অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য এবং ডিজিটাল কনটেন্ট (যেমন: ছবি, ভিডিও)-এর গোপনীয়তা রক্ষার্থে করণীয়

খালিদ হাসান একজন স্কুল শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি ফেসবুকে লেখালেখি করনে তিনি। নিজের ছবি এবং ভালো লাগার মুহুর্তগুলো ফেসবুকে আপলোড করেন তিনি। একদিন তিনি খেয়াল করলেন যে তার নাম এবং ছবি ব্যবহার করে অন্য কেউ একজন ফেসবুকে আরো একটি অ্যাকাউন্ট চালু করেছেন যে অ্যাকাউন্টের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। ঐ অ্যাকাউন্ট থেকে এমন এমন লেখা ও ছবি পোস্ট করা হচ্ছে যে গুলো খালিদ স্যারের জন্য বিব্রতকর। পরিচিতজনদের সাথে আলাপ করে ঐ ভূয়া অ্যাকাউন্টের নামে ফেসবুকে রিপোর্ট করেন খালিদ স্যার।

খালিদ স্যারের মত অসাবধানতার বশে প্রতিদিনই নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে শেয়ার করছেন অনেকেই। ফলশ্রুতিতে পরিচয় চুরি কিংবা জালিয়াতির মতো হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন তারা।

অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন- ঠিকানা, ফোন নম্বর, পরিবারের সদস্যদের নাম, গাড়ির তথ্য, পাসওয়ার্ড, কাজের ইতিহাস, সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর, জন্ম তারিখ, পাসপোর্টের তথ্য, ড্রাইভারের লাইসেন্স নম্বর, বীমা পলিসি নম্বর, ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড নম্বর, এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ইত্যাদির মতো সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করা ঝুঁকিপূর্ণ ।

আপনি অনলাইনে যা পোস্ট করেন, তা যে কেউ দেখতে পারে। তাই, অনলাইনে কিছু পোস্ট করার আগে বা ইমেইলে তথ্য শেয়ার করার আগে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা আপনার জন্য বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

 কেউ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে কি করতে পারে?

একজন ছদ্মবেশী ব্যক্তি আপনার নাম এবং তথ্য ব্যবহার করে-

·         নকল ক্রেডিট কার্ড, জাল পাসপোর্ট বানাতে পারে।

·         নকল ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে পারে।

·         সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া একাউন্ট খুলে আপনার ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে, তার করা যেকোনো ভুল কাজের জন্য আপনার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হতে পারে বা হয়রানির শিকার হতে পারেন।

·         আপনার ছবি, অঙ্গভঙ্গিমা ব্যবহার করে এনিমেশন চরিত্র প্রস্তুত করতে পারে। যার প্রচারণা অনেকক্ষেত্রেই বিব্রতকর হতে পারে।

·         এমনকি ছদ্মবেশী একজন আসামী গ্রেপ্তার এড়াতে আপনার পরিচয় নিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে।

·         অপরাধ সংগঠনের পরে আলামত হিসেবে আপনার তথ্য রেখে এসে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।

  অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদভাবে শেয়ার করতে করণীয়:

১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে নিয়মিত আপনার ‘গোপনীয়তা সেটিংস’ পরীক্ষা করুন৷

২.বাস্তব জীবনে যাদের সাথে পরিচয় আছে এমন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো দেওয়া লিঙ্ক-এ প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।  

৩. আপনার পরিচিতদের ব্যক্তিগত তথ্য এর প্রতি যত্নশীল হওয়া আপনার কর্তব্য। তাই,অনলাইনে এসকল  তথ্য উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।

৪. কোনো তথ্য (তারিখ, নাম, স্থান বা অর্জন, ইত্যাদি) শেয়ার করার ক্ষেত্রে, সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে তথ্যসমূহকে অনির্দিষ্টভাবে শেয়ার করা যেতে পারে।

৫. বিভিন্ন রোমাঞ্চকর মুহুর্ত, স্মরণীয় ঘটনা অথবা কোনো বিষয়বস্তু সংক্রান্ত ব্যক্তিগত মনোভাব, ইত্যাদি শেয়ার করার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন অতিমাত্রার হয়ে না যায়। মনে রাখবেন, একবার কোনো তথ্য ইন্টারনেটে শেয়ার হয়ে গেলে, তা কে দেখতে পাবে তার উপরে আপনার খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।

৬. পাসওয়ার্ড নির্বাচন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যাবলি বেহাত হওয়ার হাত থেকে বাঁচা যায়।