ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ

ধরো, সমাজের বিধি-নিষেধের বাইরে গিয়ে তুমি যা খুশি করতে পারছো। তাহলে কেমন হত? তুমি হয়তো বলবে এটা মোটেও সম্ভব না। সম্ভব হলে কিভালো হতো? 

যা ইচ্ছা তাই করার সুযোগ বাস্তব জীবনে থাকলে জীবনধারণ কেমন বিশৃঙ্খল আর অরাজকতাপূর্ণ হয়ে যেত ভাবো তো একবার! সাইবার সেক্টরে তুমি যেই সুযোগ পাচ্ছো, সমাজের অপরাধীরাও তো একই সুযোগ পাচ্ছে। তাহলে এই অপার স্বাধীনতা যদি কোন নিয়মের মধ্যে না থাকে তাহলে তুমি নিজেই তো অপরাধের শিকার হতে পারো, তাই না? এ বিষয়ে ভেবেছো কখনো? তোমার আশেপাশের অনেক মানুষ অনলাইনে সাইবার বুলিং, ফ্রড, হ্যাকিং, যৌন সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। 

সাইবার অপরাধ দমনের জন্যে বাংলাদেশে ২০১৮ সালে করা হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আইনের উদ্দেশ্য, ব্যবহার এবং আইন সাধারণ মানুষকে কোন কোন অপরাধ থেকে কী কী নিরাপত্তা দেয় সেসব না জানলে আইনের অপপ্রয়োগ ও আইনের সহায়তা না নেয়ার হার বেশি থাকে। 

সেজন্য  জেনে নেয়া যাক এই আইনের আলোচিত এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু ধারা ও অপরাধের শাস্তি সম্পর্কে। অর্থাৎ কোন কোন ডিজিটাল অপরাধ থেকে রাষ্ট্র আপনাকে সুরক্ষা দেয় এবং কোন কোন অপরাধে শাস্তি পরিমাণ কেমন সেই সম্পর্কে – 

গুরুত্বপূর্ণ ধারাসমূহ:

১। কোন ডিজিটাল তথ্যভাণ্ডারে বেআইনী প্রবেশ এবং এর ক্ষতি করার উল্লেখ আছে আইনের ১৭ নং ধারায়।

২। ১৮ নং ধারায় বর্ণনা করা হয়েছে অনলাইনে স্প্যাম শেয়ার করা, হ্যাকিং, কম্পিউটার ভাইরাস ছড়ানো এবং অনলাইনে আর্থিক জালিয়াতি সম্পর্কে।

৪। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও অবমাননার বিরুদ্ধে আইনের ২১ নং ধারার মাধ্যমে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে।

৫। অনলাইন মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আর্থিক বা অন্য কোন সুবিধা নেয়ার জন্যে প্রতারণার ব্যাপারে বলা হয়েছে ২৩ নম্বর ধারায় এবং মিথ্যা পরিচয় বা ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা সম্পর্কে ২৪ নম্বর ধারায়।

৮। ২৬ নম্বর ধারায় অনুমতি ছাড়া ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ, ব্যাবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। যেমন – নাম, পিতা-মাতার নাম, জন্ম তারিখ, ফোন নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার, পাসপোর্ট নাম্বার, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম সনদ, ফিঙ্গার প্রিন্ট, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, ডিএনএ প্রোফাইল বা অন্য যেকোন পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য। 

৯। ২৭ নং ধারায় অনলাইনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং ২৮ নং ধারায় কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীর ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে ইচ্ছাকৃতভাবে অনলাইনে এমন তথ্য প্রচার বা মতামত প্রদানের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে।

১০। ৩১ নং ধারায় সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্টকারী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়া হয়েছে। 

সাধারণ নাগরিক হিসেবে দেশের আইন সম্পর্কে ভালোমত জানলে অনেক বিপদ থেকেই বেঁচে যাওয়া সহজ হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন জানলে তুমি অনলাইনে তোমার আচরণ অপরাধ হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে সতর্ক থাকতে পারবে। পাশাপাশি তুমি বা তোমার আশেপাশের কেউ যদি সাইবার অপরাধের শিকার হয় তাহলে ব্যবস্থা নেয়াও তোমার জন্য সহজ হয়ে যাবে।