বিদ্যমান আইনানুসারে অনলাইনে ক্ষতির শিকার হলে করণীয়

অনেক সতর্ক থাকার পরেও অনলাইনে ক্ষতির শিকার হয়ে যাওয়াটা অসম্ভব না। এত এত ওয়েবসাইট, অ্যাপ, লিঙ্কের মধ্যে কোনটা আসল আর কোনটা প্রতারণা সেসব বোঝাটা অনেক কঠিন। অনলাইনে যৌন হয়রানি, একাউন্ট হ্যাকিং,অশালীন আচরণ, ছবি এডিট করে অশ্লীল প্রচারণা, ছদ্মবেশে সম্পর্কের ফাঁদে ফেলার মত ব্যাপারগুলো খুবই অহরহ ঘটছে। ডিজিটাল মাধ্যমে কাউকে চাইলেই চরিত্র হনন করে প্রচারণা করা যাচ্ছে। এত সহজে যে ব্যাপারগুলো অপরাধীরা ঘটাচ্ছে সেগুলো আইনের আওতায় না আসার কারণে দিন দিন এর পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। তারপর বিকাশ ফ্রড বা লটারি জেতার কথা বলে, অমুক জায়গায় এতগুলো ক্লিক করলে এত টাকা ইনকামের প্রলোভনে পরে ব্যক্তিগত তথ্য বা টাকা-পয়সা হারাচ্ছেন অনেকেই। এই ভিক্টিমদের বেশিরভাগই সামাজিকভাবে অপমানিত হবার ভয়ে বা নিজেই হেলাফেলা করে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অপরাধিকে শাস্তির আওতায় আনেন না। যার মাধ্যমে পার পেয়ে গিয়ে সেই অপরাধী অন্য কারো ক্ষতি করছে। অনলাইনে অপরাধের শিকার হলে আমরা কীভাবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা  নিতে পারি চলো জেনে নেই –

১। সময়ক্ষেপণ না করে ঘনিষ্ঠ কাউকে জানাও:

যখনই বুঝবে তুমি সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েছো তখনই ঘনিষ্ঠ কাউকে বিস্তারিত জানাও। সে হতে পারে এমন কেউ যে তোমার পরিস্থিতি বুঝবে। যে শুধু তোমাকেই দোষী না করে সমস্যাটা সমাধানের চেষ্টা করবে।

২। প্রমাণ রাখো:

অপরাধের যেসব প্রমাণ তোমার হাতে আছে সেসব স্ক্রিনশট নিয়ে, সম্ভব হলে ইউআরএল সহ সেইভ করে রাখো। কারণ আইনি ব্যাবস্থায় গেলে সেগুলো তোমার কাজে লাগবে। সম্ভব হলে বিশ্বাসযোগ্য কাউকে এই প্রমাণগুলো পাঠিয়ে রাখো।

৩। অপরাধীকে ব্লক করো:

অপরাধীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন করো। ফোনে কল ও মেসেজ ব্লক করে, বা অন্য মাধ্যমগুলোতে ব্লক করে দাও।

৪। তোমার ব্যবহৃত ডিজিটাল প্লাটফর্মের নিরাপত্তা বাড়াও:

যদি তুমি অনলাইনে ফিশিং, ভিশিং(ভয়েস ব্যবহার করে ফিশিং), হ্যাকিং, হ্যারাজমেন্ট, বুলিংয়ের শিকার হও তাহলে সাথে সাথেই তোমার একাউন্টের পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলো।  টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি দ্বিতীয় একটি মাধ্যম, যেমন তোমার ফোনে এসএমএস ও ইমেইলে নিশ্চিত হয়েই একাউন্টে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার ব্যাবস্থা চালু করো। এক্ষেত্রে কেউ তোমার পাসওয়ার্ড পেয়ে গেলেও একাউন্টে ঢুকতে গেলে তোমার কাছে মেইল বা মেসেজ চলে আসবে।

৫। জিডি করে রাখো:

পার্শ্ববর্তী থানায় এই অপরাধের বিবরণসহ একটি জিডি করে রাখো। তাহলে পুলিশের কাছে এই অপরাধের একটা রেকর্ড থাকলো।

৬। ভিক্টিমের পাশে থাকো:

তোমার পরিবারের বা বন্ধুদের মধ্য কেউ অপরাধের শিকার হলে তাঁকে দোষী না করে তাঁর পাশে থাকী। কারণ দোষী করলে সব তোমাকে বিস্তারিত নাও জানাতে পারে। সেক্ষেত্রে আইনী সহায়তা নেয়া কঠিন হয়ে যাবে।

৭। দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নাও:

যিনি অপরাধের শিকার হন তাঁর পক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া কঠিন। কেননা মানসিক অস্থিরতা, ট্রমা কাটিয়ে উঠে সহজে ব্যাবস্থা নেয়া খুবই কঠিন। তারপরেও যত দ্রুত সম্ভব আইনগত ব্যবস্থা নেয়া উচিত। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন ভিক্টিমের কাছের লোক যারা এই ব্যাপারটা জানেন।

৮। সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রণে যুক্ত কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করো:

সরাসরি থানায় গিয়ে মামলা করা যেতে পারে, তবে পুলিশের যেসব ইউনিট সাইবার ক্রাইম নিয়ন্ত্রনে কাজ করছে তাদের কাছে গেলে ফলাফল পাবার সম্ভাবনা বেশি। যেমন- নারীদের জন্যে আছে পুলিশের ফেসবুক পেইজ  ‘Police Cyber Support for Women PCSW’। এছাড়া সাইবার ক্রাইম নিয়ে কাজ করে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশনের ‘সাইবার ক্রাইম ইউনিট’।

অনলাইনে মানুষ ছোটখাট কিছু অপরাধ করে, যে সব কাজ তারা সরাসরি হয়তো করতো না।। এর পিছনে একটা কারণ সম্ভবত এইখানে মানুষের সাথে সামনাসামনি ঝামেলায় জড়ানোর সম্ভাবনা নাই। ভার্চুয়াল জগত তাদের মুখোশের মতই কাজ করে। ফেইক আকাউন্ট খুলে অনেক অপরাধই এভাবে চলে। আমরাও এগুলোকে আইনের আওতায় আনি না। এমনকি এসবের শিকার হয়েও অনেকক্ষেত্রে আইনী ব্যবস্থায় না গিয়ে সমাধানের চিন্তা করি। এসবের মাধ্যমে আমরা অপরাধীর জন্যে নিশ্চিন্ত পরিবেশই তৈরি করছি আসলে।