সেতু আক্তার একজন গার্মেন্টস কর্মী। গার্মেন্টসে কাজ করেই তাকে তাকে তার সংসার চালাতে হয়। বাবা অসুস্থ হওয়ার কারণে তাকে নিজেই অর্থ উপার্জনের জন্য রাত দিন কষ্ট করতে হয়। সকালে বাসে করে গার্মেন্টস যাওয়ার পথে ফেসবুক ব্যবহার করছিলেন। হঠাৎ করে একটা খবর দেখে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। দেখলেন যে, নতুন এক ভাইরাস আক্রমণের কারণে তাদের গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সাথে সাথে সংবাদটি তার একাউন্টে শেয়ার করে দিলেন। তার কিছু ফেসবুক বন্ধুও সাথে সাথে সংবাদটি শেয়ার করে দিলেন।
গার্মেন্টসে পৌঁছানোর পর দেখলেন সবাই বেশ অস্থির হয়ে আছে, কেউ চাচ্ছেন না গার্মেন্টস বন্ধ হোক। প্রায় বিকাল পর্যন্ত তারা ওভাবেই বসে থাকলেন। এমন সময় গার্মেন্টসের মালিক আসলেন, এসে বললেন গার্মেন্টস বন্ধ হওয়ার কোনো খবরই সত্য নয়। এমন কোনো ধরনের খবর তার কাছে আসেনি; অর্থাৎ গার্মেন্টস খোলা থাকবে।
সেতু বুঝতে পারলেন, কোনো খবরই আসলে যাচাই বাছাই না করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করা উচিৎ নয়। সে খুবই বিব্রতবোধ করলো।
সেতুর মতো এ ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে না পড়তে চাইলে আপনাকে ভুয়া তথ্য এবং ওয়েবসাইট সনাক্তকরণের উপায় গুলো জানতে হবে। যেমন-
১। উৎসটি যাচাই করা: ফেসবুকে বা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভুয়া তথ্যগুলির শিরোনাম আপনাকে আকৃষ্ট করতে পারে। তবে বিভিন্ন রঙচঙা শিরোনামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার সাথে সাথেই তা শেয়ার করে ছড়িয়ে দেওয়ার আগে অবশ্যই উৎসটি যাচাই করে নিতে হবে।
২। নিশ্চিতকরণের জন্য গুগলের সাহায্য নেওয়া: কোনো তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার পূর্বে তার সত্যতা নিশ্চিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ। এক্ষেত্রে, গুগল বা অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারবেন।
৩। প্রমাণাদি যাচাই-বাছাইকরণ: তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করণের পরে প্রাপ্ত প্রমাণাদি যাচাই করার মাধ্যমে তথ্যটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য সূত্র, সংবাদ মাধ্যম এবং তথ্যের উৎস যাচাই করার মাধ্যমে এ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
৪। ইউআরএল-টি ভালো করে চেক করে নেওয়া: সাধারণত কোন ভুয়া ওয়েবসাইট থেকে বা প্রতিষ্ঠিত কোন ওয়েব সাইটের কাছাকাছি নামে নতুন ওয়েব সাইট করে সেখান থেকে ফেক নিউজ প্রকাশ করা হয়। তাই কোন খবর সন্দেহজনক মনে হলে ওয়েব সাইটটির বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। বিশ্বের ওয়েবসাইট ঠিকানার বিষয়াদি দেখভাল করে থাকে আইক্যান (ICANN)। কোন ওয়েবসাইট নিয়ে সন্দেহ হলে, আইক্যানের ডোমেইন অনুসন্ধান পাতায় গিয়ে তাদের ওয়েবসাইট ঠিকানাটি লিখবেন। https://whois.icann.org/en এই পাতায় গিয়ে দেখতে পাবেন, ওয়েবসাইটটি কবে তৈরি হয়েছে, কে তৈরি করেছে। সাধারণত ভুয়া ওয়েব সাইটের নির্মাতাদের পরিচয় লুকানো থাকে এবং অসম্পূর্ণ তথ্য থাকে।
ভুয়া তথ্য শেয়ার বা ভুয়া ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য শুধু যে বিভ্রান্তি সৃষ্ট করে তা নয়, বিভিন্ন ভুল তথ্যের কারণে কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মারাত্নক ক্ষতিও সাধন হতে পারে। এজন্য আমরা ভুয়া তথ্য এবং ওয়েবসাইট সনাক্তকরণের উপায় গুলো অবলম্বন করে সঠিক তথ্যটি ব্যবহার করবো।