আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক ক্ষয়ক্ষতি

 

দৈনন্দিন জীবনে প্রায় প্রতিটি কাজেই ইন্টারনেটের ব্যবহার রয়েছে। তোমার পছন্দের মোবাইল গেমস নামানো বা খেলা থেকে শুরু করে বই পড়া, ক্লাসে যোগ দেওয়া, বাড়ির কাজ জমা দেওয়া, পছন্দের জামাকাপড়, প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি কিংবা খাবার কেনা, অন্যদের সাথে যোগাযোগ করাসহ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সকল কাজই ইন্টারনেটের সাহায্যে করা যায়। ইন্টারনেটের ব্যবহার জীবনকে সহজতর করেছে ঠিকই, তবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সাথে এর সামঞ্জস্যতা ঠিক না থাকলে বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়।

ইন্টারনেট নির্ভর জীবন যাপন অনেক সময়ে আসক্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে তুমি ও কিন্তু আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারো। এগুলো থেকে বাঁচতে হলে প্রথমে এইসব ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানা জরুরি। যেমন-

সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি: একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে তুমি যে সকল সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারো তার মধ্যে প্রধান হলো –

১। ইন্টারনেটে সচেতনতার সাথে বিভিন্ন পরিষেবা গ্রহণ না করলে তথ্য চুরি হতে পারে। এই সব তথ্য ব্যবহার করে দুষ্কৃতকারী তোমার পরিচয় নকল করতে পারে। আর, পরিচয় নকলকারীর মাধ্যমে কোনো আপত্তিকর অথবা বিভ্রান্তি মূলক তথ্য ছড়ানোর কারণে তুমি হয়রানির শিকার হতে পারো।

২। বিভিন্ন থার্ড পার্টি অ্যাপ ব্যবহার করলে তোমার স্পর্শকাতর, ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে।

১। অতিরিক ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে আমরা বাস্তব জগত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভার্চুয়াল জগতের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পরতে পারি। ইন্টারনেটে আমাদের ব্যক্তিগত অনেক বিষয় উন্মুক্ত করে দিতে পারি যা ব্যক্তিগত ও সামাজিকভাবে বিব্রতকর হতে পারে। 

২। ইন্টারনেটের অতি ব্যবহার করতে গিয়ে এর ওপর নির্ভরতা বেড়ে যেতে পারে, ফলে পড়াশোনায় অমনোযোগ এবং অনীহা তৈরি হতে পারে। 

৩। তুমি যদি যোগাযোগের জন্য অধিক মাত্রায় ইন্টারনেট নির্ভর হও তাহলে, তোমার ব্যক্তিপর্যায়ের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ও সামাজিক মেলামেশায় অসামঞ্জস্যতা দেখা দিতে পারে। ফলে বাস্তব জগতে যোগাযোগ, বন্ধুত্ব এবং সামাজিক সম্পর্কের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে এবং তা সামাজিক বিকাশকে বাঁধাগ্রস্ত করতে পারে। 

৪। ইন্টারনেটে আসক্তির ফলে তুমি 'বাস্তব বিশ্ব' থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারো এবং তোমার বন্ধু ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ কমে যেতে পারে। 

শারীরিক ও মানসিক ক্ষয়ক্ষতি: একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে তুমি যে সকল মানসিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারো তার মধ্যে প্রধান হলো–

১। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের ফলে ইন্টারনেট আসক্তি তৈরি হয়। এর ফলে শারীরিক পরিশ্রম কমে গিয়ে শারীরিক দুর্বলতা ও ঘাড়ে পিঠে ব্যথার মতো সমস্যা তৈরি হয়। 

২।  এছাড়া অতিমাত্রায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারের ফলে রাতে নির্বিঘ্ন ঘুমে ব্যঘাত ঘটতে পারে।

৩। হতাশা, উদ্বেগ এবং দুঃখ- ইন্টারনেটে অত্যধিক সময় ব্যয় করার ফলে বাস্তবতার সাথে তুমি যোগাযোগ হারিয়ে ফেলতে পারো এবং কাল্পনিক জগতের প্রতি ঝোঁক বাড়তে পারে। যার ফলে হতাশা-উদ্বেগের মতো ব্যাপারগুলো তোমার নিত্যসঙ্গী তে পরিণত হতে পারে।

৪। অসহিষ্ণুতা- অর্থাৎ, মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকতে পারে।

৫। এছাড়া অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার নিঃসঙ্গতা, একাকীত্ব বোধ তৈরি করে। ফলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও অবসাদ্গ্রস্ত হতে পারে। 

 আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি: একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী হিসেবে তুমি যে সকল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারো তার মধ্যে প্রধান হলো-

১। ইন্টারনেটে প্রতারক চক্র বিভিন্ন লোভনীয় অফার এর কথা বলে তোমার কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে।

২। প্রতারক চক্র বিভিন্ন মোবাইল ব্যাঙ্কিং কোম্পানির কাস্টোমার সেবা দানকারী ব্যক্তি সেজে ফোন কল অথবা এসএমএস-এর মাধ্যমে পিন নম্বর সংগ্রহ করে থাকে। এভাবেই আমাদের দেশে বিকাশ, নগদ প্রভৃতি মোবাইল ব্যাঙ্কিং সেবাক্ষেত্রে প্রতারকরা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

 ৩। ইন্টারনেটে বা সামাজিক মাধ্যমে অসচেতনভাবে প্রকাশিত আর্থিক তথ্য, পিন, পাসওয়ার্ড বা কার্ড নাম্বার, ব্যাংকিং বা আর্থিক তথ্য অন্যের হাতে পড়ে গেলে তা ব্যবহার করে অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে। 

উপরোক্ত ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও ইন্টারনেট এর অধিক এবং অসচেতন ব্যবহার আমাদের বিভিন্ন বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই, ইন্টারনেটের উপর অত্যাধিক মাত্রায় নির্ভরশীল না হয়ে বাস্তব-স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ইন্টারনেটের সুষম ও সচেতন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।