শিশুর জন্য ডিভাইস ব্যবহার

শিশুর জন্য ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম কানুন অবশ্যই মেনে চলতে হবে। কোন বয়স থেকে শিশুর ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করা উচিত, কোন বয়সে সর্বোচ্চ কতক্ষণ সময় ডিজিটাল ডিভাইসের সাথে কাটানো উচিত ইত্যাদি বিষয়গুলো জেনে তারপর শিশুর হাতে ডিজিটাল ডিভাইস দেওয়া যেতে পারে। 

 

●  মূলত প্রথম ৩ বছর পর্যন্ত শিশুর জন্য ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকা ভাল।

●  ডিভাইসের মাধ্যমে নয় শিশুকে মুখে ছড়া গান গল্প শোনানো তার বড় হয়ে ওঠার জন্য বেশি

●  ৩-৮ বছরের শিশুর জন্য মাঝে মাঝে ১০-১৫ মিনিটের জন্য বড়দের তত্বাবধানে গান, ছড়া, গল্প বা শিশু উপযোগী বিষয়গুলো দেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সারাদিনে ৩-৫ বছরের শিশুর জন্য সবোর্চ্চ ৪০ মিনিটের মধ্যে স্ক্রিনিং (মোবাইল, টিভি, ট্যাব, কম্পিউটার বা এ ধরনের যে কোন ডিভাইস হতে পারে) এর সময়সীমা রাখতে হবে।

●   ছোট শিশুর জন্য যে কোন কিছু স্ক্রিনে দেখার সময় সেটা থামিয়ে শিশুর সাথে ঐ বিষয় নিয়ে কিছুক্ষণ পর পরই কথা বলা ভাল। সেটা দ্বিমুখী যোগাযোগ নিশ্চিত করে।

● ৫-৮ বছরের শিশুর যদি অনলাইনে ক্লাস করতে হয়, খেয়াল রাখা দরকার একটানা সবোর্চ্চ ৪০ মিনিটের বেশি সে যেন স্ক্রিনের সামনে না থাকে। প্রয়োজনে ১০-১৫ মিনিট বিরতির পর আবার ৪০ মিনিট থাকতে পারবে। সারাদিনে এই সময়সীমা ২ ঘন্টার মধ্যে থাকা ভাল।

●  যে কোন শিশুর জন্য প্রথম থেকে ডিভাইস ব্যবহার একটি নিয়মের মধ্যে রাখতে হবে। বড়দের সান্নিধ্যে ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে।

● শিশু বড়দের দেখেই শিখবে। বড়দেরও ডিভাইস ব্যবহারে সময়সীমা মেনে চলা ভাল এবং শিশুকে যখন সময় দেবেন তখন মনোযোগ ধরে রেখে তাকেই সময় দিতে হবে।সেসময় ডিভাইস ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

মোবাইল, কম্পিউটারের সাধারণ ব্যবহার

মোবাইল ও কম্পিউটার ছাড়া এই যুগে চলার কথা চিন্তাও করা যায় না। কিন্তু একটা সময় এই ডিভাইস দুটি এত সহজলভ্য ছিলো না। তবে বর্তমানে মোবাইল এবং কম্পিউটার আমাদের জীবনে বেশ বড় পরিবর্তন এনেছে। এই দুটি ডিভাইসের সাধারণ ব্যবহার সম্পর্কে শিশুদের কিছু ধারণা এমনিতেও হয়ে যায়, যেমন- এগুলো দিয়ে কার্টুন, নাটক, সিনেমা এসব দেখা যায়, ছবি তোলা যায়, ফোনে কথা বলা যায়। তারপরও শিশুদের বিকাশের সাথে সাথে তাকে এসব ডিভাইসের নতুন নতুন ব্যবহারের সাথে পরিচিত করে দেয়া উচিত। চলুন জেনে নেয়া যাক এ দুটি ডিভাইসের কিছু সাধারণ ব্যবহার যেগুলো শিশুকে শুরুতে জানিয়ে নিতে পারেন -

১। ডিভাইস খোলা- বন্ধ করা

গঠনের দিক দিয়ে কম্পিউটার দুই ধরনের ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং ল্যাপটপ কম্পিউটার। ডেস্কটপ কম্পিউটার অন করার জন্য বৈদ্যুতিক সংযোগ দিতে হবে। সংযোগ দেয়ার পরে সিপিইউ এ থাকা পাওয়ার বাটন অন করতে হবে। তারপর মনিটরের পাওয়ার অন করলেই কম্পিউটারের স্ক্রিন অন হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই কম্পিউটারটি অন হয়ে যাবে।

ল্যাপটপ কম্পিউটারের ক্ষেত্রে বৈদ্যুতিক সংযোগ ছাড়াও যদি ল্যাপটপে চার্জ থাকে তাহলে পাওয়ার বাটন চেপে ধরলে কম্পিউটার অন হয়ে যাবে।

দুই ধরনের কম্পিউটারের ক্ষেত্রেই স্টার্ট আইকনে ক্লিক করে তারপর পাওয়ার আইকনে ক্লিক করলে তিনটি অপশন আসবে শাট ডাউন, স্লিপ এবং রিস্টার্ট। এখানের শাট ডাউন অপশনটি নির্বাচন করলে কিছুক্ষণের মধ্যেই কম্পিউটারটি বন্ধ হয়ে যাবে।

ফোনের পাশ দেয়া পাওয়ার বাটনে চাপ দিলে ফোন অন হয়ে যাবে। আবার এই পাওয়ার বাটনে চাপ দিলে বন্ধ করার অপশন আসে। এর মধ্যে রিস্টার্ট এবং টার্ন অফ ফোন এই দুইটি অপশন দেখতে পাবেন। টার্নড অফ ফোন অপশনে ক্লিক করলে ফোন অফ হয়ে যাবে।

২। রিস্টার্ট

কম্পিউটার রিস্টার্ট করার জন্য কম্পিউটার স্ক্রিনের বাম পাশে নিচের কোনায় স্টার্ট আইকনে ক্লিক করে পাওয়ার আইকনে ক্লিক করতে হবে। পাওয়ার আইকনে ক্লিক করার পর স্লিপ, শাট ডাউন এবং রিস্টার্ট এই তিনটা অপশন আসবে। রিস্টার্ট অপশন নির্বাচন করলেই আপনার কম্পিউটার রিস্টার্ট হয়ে যাবে। রিস্টার্ট মানে হচ্ছে কম্পিউটার বন্ধ হয়ে আবার চালু হওয়া। এই বাটনে ক্লিক করলে কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে অফ হয়ে তারপর আবার অন হয়ে যাবে।

ফোন রিস্টার্ট দেয়ার জন্য ফোনের পাওয়ার বাটনে চেপে ধরে রাখতে হয়। রিস্টার্ট/রিবুট অপশন আসলে সেটাতে ক্লিক করলে ফোন অটোমেটিক অফ হয়ে আবার অন হয়ে যাবে। অনেক সময় নতুন সফটওয়্যার ইন্সটল করার পরে, ডিভাইস হ্যাং হয়ে গেলে ডিভাইসকে রিস্টার্ট করার প্রয়োজন হয়।

৩। চার্জ দেওয়া

কম্পিউটার ও ফোন চার্জ দেয়ার জন্য চার্জারকে বৈদ্যুতিক সংযোগের সাথে যুক্ত করে তারপর সে চার্জারকে ডিভাইসের যথাস্থানে যুক্ত করতে হবে। চার্জ হচ্ছে কিনা তা নোটিফিকেশনের মধ্যে জানিয়ে দেয়া হবে। আবার চার্জার যুক্ত করার স্থানের পাশে বাতি জ্বলে উঠলে বুঝতে পারবেন যে চার্জ হচ্ছে। ব্যাটারি কত পার্সেন্ট চার্জ হল তা ডিভাইসের স্ক্রিনের ব্যাটারি আইকনে দেখতে পারবেন।

৪। ডিজিটাল- ডিভাইস-এর যত্ন করে ব্যবহার করা

ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে খুব যত্নের সাথে নাড়াচাড়া করতে হবে। এগুলো ব্যবহার করতে না জানলে সহজেই নষ্ট করে দিতে পারেন। সেজন্য এই ডিভাইসগুলো যত্ন করে ব্যবহার করা জরুরি।

-  খেয়াল করবেন এসব ডিভাইসের উপরে যাতে পানি না পরে বা এই ডিভাইস যেন পানিতে না ভিজে।

-    ধুলাবালি থেকে যথাসম্ভব দূরে রাখবেন

-    নিয়মিত ফুল চার্জ করে ব্যবহার করুন

৫। চার্জিং- ক্লিনিং-এর ক্ষেত্রে সতর্কতা

এসব ডিভাইস চার্জিং ও পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা মেনে চলা উচিত। সেগুলো হলো –

-   ভালো মানের চার্জার সম্ভব হলে অরিজিনাল চার্জার দিয়ে চার্জ দিতে হবে

-   যে পোর্টে বা মাল্টি-প্লাগে চার্জ দিচ্ছেন সেটাতে শর্ট সার্কিট জনিত সমস্যা আছে কিনা সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। নাহলে ডিভাইসের ক্ষতি হতে পারে।

-    ক্লিনিংয়ের ক্ষেত্রে ডিভাইসে যাতে কোন রকম তরল প্রবেশ না করে সেদিকে খেয়াল রাখবে।

শিশুদের ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদেরকে ডিভাইসের ব্যবহারবিধি পালনে এবং ডিভাইসের যত্ন নিতে উৎসাহিত করুন। আপনি নিজে মানলে এবং শিশুকে সময়ে সময়ে অবহিত করলে তারাও আপনাকে অনুসরণ করবে।