ভুয়া তথ্য শনাক্তরণ ও রিপোর্ট করার পদ্ধতি

দ্বাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মারিয়া ২০১৮ সালের এক বিকেলে ফেসবুকে এক বন্ধুর পোস্ট দেখে জানতে পারে যে, ‘মি. বিন’ -খ্যাত জনপ্রিয় ব্রিটিশ অভিনেতা রোয়ান অ্যাটকিনসন মারা গিয়েছেন। প্রিয় তারকার মৃত্যুতে শোকাহত মারিয়া তথ্যটির সত্যতা যাচাই না করেই, গুগল থেকে রোয়ান অ্যাটকিনসনের কিছু ছবি সংগ্রহ করে এবং এর সাথে কিছু আবেগঘন কথা সংযুক্ত করে রোয়ান অ্যাটকিনসন স্মরণে একটি পোস্ট করে। পোস্টটি মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় এবং কয়েকঘন্টার মধ্যেই দেশ-বিদেশের লক্ষাধিক মানুষের কাছে পোস্টটি পৌছে যায়। এবং ঘটনাক্রমে তা পৌঁছায় রোয়ান অ্যাটকিনসনের কাছে ও।

বিব্রত রোয়ান অ্যাটকিনসন সকলের ভুল ভাঙাতে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে আসেন। এতে করে ভুয়া তথ্যের অসত্যতা প্রকাশ পায়। মারিয়া উপলব্ধি করে যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভুয়া তথ্য সনাক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। এসব ভুয়া তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট করার সঠিক পদ্ধতি জানা ও প্রয়োগ করা গেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া তথ্যের বিস্তার হ্রাস করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি এর ফলে অনাকাঙ্খিত অনেক সমস্যা থেকেও বাঁচা যাবে।

মারিয়ার মতো এধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়তে চাইলে তোমাকে ভুয়া তথ্য সনাক্তকরণের উপায় গুলো জানতে হবে। যেমন-

 ১। উৎসটি যাচাই করা- ফেসবুকে বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভুয়া তথ্যগুলির শিরোনাম তোমাকে আকৃষ্ট করতে পারে। তবে বিভিন্ন রঙচঙা শিরোনামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই তা শেয়ার করে ছড়িয়ে দেওয়ার আগে অবশ্যই উৎসটি যাচাই করে নিতে হবে।

২। নিশ্চিতকরণের জন্য গুগলের সাহায্য নেওয়া- কোনো তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার পূর্বে তার সত্যতা নিশ্চিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এক্ষেত্রে, তোমরা গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারবে।

৩। প্রমাণাদি যাচাই-বাছাইকরণ- বিভিন্ন প্রমাণাদি যাচাই করার মাধ্যমে তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সূত্র, সংবাদ মাধ্যম এবং তথ্যের উৎস যাচাই করার মাধ্যমে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। 

৪। বিরতি নাও – ইন্টারনেট বা অনলাইনে কোনো তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া, তথ্যটি সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানানো কিংবা মনোভাব প্রকাশ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ হলো ‘একটু বিরতি নেওয়া’। কোনো বিষয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে একটু থেমে চিন্তা ভাবনা গুছিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি রক্ষা করা সহজ হয়। এতে করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করার জন্যও কিছুটা সময় পাওয়া যায়।

উল্লেখিত পদক্ষেপ গুলির সাহায্যে তথ্যের সত্যতা যাচাই-বাছাইকরণের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য সনাক্ত করণ সম্ভব। এর পাশাপাশি কোনো ভুয়া তথ্য সামনে আসলে তা যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট করা একজন সচেতন নাগরিকের বৈশিষ্ট্য। নিচের পদক্ষেপগুলির সাহায্যে ভুয়া তথ্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট রিপোর্ট করা যায়। পদক্ষেপগুলি পর্যায়ক্রমে অনুসরণ করতে হবে। যেমন-

১। তুমি যে পোস্ট, ছবি, বা তথ্যকে মিথ্যা হিসাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে চাও সেটির ডান পাশের ( … ) তিনফোটা দেওয়া চিহ্নে ক্লিক করতে হবে।

২। এবার তোমার স্ক্রিনে একটি ডায়লগ পৃষ্ঠা আসবে যেখানে পোস্ট, ছবি, বা তথ্যটি সেভ করা, লুকিয়ে (হাইড) ফেলা, রিপোর্ট করা ইত্যাদি অপশন আসবে।

৩। তোমাকে ‘রিপোর্ট পোস্ট’ অপশনটি বাছাই করতে হবে।

৪। ফলে তোমার স্ক্রিনে নতুন আরেকটি ডায়লগ পৃষ্ঠা আসবে যেখানে রিপোর্ট করার অপশন হিসেবে বিভিন্ন ক্যাটাগরি দেওয়া থাকবে।

৫। প্রদত্ত ক্যাটাগরিসমূহের মধ্যে ‘মিথ্যা তথ্য’ ক্যাটাগরিটি বাছাই করতে হবে।

৬। ফলে তোমার স্ক্রিনে নতুন আরেকটি ডায়লগ পৃষ্ঠা আসবে। সেখানে ‘সম্পন্ন করুন’ অপশনটি বাছাই করার মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে।