ডিজিটাল পরিমণ্ডলে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মূল্যবোধ, নৈতিকতা

অনলাইন মাধ্যম গুলোতে আমাদের বিচরণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা এখন অনলাইন নির্ভর হয়ে পড়ছি। যোগাযোগের উদ্দেশ্যে আমরা প্রতিনিয়ত অনলাইন মাধ্যম গুলো ব্যবহার করছি। বিভিন্ন ধরনের সেবা গ্রহণ করছি। এজন্য আমাদের খেয়াল রাখতে হবে আমরা যাতে অনলাইনে এমন কিছু করে না বসি যা পরবর্তীতে সমস্যার সৃষ্টি করবে। তাই ডিজিটাল পরিমণ্ডলে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মূল্যবোধ এবং অনলাইন নৈতিকতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পারস্পরিক শ্রদ্ধা -ডিজিটাল মাধ্যমে পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখাটা খুবই জরুরি। ‘পরমতসহিষ্ণুতা’ বলে একটা শব্দ আমরা হয়ত অনেকেই জানি। এই শব্দের অর্থ হচ্ছে অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। এই সমাজে সকলেই ভিন্ন ব্যক্তিত্ব, ভিন্ন বিশ্বাস ও চিন্তা নিয়ে বেড়ে ওঠে। সকলের ভিন্নমতকে শ্রদ্ধা করতে পারলে, তর্ক-বিতর্ক-দ্বিমত করার পরেও পারস্পরিক শ্রদ্ধা বজায় রাখতে পারলে অনেক সমস্যা এমনিতেই সমাধান হয়ে যায়। অনেক জটিলতা এড়িয়ে চলা যায়।

মূল্যবোধ- মূল্যবোধ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে একটি পথ প্রদর্শকের মতো সহায়তা করে। এর মাধ্যমে আমরা সমাজের ভালো কাজগুলো সমর্থন করার শক্তি পাই এবং অন্যান্য অশ্লীল ও কুরুচি পূর্ণ কাজকে প্রত্যাখ্যান করতে পারি। ডিজিটাল পরিমণ্ডলে বিচরণকালে আমাদের এই পারস্পরিক মূল্যবোধ বজায় রাখতে হবে।

 

অনলাইন নৈতিকতা -অনলাইনে যুক্ত থাকা অবস্থায় আমাদের যে ধরনের আচরণ করা উচিৎ, তার যাবতীয় নির্দেশনাই অনলাইন নৈতিকতা হিসেবে পরিচিত। এগুলো সাধারণত একটি দেশের আইন এবং ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে। অনলাইনে যোগাযোগ এবং বিভিন্ন সেবা গ্রহণকালে আমাদের অনলাইন মাধ্যমসমূহে নৈতিকতা মেনে চলতে হবে।

 

ডিজিটাল পরিমণ্ডলে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, মূল্যবোধ ও নৈতিকতা রক্ষার্থে করণীয়

(১) আপনার কোনো ব্যবহার যেটা অন্যের বিরক্তির কারণ হতে পারে, সেই ধরণের ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে। এজন্য ডিজিটাল পরিমণ্ডলে যে কোনো আচরণ প্রদর্শনের পূর্বে ভেবে নিন।

(২) রাষ্ট্রের প্রতি অসম্মানজনক কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহী কোন ধরনের পোস্ট/বক্তব্য অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা থেকে নিজে বিরত থাকুন এবং অন্যকেও বিরত রাখুন। যদি এমন কোন পোস্ট/বক্তব্য আপনার নজরে আসে তাহলে তা রিপোর্ট করুন। 

(৩) অনলাইন মাধ্যমে যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবসময় নিজের অথবা অন্য কারো ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা যাতে বিঘ্নিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। নিজের ব্যক্তিগত তথ্যাবলী সবসময় নিরাপদ রাখার চেষ্টা করুন। সেই সাথে অন্য কোন ব্যক্তির তথ্যও যদি আপনার কাছে থেকে থাকে তাহলে সেগুলোও নিরাপদ রাখতে সচেষ্ট হবেন। এছাড়া কারো ব্যক্তিগত বিষয় যা সে প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এমন বিষয় প্রকাশিত না হয় সে ব্যাপারেও সচেতন থাকা দরকার। 

(৪) সমাজের বৈচিত্র্য মেনে নিয়ে সকল ধরনের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে আপনি অনলাইন-অফলাইন সবখানেই তিক্ততা এড়িয়ে চলতে পারবেন।

(৫) অনলাইনে কিছু লেখা বা বলার ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখবেন যে আপনি যা লিখছেন বা বলছেন তাতে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে ছোট করা হচ্ছে কিনা, কারো ব্যাপারে কটু মন্তব্য বা বিদ্বেষ প্রকাশ পাচ্ছে কিনা। নতুবা আপনার লেখায় সেই বিশ্বাসের ব্যক্তি স্বভাবতই বিরক্ত হবে, প্রতিক্রিয়া দেখাবে। তার প্রতিউত্তরে আপনি যদি সহনশীল আচরণ করতে না পারেন তাহলে পারস্পরিক অসম্মানের ক্ষেত্র তৈরি হবে।

(৬) অনলাইনে বিভিন্ন রকমের মানুষের সাথে আমাদের প্রতিনিয়ত পরিচয় ঘটে অথবা যোগাযোগ করার দরকার হয়। তাই কখনোই কাউকে ছোট মনে করবেন না। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবাইকে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবেন।

(৭) ভিন্নমতের মানুষের সাথে দ্বিমতের  ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যাতে কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ বা জাতি-ধর্ম-বর্ণ-মতের প্রতি আক্রমণ করা না হয়। এতে করে পারস্পরিক সম্মান নষ্ট হবে না। তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে- যুক্তি দিয়ে সুন্দরভাবে আপনার বক্তব্য উপস্থাপন করা।

(৮) আপনার নিজের ধর্ম, মত, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক পরিচয়ের জায়গা থেকে অনলাইনে কিছু শেয়ার করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যাতে অন্য কোন ধর্মের বা মতের মানুষ তাতে আঘাত না পায়।

(৯) অন্য কোন ব্যক্তির ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলার ব্যাপারে সচেতন থাকবেন। আপনার সাথে তার সম্পর্ক বিবেচনা করে আচরণ করবেন। ইনবক্সে বা কমেন্টে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাকুন। আপনার কোনো আচরণ কারো জন্য বিরক্তির কারণ হয়ে যাচ্ছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখবেন।