বর্তমানে ইন্টারনেটের ব্যবহার মানুষের জীবনে একটি নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যাপার। সহজে যোগাযোগ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্কিং এমনকি জীবিকার মত ব্যাপার গুলোর জন্যও অনলাইনের উপর নির্ভরশীল। এছাড়াও শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা ও দেখা দিচ্ছে। স্কুল কলেজের বিভিন্ন কাজ জমা দেওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর (যেমন – হোয়াটস্ অ্যাপ, ভাইবার ,মেসেঞ্জার ) ব্যবহার বাড়ছে। এজন্য আপনাদের ভালভাবে জানতে হবে এই মাধ্যমে কী করা উচিত এবং কী করা উচিত না। জেনে বুঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলো ব্যবহার করলে অনেক ঝামেলা এড়িয়ে চলা যায়। করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় গুলো -
১। শ্রদ্ধাশীল হোন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কারো সাথে আলাপের ক্ষেত্রে আমরা হয়তো সামনাসামনি আলাপ করছি না, কিন্তু প্রতিটা অনলাইন একাউন্ট পিছনে একজন মানুষই আছে এবং আমাদের মনে রাখা উচিত, আমরা সকলেই ভিন্ন ভিন্ন মানসিক অবস্থা, ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ ধারণ করি। এজন্য পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রেখে যোগাযোগ করুন।
২। আপনার মন্তব্য কী বোঝাচ্ছে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
বাস্তব জগতে কথা বলার সময় যোগাযোগের বড় একটা অংশ হিসেবে কাজ করে বাচনভঙ্গি। অনেক কিছুই আমরা মুখে না বললেও বাচনভঙ্গি দেখে বুঝে নেই। আবার সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে কেউ কিছু না বুঝলে পুনরায় তা বুঝে নেওয়ার সুযোগ থাকে ৷ কিন্তু অনলাইনে কোন একটা লেখা বা কথায় এই বাড়তি ব্যাপার গুলো থাকেনা। সেজন্য চেষ্টা করা উচিত যাতে বোধগম্য ভাষায় বলা যায়। নাহলে আপনার কথা ভুল বুঝে কেউ কষ্ট পেতে পারেন বা রেগে যেতে পারেন।
৩। ঠাট্টা বিদ্রূপ করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
সামনাসামনি যোগাযোগ না হবার কারণে রম্য বা মজা করে বলা কথা অনেকে বুঝতে পারেন না। আবার অনেক সময় ইমোটিকন বা ‘LOL’ এই ধরণের কোড দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা বললেও আসলে রম্য বোঝানো হয়, যা অনেকেই বুঝতে পারেন না। সেজন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মজা করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকা উচিত। আপনি যা লিখছেন তা আবারো ভালোমতো পড়ে দেখে নিন যে আপনার মজা করে লিখা কথাটি সবাই আসলেই বুঝবে কিনা।
৪। অপরিচিত ব্যক্তির থেকে আপনার তথ্য নিরাপদ রাখুন।
অনলাইনের প্রাইভেসি সেটিংস(Privacy Settings) এর মাধ্যমে আপনি নিজের তথ্য গোপন রাখতে পারবেন। ব্যক্তিগত তথ্য (যেকোনো পাসওয়ার্ড, বাসার ঠিকানা, ছবি ইত্যাদি) পাবলিক করে রাখলে; অর্থাৎ সবার সাথে শেয়ার করলে বিভিন্ন ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে পারেন। যেমন- আপনি যদি আপনার নিজের ছবি পাবলিক করে শেয়ার করেন সেক্ষেত্রে অপরিচিত কেউ চাইলে আপনার ছবিটি নিয়ে ফেক একাউন্ট খুলতে পারে। সেজন্য আগেভাগেই সতর্ক থাকা ভালো।
৫।ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট এবং গ্রুপের আমন্ত্রণ গ্রহণের আগে ভালোমতো দেখে নিন।
সামাজিক মাধ্যমে নতুন কোন রিকুয়েস্ট আসলে সে ব্যক্তির একাউন্ট ভালোমতো দেখে নিন যে এই ব্যক্তিকে আপনি চেনেন কিনা, বা তাকে ফ্রেন্ড লিস্টে রাখতে আপনি স্বাছন্দ্যবোধ করবেন কিনা। গ্রুপ বা পেইজের আমন্ত্রণ গুলোর ব্যাপারে ও খেয়াল রাখবেন যে এগুলো আপনার প্রয়োজনীয় কিনা। যদি না হয় তাহলে গ্রহণ না করাই ভালো।
৬। কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড ভালোমতো পড়ে এবং বুঝে নিন।
অনলাইন ওয়েবসাইট ও অ্যাপের নিয়ম বা কমিউনিটি সট্যান্ডার্ড ভালো করে জেনে নিন। বেশিরভাগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর নিজস্ব কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ড বা গ্রাহকদের অনলাইন আচরণের নির্দেশনা থাকে। নির্দেশনা গুলো ভালোমতো পড়ে সে অনুযায়ী আচরণ প্রদর্শন করবেন।
৭। সহানুভূতিশীল হোন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন ধরনের মানুষের মুখোমুখি হবেন। মনে রাখবেন, সবাই ভালোমতো জেনে বুঝে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তা কিন্তু না। সেক্ষেত্রে কেউ যদি অযাচিত কোন কথা বলে বা লেখে তাহলে তাদেরকে ভালোভাবে বোঝান। তারপরও না বুঝলে ওই সাইটের নিয়ম মেনে রিপোর্ট করুন বা ব্যবস্থা নিন। খুব বেশি আক্রমণাত্মক বা অপমানজনক আচরণ করবেন না।
৮। কারো বিরক্তির কারণ হচ্ছেন কিনা খেয়াল রাখুন।
ব্যক্তিগত যোগাযোগ কিংবা সাধারণ যোগাযোগের ক্ষেত্রে কারো বিরক্তি উদ্রেক করছেন কিনা খেয়াল করুন। ব্যক্তিগত মেসেজ দেয়ার ক্ষেত্রে সম্মান রেখে কথা বলুন এবং মেসেজ দেয়ার আগে প্রয়োজনে প্রাপকের অনুমতি নিয়ে নিন। মেসেঞ্জার বা অন্য কোন মাধ্যমে সরাসরি কল করার আগে অনুমতি নিয়ে নিন। অপ্রয়োজনে ফোন দিবেন না।
৯। অফিসিয়াল বা ফরমাল যোগাযোগে ইমেইল ব্যবহার করুন।
অফিসিয়াল বা ফরমাল কাজের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের চেয়ে ইমেইল বেশি উপযুক্ত মাধ্যম। তাই এ ধরনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোর পরিবর্তে ইমেইল ব্যবহার করা উচিত।
১০। তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
আমরা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে আমরা নানা রকম তথ্য পেয়ে থাকি। সব তথ্যই কিন্তু সঠিক নয়। অনেকেই মজা করার জন্য, আবার কেউ কারো ক্ষতি সাধনের জন্য, আবার কেউ কেউ নিশ্চিত না হয়েই বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করে থাকে। এজন্য আমরা তথ্যের সত্যতা যাচাই না করে কোনো সামাজিক মাধ্যমেই তা শেয়ার করব না। এতে করে অনেকের মধ্যেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে।