ইন্টারনেট এর বিস্তারের সাথে সাথে ডিজিটাল পরিমণ্ডলে মানুষের বিচরণ দিন দিন বাড়ছে। বিভিন্ন সমাজের, বিভিন্ন মতের এবং বিভিন্ন পেশার মানুষ তাদের ভিন্ন ভিন্ন আদর্শ এবং মতামত এই ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ করছেন। এতে করে খুবই স্বাভাবিক নিয়মেই তাদের কথা বার্তায় এবং আচরণে আমরা বিচিত্রতা দেখতে পাই। মানুষের সাথে মানুষের চিন্তা, চেতনা, বিশ্বাস, মতামত কিংবা আচরণের এই পার্থক্য অনেক সময় সামাজিক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বিনষ্ট করে, যা কোনভাবেই কাম্য নয়। ডিজিটাল মাধ্যমে এই বৈচিত্র্যের প্রতি পারস্পরিক সম্মান ও শ্রদ্ধা বজায় রাখা খুব জরুরি। এজন্য বিভিন্ন মত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অবস্থার মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান বজায় রাখার জন্যে আমাদের কী করা উচিত তা জেনে নিতে হবে।
১। বাস্তব জীবনে যেকোনো কিছু বলা বা করার ক্ষেত্রে শুরুতে আমরা ভেবে নিই যে সেই কথা বা কাজ অন্য কোন ব্যক্তির বিরক্তির কারণ বা ক্ষতির কারণ হবে কিনা। অনলাইন মাধ্যমেও ঠিক একই ভাবে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। মনে রাখা জরুরী যে, এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমরা মানুষের কল্যাণে এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবো মানুষে মানুষে ভেদাভেদ তৈরিতে নয়। । তাহলে দেখবেন আমাদের আচরণের মধ্যে নেতিবাচকতা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
২। আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাসের এবং মতের মানুষ পাশাপাশি বাস করে। আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে অন্য সবার দৃষ্টিভঙ্গি মিলতেই হবে এমন ধারণা করাটা অনুচিত। সমাজে বৈচিত্র্য খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এই বৈচিত্র্য মেনে নিয়ে আমাদের সকলের মতামত, বিশ্বাস ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। এতে করে আপনি অনলাইন এবং অফলাইন সব জায়গাতেই তিক্ততা এড়িয়ে চলতে পারবেন।
৩। অনলাইনে কোনো মন্তব্য প্রকাশের আগে একটু খেয়াল রাখবেন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ছোট করা হচ্ছে কিনা বা আপনার কথাতে কারো প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পাচ্ছে কিনা। কেননা আপনার বক্তব্য যদি কোনো ব্যক্তির অনুভূতিতে আঘাত আনে তাহলে স্বভাবতই তিনি বিরক্ত হবেন এবং প্রতিক্রিয়াও দেখাতে পারেন। এমতাবস্থায় আপনি সহনশীল আচরণ প্রদর্শন করতে অপারগ হলে পারস্পরিক অসম্মানের ক্ষেত্র তৈরি হতে পারে।
৪। যে কোন মন্তব্য, ছবি, ভিডিও বা যে কোনো তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নিবেন যাতে কারো প্রতি মিথ্যা অপবাদ রটানো, সম্মানহানী বা অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার মত ব্যাপার আসলেই ঘটছে কিনা। এছাড়া, কারো ব্যক্তিগত বিষয় যা সে প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এমন বিষয় যাতে প্রকাশিত না হয় সে ব্যাপারেও সচেতন থাকা দরকার।
৫। কোনো ইস্যুতে মতের মিল না হওয়া এবং তার জন্যে তর্ক বিতর্ক হওয়া খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এক্ষেত্রে আপনি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের মাধ্যমে পরিচিত বা অপরিচিত কারো সাথে দ্বিমত পোষণ করতে পারেন। কেননা ব্যক্তিগত আক্রমণ বা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-মতের প্রতি আক্রমণ না করে যুক্তি দিয়ে সুন্দরভাবে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করলে পারস্পরিক সম্মান বজায় থাকবে।
৬। আপনার নিজের ধর্ম, মত, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচয়ের জায়গা থেকে কিছু প্রচার করার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই অন্য কোন বিশ্বাসের মানুষকে না বুঝে আঘাত দেয়া হয়ে যায়। এমন অনেক উদাহরণ আপনার চারপাশে আপনি দেখতে পাবেন। এজন্য এই ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকা দরকার ।
৭। আপনি অবশ্যই ভদ্র ও শোভন উপায়ে এবং রাষ্ট্রীয় আইন মেনে আপনার ধর্ম, আদর্শ বা সংস্কৃতি প্রচার করতে পারেন। এতে করে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় থাকে। অন্যথায় তিক্ততা বাড়বে, অসম্মান বাড়বে এবং সংঘাত বাড়বে। আমাদের মনে রাখা উচিৎ কারো চিন্তা, আদর্শ বা বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কথা বললে যে কারোরই খারাপ লাগতে পারে।
৮। অন্য কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলার ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। আপনার সাথে তার সম্পর্ক বিবেচনা করে আচরণ প্রদর্শন করবেন। ইনবক্সে বা কমেন্টে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে কাউকে বিরক্ত করা থেকে বিরত থাকুন।
৯। পরিচিত বা ঘনিষ্ঠ কেউ না হলে সম্বোধনের ক্ষেত্রে ‘আপনি’ ব্যবহার করবেন। অপরিচিতদের ক্ষেত্রে কখনো ‘তুমি’ বা ‘তুই’ সম্বোধন করে কথা বলা উচিত না।
১০। কোনো ব্যক্তির সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে তার ধর্ম, সংস্কৃতি, জাতিগত পরিচয়, ভাষা, লিঙ্গ, শারীরিক বা অন্য কোন প্রতিবন্ধকতা ইত্যাদির জন্য কোন বৈষম্য না করে সবাইকে সমানভাবে দেখা এবং সম্মান প্রদর্শন করা উচিত। কারও বৈচিত্র্য বা ভিন্নতার জন্য কোন ধরনের আক্রমণ, বিদ্বেষ বা বৈষম্য করা অনুচিত। এছাড়া কথায় অন্যের ধর্ম, লিঙ্গ, জাতি বা শারীরিক বৈশিষ্ট্য/পরিচয়কে সামনে নিয়ে আসা উচিত নয়।
পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় না রাখতে পারলে ডিজিটাল মাধ্যম বা বাস্তব জীবনে কোথাও স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখা সম্ভব না। বিশেষ করে ডিজিটাল মাধ্যমে আরো সচেতন থাকা উচিত কারণ এখানে মানুষটাকে আপনি সামনাসামনি দেখছেন না, সেজন্য আপনার এই আচরণ বা মন্তব্যের কারণ কী তা বোঝা সহজ নয়। এজন্য যে কোনো ধরনের অনলাইনে যোগাযোগে আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সম্মান বজায় রেখে আচরণ প্রদর্শন করা উচিৎ।