একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোহাগ একজন নতুন ব্লগার। নতুন নতুন খাবারের দোকানের চমকপ্রদ সব খাবারের রিভিউ ভিডিও বানানোর কারণে বর্তমানে তার পরিচিতি বেড়েই চলেছে। হঠাৎ একটি এড দেখে সোহাগ জানতে পারে যে, একটি নতুন অ্যাপের মাধ্যমে তার ফেসবুক-ইউটিউব একাউন্টগুলো ব্যবহার করলে তার বানানো ভিডিওগুলো আরো দ্রুত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। খুব বেশি চিন্তাভাবনা ছাড়াই সোহাগ অ্যাপ্সটি ডাউনলোড করে ব্যবহার করা শুরু করলো। অ্যাপ্সটি ব্যবহার করার জন্য সোহাগকে ফেসবুক-ইউটিউব একাউন্টের বিস্তারিত তথ্য (লগ-ইন তথ্য যেমন, পাসওয়ার্ড, ইমেইল, মোবাইল নম্বর, ইত্যাদি) প্রদান করতে হলো। এর কয়েক মূহুর্ত পরেই সোহাগের ফেসবুক এবং ইউটিউব একাউন্টটি হ্যাকিং এর শিকার হলো।
সোহাগের মতো এমন হাজারো তরুণ-তরুণী প্রতিদিনই ইউটিউব, ফেসবুক কিংবা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন সেলিব্রিটিদের ছবি-ভিডিও বা জীবনযাপন দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ব্লগার-ইনফ্লুফ্লয়েন্সারদের সংখ্যা। আর এসব মাধ্যমের অসতর্ক ব্যবহারের কারণে নানারকম ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে ব্যক্তিগত তথ্যাদি বেহাত হওয়ার পাশাপাশি অনেকেই আর্থিক ও সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হচ্ছে। মূলত একাউন্ট তৈরি বা লগ-ইন করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন না করার কারণেই তারা বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই অনলাইনে বিভিন্ন কাজের জন্য একাউন্ট তৈরি বা লগ-ইন করার ক্ষেত্রে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। যেমন:
একাউন্ট তৈরি করার সময়ে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:
১। একটি শক্তিশালী এবং অনন্য (ইউনিক) পাসওয়ার্ড বাছাই করতে হবে।
২। টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (জি মেইল, ইয়াহু, ফেসবুক, হোয়াটস আপ, টুইটার ইত্যাদি অ্যাকাউন্ট সুরক্ষার বাড়তি একটি ধাপ) এর মাধ্যমে একাউন্টের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
৩। নাম, ফোন নম্বর, ইমেল ঠিকানাসহ অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করার সময়ে সাবধান থাকতে হবে।
একাউন্টে লগ-ইন করার সময়ে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:
১। তোমার ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্যসমূহ ব্যবহার করে লগ-ইন করার ক্ষেত্রে ঐ ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মটির যথাযথ গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করতে হবে।
২। সন্দেহজনক লিঙ্কসমূহ ব্যবহার করা অথবা এসব লিঙ্কে প্রবেশ করতে একাউন্টের তথ্য ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩। পাবলিক (গণ) ওয়াই-ফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে সাবধানতা মেনে চলতে হবে। যেমন ফ্রি ওয়াই-ফাই চালিয়ে কখনোই অনলাইন ব্যাংকিংয়ের কাজ করা উচিত নয়। সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাবহার এড়িয়ে যাওয়াটাই সবচেয়ে নিরাপদ। ইমেইল বা স্কাইপেও লগ ইন না করাটাই নিরাপদ হবে।
৪। সাইবার ক্যাফে ব্যবহার করলে অথবা ব্যক্তিগত ডিভাইস ছাড়া অন্য কোথাও একাউন্ট লগ ইন করে থাকলে অবশ্যই কাজ শেষে লগ-আউট করতে হবে।
৫। সাইবার ক্যাফে ব্যবহার করলে অথবা ব্যক্তিগত ডিভাইস ছাড়া অন্য কোথাও একাউন্ট লগ ইন করে থাকলে, কখনোই লগ-ইন তথ্য সেভ করে রাখা যাবে না।
একাউন্টের জন্য পাসওয়ার্ড নির্বাচনের সময়ে যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:
১। অক্ষর, সংখ্যা এবং কীবোর্ড সংকেতসমূহের সমন্বয়ে পাসওয়ার্ড নির্বাচন করলে তা অন্যদের পক্ষে ধারণা করা কঠিন হয়ে থাকে।
২। ইংরেজি অক্ষর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ছোট ও বড় হাতের অক্ষরের মিশ্র ব্যবহার পাসওয়ার্ডটিকে আরো শক্তিশালী করবে।
৩। নিজের নাম বা পরিচিত আদ্যাক্ষর, জন্মদিন, জন্মের সাল, ফোন নাম্বার ইত্যাদি তথ্যের ব্যবহার পাসওয়ার্ডকে দুর্বল করে ফেলে। কারণ, তা অন্যদের পক্ষে ধারণা করা অপেক্ষাকৃত সহজ।
৪। কমপক্ষে ৮ টি অক্ষর ব্যবহার করুন। সংখ্যা ব্যবহারের ক্ষেত্রে সরলধারা (যেমন ১১১, ৯৯৯, ১২৩) ব্যবহার না করাই উত্তম।
৫। অনলাইনে সকল পরিষেবাগুলির জন্য একটি পাসওয়ার্ড পুনঃব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৬। কোনো অবস্থায়ই অন্যদের সাথে পাসওয়ার্ড শেয়ার করা যাবে না।