিকার হয়েও অনেক ক্ষেত্রে আইনী ব্যবস্থায় না গিয়ে ভিন্নভাবে সমাধানের চিন্তা করেন। ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় এবং নতুন অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ হয়।  

আরও জানুন
Issue area যে কোন প্রকার সাইবার ক্রাইম যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানোর পদ্ধতি, যোগাযোগের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর

সাইবার ক্রাইম কী? কম্পিউটার, নেটওয়ার্ক বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে বেআইনীভাবে করা অপরাধকে সাইবার ক্রাইম বলা হয়। ধরুন, আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ সাইবার ক্রাইমের শিকার হলেন। এখন আপনি অপরাধীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছেন। কিন্তু কীভাবে নিবেন? আমাদের দেশে সাইবার অপরাধের শিকার বেশিরভাগ ভিক্টিমই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনে না বা আনতে পারে না। নারী-পুরুষ উভয়েরই সাইবার সিকিউরিটি আইন সম্পর্কে জানাশোনা কম থাকায় এবং আইনের সহযোগিতা নেবার মাধ্যম না জানায় অভিযোগ করছে না বেশিরভাগই। ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায় এবং নতুন করে এ ধরনের অপরাধ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। তাই এর প্রতিকারে অপরাধ সংঘটনের পর এ বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানো দরকার। চলুন দেখা যাক, কেউ অপরাধের শিকার হলে কীভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে পারবেন। কোথায় অভিযোগ করবেন? অভিযোগ জানানোর জন্য নিম্নোক্ত উপায়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন –  প্রাথমিকভাবে আপনার নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করতে পারেন।  ‘Police Cyber Support for Women PCSW’ নামক ফেসবুক পেইজে (https://www.facebook.com/PCSW.PHQ) মেসেজ দিয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন।  cybersupport.women@police.gov.bd বা cyberhelp@dmp.gov.bd - এই দুইটি ঠিকানায় ইমেইল পাঠিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন।  পুলিশ সদর দফতরের ০১৩২০০০০৮৮৮ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারেন।  হটলাইন নম্বর ৯৯৯ এ ফোন করেও অভিযোগ করা যাবে।  সরাসরি কথা বলার প্রয়োজনবোধ করলে চলে আসতে পারেন ডিএমপি-র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের Cyber Crime Unit অফিসে। কথা বলতে পারেন দায়িত্বরত কর্মকর্তার সাথে এই নাম্বারে - ০১৭৬৯৬৯১৫২২। ঠিকানা : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স, ৩৬, শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী স্মরণী, রমনা, ঢাকা - ১০০০।কীভাবে অভিযোগ করবেন?সাইবার অপরাধের শিকার হলে যত দ্রুত সম্ভব অভিযোগ জানানো উচিত। অভিযোগ জানানোর জন্য নিম্নের প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারেন -অভিযোগ করার ক্ষেত্রে আপনার অভিযোগের স্বপক্ষে কিছু প্রমাণাদি প্রয়োজন। যেমন - সংশ্লিষ্ট আলামতের স্ক্রীনশট, লিংক, অডিও/ভিডিও ফাইল অথবা রিলেটেড ডকুমেন্টস। স্ক্রীনশট সংগ্রহের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যেন Address Bar - এর URL টি দৃশ্যমান হয়। ই-মেইল এর মাধ্যমে অভিযোগ জানাতে চাইলে এসব প্রমাণাদি সংযুক্ত (অ্যাটাচ) করে আপলোড করতে পারেন। প্রয়োজনে Cyber Crime Unit - এর অফিসারদের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন যা আপনার আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সহায়ক হতে পারে। 

আরও জানুন