মাহিন কিছুদিন আগেই মতিঝিলের একটি স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। সম্প্রতি সে ছুটি কাটাতে পরিবারের সাথে দোয়েল রিসোর্টে ঘুরতে গিয়েছিলো। ঘুরাঘুরির বিভিন্ন মুহূর্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়ার কারণে মাহিনের অনেক ব্যক্তিগত তথ্য সকলের জন্য উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে। গতকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করে মাহিন জানতে পেরেছে যে, তার নাম ও ছবি ব্যবহার করে অন্য কেউ একটি নতুন আইডি খুলেছে। এই হয়রানি থেকে বাঁচার উপায় খুজতে মাহিন তার বন্ধু তাহসিনের কাছে সাহায্য চেয়েছিলো। সব শুনে, তাহসিন মাহিনকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অথবা অনলাইনে যেকোনো ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয়।
মাহিনের মতো এমন শতশত তরুণ-তরুণী অসাবধানতার বশে প্রতিদিনই নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে শেয়ার করছে। ফলশ্রুতিতে পরিচয় চুরি কিংবা জালিয়াতির মতো হয়রানির স্বীকার হচ্ছে।
অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন- তোমার ঠিকানা, ফোন নম্বর, পরিবারের সদস্যদের নাম, গাড়ির তথ্য, পাসওয়ার্ড, কাজের ইতিহাস, সামাজিক নিরাপত্তা নম্বর, জন্ম তারিখ, স্কুলের নাম, পাসপোর্টের তথ্য, ড্রাইভারের লাইসেন্স নম্বর, বীমা পলিসি নম্বর, ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড নম্বর, এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ইত্যাদির মতো সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার করা ঝুঁকিপূর্ণ ।
তুমি অনলাইনে যা পোস্ট করো, তা যে কেউ দেখতে পারে। তাই, অনলাইনে কিছু পোস্ট করার আগে বা ইমেইলে তথ্য শেয়ার করার আগে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। অপরিচিত ব্যক্তিদের সাথে অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করা তোমার জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
কেউ তোমার ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে কি করতে পারে?
একজন ছদ্মবেশী ব্যক্তি তোমার নাম এবং তথ্য ব্যবহার করে-
· নকল ক্রেডিট কার্ড, জাল পাসপোর্ট বানাতে পারে।
· নকল ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে কেনাকাটা করতে পারে।
· সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া একাউন্ট খুলে তোমার ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে। এক্ষেত্রে, তার করা যেকোনো ভুল কাজের জন্য তোমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে বা হয়রানির শিকার হতে পারো।
· তোমার ছবি, অঙ্গভঙ্গিমা ব্যবহার করে এনিমেশন চরিত্র প্রস্তুত করতে পারে। যার প্রচারণা অনেকক্ষেত্রেই বিব্রতকর হতে পারে।
· এমনকি ছদ্মবেশী একজন আসামী হলে, গ্রেপ্তার এড়াতে তোমার পরিচয় নিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করতে পারে।
· অপরাধ সংগঠনের পরে আলামত হিসেবে তোমার তথ্য রেখে এসে ফাঁসিয়ে দিতে পারে।
অনলাইনে ব্যক্তিগত তথ্য নিরাপদভাবে শেয়ার করতে করণীয়:
১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে নিয়মিত তোমার ‘গোপনীয়তা সেটিংস’ পরীক্ষা কর৷
২.বাস্তব জীবনে যাদের সাথে পরিচয় আছে এমন ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো দেওয়া লিঙ্ক-এ প্রবেশ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩.তোমার পরিচিতদের ব্যক্তিগত তথ্য এর প্রতি যত্নশীল হওয়া তোমার কর্তব্য। তাই,অনলাইনে এসকল তথ্য উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা বজায় রাখতে হবে।
৪. কোনো তথ্য (তারিখ, নাম, স্থান বা অর্জন, ইত্যাদি) শেয়ার করার ক্ষেত্রে, সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। প্রয়োজনে তথ্যসমূহকে অনির্দিষ্টভাবে শেয়ার করা যেতে পারে।
৫. বিভিন্ন রোমাঞ্চকর মুহুর্ত, স্মরণীয় ঘটনা অথবা কোনো বিষয়বস্তু সংক্রান্ত ব্যক্তিগত মনোভাব, ইত্যাদি শেয়ার করার সময়ে খেয়াল রাখতে হবে এটি যেন অতিমাত্রার হয়ে না যায়। মনে রাখবে, একবার কোনো তথ্য ইন্টারনেটে শেয়ার হয়ে গেলে, তা কে দেখতে পাবে তার উপরে তোমার খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না।
৬. পাসওয়ার্ড নির্বাচন ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিচক্ষণতার প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্যাবলি বেহাত হওয়ার হাত থেকে বাঁচা যায়।