সাইবার বুলিং এর ক্ষতিকর প্রভাব, এর থেকে বিরত থাকা ও প্রতিরোধে করণীয়

ব্যক্তিগত তথ্য, নিজস্ব বিশ্বাস কিংবা স্পর্শকাতর ঘটনা ইত্যাদি ব্যবহার করে কাউকে হেনস্তা, বিব্রত বা অপমানিত করাকে বুলিং বলে। আর মোবাইল ফোন, কম্পিউটার এবং ট্যাবলেটের মতো ডিজিটাল ডিভাইসের সাহায্যে যদি বুলিং সংঘটিত হয় তখন তাকে আমরা সাইবার বুলিং বলি। সাইবার বুলিং ক্ষুদে বার্তা, চ্যাটিং বা কথোপকথন এবং অ্যাপের মাধ্যমে হতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, ফোরাম বা গেমিং-এর মাধ্যমেও সাইবার বুলিং ঘটতে পারে। ছোট বড় সকল বয়সী মানুষে ওপর সাইবার বুলিং নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সহপাঠীদের দ্বারা সাইবার বুলিং এর শিকার হয়ে শিশু শিক্ষার্থীরা যেমন স্কুলে যেতে চায় না ঠিক তেমনি ভাবে প্রাপ্ত বয়স্করাও যদি কর্মস্থলে তাদের সহকর্মীদের দ্বারা সাইবার বুলিং এর শিকার হন তাদেরও কাজের প্রতি অনীহা চলে আসে।

বিভিন্ন ধরণের কাজকে সাইবার বুলিং এর অন্তর্গত বিবেচনা করা যায়। যেমন – ইন্টারনেট ব্যবহার করে কারো সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলা, ক্ষতিকারক মন্তব্য করা, মিথ্যা তথ্য ছড়ানো ইত্যাদি। এতে যার সম্বন্ধে তথ্যটি শেয়ার করা হচ্ছে সে বিব্রত বা অপমানিত বোধ করতে পারে। আবার বিখ্যাত খেলোয়াড়, অভিনেতা, ব্যবসায়ী কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইনফ্লুয়েন্সারদের পোস্টে অনেক সময়েই আমরা আক্রমণাত্মক মন্তব্য দেখে থাকি। এগুলো এক ধরণের সাইবার বুলিং। অনেক সময়েই কোনো কাছের বন্ধুর ছবিতে বা পোস্টে তার কোনো ব্যক্তিগত ও স্পর্শকাতর মুহূর্তের ছবি, ঘটনা ইত্যাদি পোস্ট করে বন্ধুটিকে বিব্রত করে ফেলা হয়। এটিও এক ধরণের সাইবার বুলিং। আমরাও নিজের অজান্তেই অনেক সময়ে ঠাট্টার ছলে সাইবার বুলিং এর সাথে জড়িয়ে পড়ি। এজন্য এই বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে।

 সাইবার বুলিং এর বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –

১। আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া- সাধারণত সাইবার বুলিং এর শিকার হওয়া ব্যক্তি আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগে থাকে।

২। সামাজিক আচরণে পরিবর্তন- বন্ধুদের সাথে মেলামেশা বা সামাজিক অনুষ্ঠান এড়িয়ে চলে।

৩। বিষন্নতা- সাইবার বুলিং এর শিকার ব্যক্তি সামাজিক মেলামেশা থেকে বিরত থেকে একাকিত্বকে আলিঙ্গন করে। ফলে বিষন্ন মনোভাবাপন্ন হয়ে থাকে। 

৪। হীনমন্যতা- বিভিন্ন কাজের প্রতি অনীহা বা হীনমন্যতা দেখা দেয়। ফলে কাজে মনোনিবেশ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

৫। মাদকাসক্তি- বিষন্নতার কারণে অনেক সময়ে অসৎ সঙ্গীদের সাথে মেলামেশা বাড়ে। যার ফলে মাদকাসক্ত হয়ে পড়তে পারে।

৬। আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।

সাইবার বুলিং থেকে বিরত থাকার জন্য এবং এটি প্রতিরোধে করণীয় কাজগুলো নিম্নরূপ-

সাইবার বুলিং দুই ভাবে প্রতিরোধ করা যায়। যেমন-

১। প্রযুক্তি ব্যবহার করে

২। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে - নিজে এবং আশেপাশে সবাইকে সাইবার বুলিং করতে নিরুৎসাহিত করে।

প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাইবার বুলিং প্রতিরোধ করার উপায়-

- প্রথমত সম্পূর্ণ অপরিচিত কোন ব্যক্তির সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যুক্ত হবার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এরপর, যদি নিজের সাথে কখনো সাইবার বুলিং এর ঘটনা ঘটলে স্পষ্ট করে নিষেধ করতে হবে যাতে উত্যক্তকারী নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পান। যদি এরপরেও তিনি সংশোধন না হন, তবে তাকে আনফলো কিংবা আনফ্রেণ্ড করে দেয়া যায়।   

- ব্লক/রিপোর্ট করে- ইন্টারনেটে কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে সাইবার বুলিং এর শিকার হলে সাথে সাথে সেই অ্যাকাউন্টকে ব্লক করে দিয়ে অথবা যথাযথ কর্তৃপক্ষ (যেমন ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জন্য ফেসবুক এর সিকিউরিটি টিম) এর নিকট অ্যাকাউন্টটি রিপোর্ট করে দেওয়ার মাধ্যমে সাইবার বুলিং প্রতিরোধ করা যায়।

- কোনো মাধ্যম থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে হিংসাত্মক অথবা বিব্রতকর তথ্য, ঘটনা ইত্যাদি ছড়িয়ে দিলে তাকে ব্লক বা রিপোর্ট করার পাশাপাশি মিউট বা রেস্ট্রিক্ট করলে সেই অ্যাকাউন্ট বা মাধ্যম থেকে কোনো তথ্য আপনার কাছে আর আসবে না।

-উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার বা ইন্সটাগ্রাম যেকোনো কমেন্ট বা মন্তব্যকে যাচাই করে থাকে। যাচাইকৃত তথ্যকে আধুনিক প্রযুক্তি (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) যদি হিংসাত্মক হিসেবে শনাক্ত করে তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই মুছে দেওয়া হয়।

 সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সাইবার বুলিং প্রতিরোধ করার উপায়-

- শ্রেণীকক্ষে শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের সাথে সাইবার বুলিং এর ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে সাইবার বুলিং সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সাইবার বুলিং না করার মনোভাব তৈরি হবে।

-   পারিবারিক পর্যায়ে সাইবার বুলিং সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে পিতামাতা অথবা বড়রা ছোটদের সাথে সাইবার বুলিং এর বিভিন্ন প্রভাব, সাইবার বুলিং এর শিকার হলে করণীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করলে ব্যক্তি পর্যায়ে সাইবার বুলিং বিরোধী সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

-  সামাজিকভাবে সাইবার বুলিং প্রতিরোধ করতে সাইবার বুলিং সংক্রান্ত সভা-সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অজান্তেই অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কীভাবে সাইবার বুলিং এর সাথে জড়িয়ে পড়ছে তা জানানোর পাশাপাশি এর প্রভাবে সমাজের কী ক্ষতি হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। এর ফলে একটি সাইবার বুলিং বিরোধী সচেতন প্রজন্ম তৈরি করা সম্ভব হবে।