তথ্য চুরি

তুমি হয়তো তোমার বাবা-মা বা আশেপাশের নিকটজনদের ফোনে দেখবে বিভিন্ন ধরনের পণ্য বা সেবার অফার সংক্রান্ত নানা রকম মেসেজ, মেইল বা ফোন কল আসছে। তারা কাউকে এসব তথ্য দেয়নি তবু প্রতিদিন এমন অনেক অনেক অপরিচিত প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে কল, মেসজ বা মেইল আসে। আবার কারো ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি ইত্যাদি ব্যবহার করেই অন্য কেউ ফেসবুকে বা অন্য কোথাও প্রোফাইল তৈরি করছে এবং এর ফলে যার তথ্য বা ছবি ব্যবহার করছে তাকে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। নিজের ফোন নাম্বার, ইমেইল এড্রেস, ছবিসহ এসব ব্যক্তিগত তথ্য কীভাবে অন্যদের হাতে গেল? মূলত তারা বিভিন্ন উৎস থেকে এগুলো সংগ্রহ করেছে। এইসব উৎসগুলি বেশিরভাগই আমাদের ডিজিটাল ডিভাইস বা ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমে কোনো না কোনো ব্যবহারকারীর অসাবধানতাবশত উন্মুক্ত করে রাখা ব্যক্তিগত তথ্য। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে ক্ষতিকর ও দুষ্টু মানুষের সংখ্যাও কম নয়। কখনো ভেবে দেখেছো, তোমার কোনো গোপন বা ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন- নাম, ঠিকানা, ফেসবুক-ইউটিউবের পাসওয়ার্ড, কিংবা বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন এর মতো তথ্য যদি এধরনের কারো কাছে পৌঁছায় তাহলে কেমন বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে পারো? 

ইন্টারনেট ব্যবহারকালীন সময়ে তুমি যে কয়েকটি সম্ভাব্য বিপদের সম্মুখীন হতে পারো তার মধ্যে ‘তথ্য চুরি’ অন্যতম। বিভিন্নভাবেই ইন্টারনেট থেকে তোমার তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে। যেমন:

১. অরক্ষিত ওয়েবসাইট বা পাবলিক Wi-Fi, যেগুলি যে কেউ ব্যবহার করতে পারে, সেগুলিতে তুমি কোনো ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করলে তা চুরি হয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

২. তোমার মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার চুরি হয়ে গেলে এসব ডিভাইস থেকেও ব্যক্তিগত তথ্য, আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য ইত্যাদি চুরি হতে পারে।

৩. আবার দুর্বল পাসওয়ার্ডের কারণে কেউ তা অনুমান করতে পারলে বা পাসওয়ার্ড কোন উপায়ে পেয়ে গেলেও তথ্য চুরি হতে পারে। 

৪. ইন্টারনেট তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানের অসাধু কর্মচারী, যার কাছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের অ্যাক্সেস আছে, এমন মানুষের মাধ্যমে ও তোমার ইন্টারনেটে দেওয়া তথ্য চুরি হয়ে যেতে পারে।

৫. তোমার পরিচিত কেউ হ্যাকিং এর শিকার হলে, তার ডিভাইসের মাধ্যমে তুমি বা তোমার পরিবারের বা কর্মসংস্থানের অন্যান্য কর্মীদের তথ্য ও চুরি হতে পারে।

৬. যেকোনো পরিস্থিতিতে থার্ড পার্টি অ্যাপ (থার্ড পার্টি অ্যাপ হলো এমন অ্যাপ বা সফটওয়্যার যা মুলত মুল সার্ভিস প্রোভাইডার এর বাইরে অন্য কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে) ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। কারণ, থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহারকারীদের তথ্য চুরি হয়ে যাওয়া বা বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

মনে রাখবে, সাইবার অপরাধীরা বিভিন্ন অবৈধ কাজে তোমার তথ্য ব্যবহার করতে পারে। এমনকি ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে টাকা চুরি, তোমার  নামে ক্রেডিট কার্ড অথবা  ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে বা আরও বড় কোন অপরাধ করতে পারে। এর ফলে আর্থিক বা সামাজিক ক্ষতিসহ বিভিন্ন অপরাধের দায়ভারও পড়তে পারে তোমারই ওপর। কাজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করার সময় ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান ও সংরক্ষণে যত্নবান হওয়া একান্তই জরুরি।