প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা পদ্ধতি (আনফলো করা, আনইনস্টল করা, আনফ্রেন্ড করা, ব্লক করা, রিপোর্ট করা, ইত্যাদি

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারও বৃদ্ধি পাচ্ছে, তথ্যের আধিক্য দেখা যাচ্ছে। অনেক তথ্যের মধ্যে থেকে সঠিক তথ্য খুঁজে বের করা যেমন কঠিন হয়ে যাচ্ছে, অন্য দিকে কিছু ভুল তথ্য মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার মানুষকে অনেক কাছাকাছি এনেছে, যোগাযোগের জন্য একটি সহজ পথ তৈরি করে দিয়েছে। কিন্তু সকলেই এই অনলাইন মাধ্যমগুলোর নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে চলে সঠিকভাবে ব্যবহার করছে ব্যপারটি এমন নয়। এমন মানুষের সংখ্যাও কম নয় যারা অন্য মানুষের জন্য বিব্রতকর ও ক্ষতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে থাকেন।

মনে রাখবেন, সবসময় এই জায়গাটিতে যে আপনার অভিজ্ঞতা সুখকর হবে ব্যাপারটি কিন্তু এমন না। আপনাকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে যে যেকোনো সময় আপনাকে বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারে। আর এই ধরনের পরিস্থিতিগুলো সামলানোর জন্য আপনি দুই ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। যথা:

(১) প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা

(২) প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা

চলুন আজকে তাহলে আমরা কিছু পরিচিত ঘটনাগুলোর মাধ্যমে জেনে নিই কীভাবে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়লে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

 ঘটনা-১

মোঃ সাজ্জাদ হোসেন ছোট একটা গ্রামের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ব্যবসায়ের কাজে তাকে তার পাশের গ্রামের মানুষের সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখতে হয়। এজন্য তার বন্ধুর পরামর্শে একটি ফেসবুকএকাউন্ট তৈরি করলেন এবং তার পরিচিত মানুষগুলোকে বন্ধু তালিকায় যোগ করলেন। একদিন তার কাছে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে একটি মেসেজ আসলো যেখানে তাকে তার ব্যবসা বন্ধ করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণ পর তিনি খেয়াল করলেন সেই ব্যক্তিই তার সম্পর্কে আরো কিছু বাজে কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন।

এমন অবস্থায় মোঃ সাজ্জাদ হোসেন কী করতে পারেন?

এমন অবস্থায় তিনি সে ব্যক্তির প্রোফাইলে গিয়ে তার পোস্টটি রিপোর্ট (report) করবেন। রিপোর্ট করার জন্য তার পোস্টটির উপরের ডানদিকে কোনায় তিনটি বিন্দু নির্বাচন করবেন। এর পরে Find Support or Report post অপশনে ক্লিক করে আপনি কেন Facebook পোস্ট বা ফটো রিপোর্ট করছেন তার কারণ নির্বাচন করে রিপোর্ট সাবমিট করবেন। পরবর্তীতে এমন মেসেজ বা বার্তা না পাওয়ার জন্য ব্যক্তিটির প্রোফাইলে গিয়ে Block অপশনে ক্লিক করে তাকে ব্লক করে দিতে পারেন। এতে করে মোঃ সাজ্জাদ হোসেনকে কখনোই সেই ব্যক্তি তার একাউন্টের মাধ্যমে যোগাযোগ করতে পারবে না।  

 ঘটনা-২

 বাবুল মিয়া তার স্ত্রীর সাথে শহরে বসবাস করেন। তার ছেলে দেশের বাইরে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করার জন্য তার মোবাইল ডিভাইসে হোয়াটস্‌ অ্যাপ ডাউনলোড করে রাখেন। কয়েকদিনের মাথায়ই খেয়াল করলেন কিছু অপরিচিত নাম্বার থেকে প্রায়ই কিছু ওয়েবসাইটের লিংকসহ মেসেজ আসতে থাকে। একদিন কৌতুহলবশত তিনি মেসেজ বা বার্তাটি পড়তে চাইলেন এবং দেখলেন সেখানে লেখা আছে “এই লিংকে প্রবেশ করলেই ৫ মিনিটের মধ্যে আপনার মোবাইল নাম্বারে ৫০ টাকা রিচার্জ“ হয়ে যাবে। তিনি সাথে সাথে লিংকে প্রবেশ করলে দেখলেন মোবাইল ফোনে নতুন একটা অ্যাপ ইনস্টল হয়ে গেছে এবং কোনো রিচার্জই তার ফোনে আসে নাই।

 এমন অবস্থায় বাবুল মিয়া কী করতে পারেন?

এমন অবস্থায় তাকে যত দ্রুত সম্ভব নতুন অ্যাপটি আনইনস্টল করতে হবে। আনইনস্টল করার জন্য অ্যাপটি ওপেন করে অ্যাপটি হালকা করে চেপে ধরে রাখলে আনইনস্টল (Uninstall) করার অপশনটি আসবে । সেখানে অপশনটি ক্লিক করলেই অ্যাপটি আনইনস্টল হয়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, অনেক সময়ে অনেকেই উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর অ্যাপ বা ওয়েবসাইট তৈরি করে বাজারে নিয়ে আসে। এসকল পরিষেবা গ্রহণ করলে তথ্য চুরি, ফিশিং, হ্যাকিং ইত্যাদির মতো অনলাইনভিত্তিক ঝুঁকির মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য আমাদের এই বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।

পুনরায় এমন বার্তা যাতে বাবুল মিয়াকে না পেতে হয় এজন্য সেই ওই নাম্বারগুলোকে সিলেক্ট করে ব্লক করে দিতে পারেন। ব্লক করার জন্য হোয়াটস অ্যাপে যে নম্বর থেকে ম্যাসেজটি এসেছে সেই নম্বরটি ওপেন করতে হবে। এরপর মোবাইলের স্ক্রিণের ডানদিকে উপরে তিনটি বিন্দুর একটি আইকন পাওয়া যাবে। সেখানে ক্লিক করে মোর অপশনে গিয়ে ব্লক অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে।  তাহলে সে এইরকম বিভ্রান্তিকর মেসেজগুলো পাবে না ।

ঘটনাগুলো পড়ে আমরা বুঝতে পারলাম আমরা অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারি । এরকম অবস্থায় কোন বড় ধরনের ক্ষতির কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের পরিস্থিতি বুঝে যতদ্রুত সম্ভব উপরে উল্লেখিতে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে হবে।