আমরা কম বেশি সকলেই নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরা দেখেছি, তাই না? সেই জালটি দেখতে কেমন? দেখে মনে হয় জালের এক প্রান্ত আরেক প্রান্তের সাথে যুক্ত। ঠিক এইরকম এক ধরনের জাল হলো ইন্টারনেট যা সারা বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে; তবে এক প্রান্তের সাথে আরেক প্রান্ত যুক্ত। শুধু তফাত হলো, আমরা এই জালটি নিজের চোখে দেখতে পাচ্ছি না। এই জালের মাধ্যমেই বিশ্বের এক প্রান্তের তথ্য নিমিষের মধ্যেই আরেক প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। এখন তাহলে আমরা এখানে ইন্টারনেট সম্পর্কে কিছু ধারণা নিয়ে নিব। ইন্টারনেট হল কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেটে লক্ষ লক্ষ একাডেমিক, ব্যবসায়িক, এবং সরকারী নেটওয়ার্ক রয়েছে, যেগুলো একসাথে বিভিন্ন ধরনের তথ্য বহন করে এবং পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। এটি এক ধরনের বিশাল নেটওয়ার্ক যা সারা বিশ্বের কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনগুলোকে সংযুক্ত করে। মানুষ ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যেকোনো জায়গা থেকে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে এবং যোগাযোগ করতে পারে। ইন্টারনেটের সংক্ষিপ্ত রূপ হল 'নেট'। এটি এমন এক ধরনের বিশ্বব্যাপী সিস্টেম যার মাধ্যমে যেকোনো একটি কম্পিউটারের ব্যবহারকারীর অনুমতি থাকলে, অন্য কোনো কম্পিউটার থেকে তথ্য পেতে পারে। ইন্টারনেট বিভিন্ন ধরনের পরিষেবা প্রদান করে। কিছু উদাহরণ নিচে উল্লেখ করা হলো: ওয়েব(Web)- কোটি কোটি ওয়েবপেজ এর একটি সংগ্রহ যা আপনি একটি ওয়েব ব্রাউজার (যেমন- গুগল ক্রোম) দিয়ে দেখতে পারেন। ইমেল – অনলাইনে বার্তা পাঠানো এবং গ্রহণ করার সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসমূহ – কিছু ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ (যেমন- ফেসবুক, হোয়াটস অ্যাপ) যা লোকেদের মন্তব্য, ফটো এবং ভিডিও শেয়ার করতে দেয়; সেগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। অনলাইন গেমিং – এমন কিছু গেম যা মানুষকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে একে অপরের সাথে এবং বিপক্ষে খেলতে দেয়। সফ্টওয়্যার আপডেট - অপারেটিং সিস্টেম এবং অ্যাপ্লিকেশন আপডেটগুলো সাধারণত ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করা যায়। এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রায় যেকোনো তথ্য অ্যাক্সেস করা, বিশ্বের অন্য কারো সাথে যোগাযোগ করা এবং আরও অনেক কিছু করা সম্ভব। আপনি ইন্টারনেটের সাথে একটি কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইস সংযুক্ত করে এই সব করতে পারেন, যাকে অনলাইনে যাওয়াও বলা হয়। যখন কেউ বলে একটি কম্পিউটার অনলাইন বা কেউ একজন অনলাইনে আছে তার মানে ঐ কম্পিউটার বা ঐ ব্যক্তি ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত আছে।এই মুহুর্তে আপনি হয়তো ভাবছেন, ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে? চলুন এজন্য এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে একটু আলোচনা করা যাক। এটা উপলব্ধি করা গুরুত্বপূর্ণ যে ইন্টারনেট হল একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক/সংযোগ ব্যবস্থা। এই সংযোগ তারের মাধ্যমে বা তারবিহীন উভয় হতে পারে। তারের মাধ্যমে সংযোগের ক্ষেত্রে তামার টেলিফোন তার, টিভি তার এবং ফাইবার অপটিক তার অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। সাধারণত সংযোগের জন্যই এই তার ব্যবহার করা হয়। আবার তার ছাড়া ওয়াইফাই, মোবাইল নেটওয়ার্ক ইত্যাদি ব্যবস্থায়ও ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া যায়। আপনি যখন একটি ওয়েবসাইট পরিদর্শন করেন, তখন আপনার কম্পিউটার এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একটি সার্ভারে একটি অনুরোধ পাঠায়। একটি সার্ভার হলো যেখানে ওয়েবসাইটগুলি সংরক্ষণ করা হয় এবং এটি অনেকটা আপনার কম্পিউটারের হার্ড ড্রাইভের মতো কাজ করে৷ অনুরোধ আসার পরে, সার্ভার ওয়েবসাইটটি পুনরুদ্ধার করে এবং সঠিক ডেটা আপনার কম্পিউটারে ফেরত পাঠায়। বেশ আশ্চর্যজনকভাবে যে এই সব মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে থাকে। এই ভাবেই বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ইন্টারনেট বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকে।
আরও জানুনআমাদের মধ্যে বেশিরভাগই ওয়েব এবং ইন্টারনেট শব্দ দুইটি একই জিনিস বোঝাতে ব্যবহার করে থাকি তবে এই দুইটির কাজ আসলে বেশ আলাদা। একটা উদাহরণ দিলে বুঝে যাবেন পার্থক্যটা মূলত কোন জায়গাটাতে। ধরুন, ইন্টারনেট একটি রাস্তা যা বিভিন্ন শহরগুলোকে একত্রে সংযুক্ত করে। তাহলে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব হলো সেই জিনিসগুলোর (যেমন- বাড়ি, দোকান, বাজার) সমন্বয়ে গঠিত যেগুলো আপনি রাস্তায় চলতে দেখতে পাচ্ছেন। আরও একটু ব্যাখ্যা করলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে। ইন্টারনেট হল একটি বিশাল নেটওয়ার্ক যা সারা বিশ্বের কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে। মানুষ ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যেকোনো জায়গা থেকে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে এবং যোগাযোগ করতে পারে। অন্যদিকে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (সংক্ষেপে 'www' বা 'ওয়েব') হল কম্পিউটারের নেটওয়ার্কে পাওয়া ওয়েব পেজগুলোর একটি সংগ্রহ। আপনার ওয়েব ব্রাউজার ইন্টারনেট ব্যবহার করে ওয়েব অ্যাক্সেস করতে পারবে । এই পার্থক্যটি দেখার আরেকটি উপায় হল; ইন্টারনেট হল মূলত একটি অবকাঠামো; যেখানে ওয়েব সেই অবকাঠামোর উপরে পরিবেশিত হয়। অর্থাৎ, ইন্টারনেট হল কোটি কোটি সার্ভার, কম্পিউটার এবং অন্যান্য হার্ডওয়্যার ডিভাইসের একটি বিশ্বব্যাপী নেটওয়ার্ক। একটি বৈধ IP ঠিকানা ব্যবহার করে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হলে প্রতিটি ডিভাইস অন্য যেকোনো ডিভাইসের সাথে সংযোগ করতে পারে। এবং, ওয়েব, যা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জন্য সংক্ষিপ্তরূপ, ইন্টারনেটে তথ্য শেয়ার করার একটি উপায়। কোটি কোটি সংযুক্ত ডিজিটাল নথির সমন্বয়ে ওয়েব গঠিত হয়ে থাকে এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্রাউজার যেমন- গুগল ক্রোম, সাফারি, মাইক্রোসফ্ট এজ, ফায়ারফক্স ইত্যাদির মাধ্যমে আমরা ওয়েবের তথ্যসমূহে এক্সেস পেতে পারি। ইন্টারনেটকে একটি লাইব্রেরি হিসেবে ভাবুন। বই, ম্যাগাজিন, সংবাদপত্র, ডিভিডি, অডিওবুক এবং অন্যান্য মিডিয়াগুলোকে ওয়েবসাইট হিসাবে ভাবুন। এমন কোটি কোটি ওয়েবসাইটের সমন্বয়ে ওয়েব গঠিত।ইন্টারনেট এবং ওয়েব উভয়ই অনন্য উদ্দেশ্যে কাজ করে কিন্তু জনসাধারণের কাছে তথ্য, বিনোদন এবং অন্যান্য পরিষেবা প্রদানের জন্য হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে।সরল এবং সহজ ভাষায়, ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে অ্যাক্সেসের অনুমতি দেয়। এটি ছাড়া, আমাদের হাজার হাজার ওয়েবসাইট অ্যাক্সেস করার কোন উপায় নেই। বেশিরভাগ অনলাইন প্রয়োজনের জন্য ওয়েব ব্যবহার করা সবচেয়ে সহজ। প্রত্যেকটি ওয়েবসাইট একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য পরিবেশন করে।
আরও জানুন