ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সতর্কতা

সামিনা আক্তার তার অফিসের সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগের জন্য একটি জিমেইল একাউন্ট তৈরি করেছিলেন। তিনি নিয়মিত তার ইমেইল চেক করেন। একদিন তার কাছে অপরিচিত  একটি ইমেইল আইডি থেকে লিংকসহ মেইল আসলো। তিনি ইমেইলের লেখাগুলো পড়ে দেখলেন যে লিংকটি একটি “ফোটো এডিটর” অ্যাপের অর্থাৎ এই অ্যাপের মাধ্যমে তিনি তার ফোনের যেকোনো ছবি এডিট করতে পারবেন। তিনি লিংকে প্রবেশ করলেই তার মোবাইল ফোনে একটি অ্যাপ ডাউনলোড হওয়া শুরু হয়ে গেলো। তারপর অ্যাপটি ইনস্টল করার জন্য তার কাছে তার ফোনের কনট্যাক্ট (Contact ) এবং লোকেশন ( Location ) এক্সেস চাইলে তিনি সেটার অনুমতি দিয়ে দিলো। পরের দিন থেকে খেয়াল করলেন যে তার ফোনে বিভিন্ন নাম্বার থেকে এমন মেসেজ আসছে-

“আপনি ৫০,০০০ টাকার লটারি জিতেছেন। পুরস্কার গ্রহণ করতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন-https://drive.google.com/file/d/1Vmy8Wr6gwMz1U4JPUn8brbLXYLQqN/view?usp=sharing “

 আপনি কী মনে করেন? এই যে সামিনা আক্তারের ফোনে যে অনবরত বিরক্তিকর ও অপ্রয়োজনীয় মেসেজ আসতে থাকে এর পিছনের কারণ কী? 

অসতর্কতার কারণে সামিনা আক্তার একধরনের ঝুঁকির শিকার হয়েছে। অসতর্ক পদক্ষেপের ফলে তার ফোনের কন্ট্যাক্ট (Contact) এর তথ্যগুলো কোনো দুষ্টচক্র পেয়ে গেছে এবং এই তথ্য ব্যবহার করে  তার ফোন নাম্বারে বিভিন্ন প্রলোভনমূলক মেসেজ পাঠাচ্ছে। পুনরায় সে লিংকে প্রবেশ করলে ডিজিটাল ডিভাইসের আরও কিছু গোপন তথ্য যেমন- ছবি, ভিডিও, ফাইল পর্যন্তে তারা প্রবেশ করতে পারে। এজন্য যে কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে। 

দিন দিন ডিজিটাল ডিভাইস বৃদ্ধির সাথে সাথে ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টি প্রতি বছর আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই বিনোদন, নেভিগেশন (Navigation), ব্যায়াম এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য ডিজিটাল ডিভাইসের উপর নির্ভর করে তবে দুর্ভাগ্যবশত, আপনার ডিভাইসের কোনো অ্যাপ আপনাকে ট্র্যাক করছে কিনা তা বলার কোনো নির্দিষ্ট উপায় নেই। আপনি হয়ত মনে করছেন যে, অ্যাপটি আপনার দৈনন্দিন জীবনকে অনেকটা সহজ করছে কিন্তু হতেই পারে অ্যাপটি আপনার ডিজিটাল ডিভাইসে রাখা প্রয়োজনীয় ও গোপনীয় তথ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে। এ ব্যাপারটি মাথায় রেখে, আপনার ডিজিটাল ডিভাইসের সুরক্ষা বাড়াতে হবে। কিছু সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা কিছু ভয়ানক ঝুঁকির হাত থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারি। 

 

এখানে আমরা কিছু সতর্কতা সম্পর্কে আলোচনা করব-

 

 

১) অপরিচিত কাউকে আপনার ডিজিটাল ডিভাইসটি ব্যবহার করতে দিবেন না এবং সবসময়ই আপনার ডিজিটাল ডিভাইসটি পাসওয়ার্ড সুরক্ষিত রাখবেন। বন্ধু-বান্ধব বা সহকর্মীদের সাথে আপনার পাসওয়ার্ডটি শেয়ার করবেন না। 

২) যে কোনো অ্যাপ ইনস্টল করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে অ্যাপটি আপনার ফোনের কোন ফিচারের এক্সেস চাচ্ছে ; যেমন: আপনি যদি কোনো ছবি এডিট করার অ্যাপ ডাউনলোড করেন তাহলে ইনস্টল করার সময় আপনার ফোনের গ্যালারির এক্সেস চাইবে এবং সেই অনুমতি আপনার দিতে হবে কিন্তু যদি একটি ফটো এডিট করার অ্যাপ আপনার কাছে আপনার ফোনের কন্ট্যাক্ট এর অনুমতি চায় তখন তাহলে আপনাকে সতর্ক হয়ে যেতে হবে। আবার ধরুন, একটি সেবামূলক অ্যাপ (যেমন:ফুড পান্ডা ) কখনোই আপনার গ্যালারির এক্সেস চাইবে না। এজন্য খেয়াল রাখবেন আপনি যে অ্যাপ ডাউনলোড করছেন সেই অ্যাপটি আপনার কাছে কোনো অপ্রয়োজনীয় ফিচারের এক্সেস চাচ্ছে কিনা। যদি চায় তাহলে অ্যাপটি ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকুন।   

৩) যে কোনো ডাটা ট্রান্সফারের মাধ্যম (যেমন: ব্লুটুথ, শেয়ার ইট, শেয়ার মি) গুলো ব্যবহারের পর সেগুলো বন্ধ করে রাখবেন এবং অপরিচিত কোনো ব্যক্তির ডিভাইসের সাথে ডাটা ট্রান্সফার করা থেকে বিরত থাকতে চেষ্টা করবেন।

৪) পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার থেকে যথাসম্ভব নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করবেন। 

৫) গোপনীয়তা সেটিংস বা Privacy Settings হলো সামাজিক নেটওয়ার্কিং ওয়েবসাইটগুলোর একটি অংশ যা আপনাকে আপনার সম্পর্কে তথ্য কে দেখবে তা নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়। সামাজিক নেটওয়ার্কিং পরিষেবাগুলির ক্রমবর্ধমান প্রসারের সাথে গোপনীয়তা প্রকাশের সুযোগগুলিও বৃদ্ধি পায়। ফলে গোপনীয়তা সেটিংস একজন ব্যক্তিকে এই সকল প্ল্যাটফর্মে কোনো তথ্য যে শেয়ার করা হয়;  তা নিয়ন্ত্রণ করতে দেয়। এক্ষেত্রে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের Privacy Settings এমন করে রাখবেন যাতে আপনার তথ্য কেবল পরিচিত ব্যক্তিরা দেখতে পারে। বেশির ভাগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ক্ষেত্রে এই অপশনটি “Friends” হিসেবে থাকে।

 ৬) অপরিচিত কারো কাছ থেকে কোনো মেসেজ বা ইমেইল আসলে সেগুলো খুবই সাবধানে ওপেন করবেন এবং কোনো লিংক থাকলে সেটি নিরাপদ লিংক কিনা তা নিশ্চিত না হয়ে কখনোই সেখানে প্রবেশ করবেন না। কেননা সেই লিংকে প্রবেশের মাধ্যমে আপনার ডিভাইসের প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোতে অসাধু কোনো চক্র প্রবেশাধিকার পেয়ে যেতে পারে। 

এরকম কিছু সাবধানতা অবলম্বন এবং বুদ্ধি প্রয়োগ করে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করলে আপনি ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারবেন।