শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্ক পর্যন্ত সকলের কাছেই ইন্টারনেটের গুরুত্ব অনেক। এছাড়াও করোনা ভাইরাসজনিত কারণে আমাদের জীবনযাপন আরো বেশি ইন্টারনেটমুখী হয়ে গিয়েছে। জামাকাপড়, ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি কিংবা খাবার কেনা, গবেষণা, গ্যাস-বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করা, এবং অন্যদের সাথে যোগাযোগ করার উদ্দেশ্যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অনেকটাই অনলাইনে ব্যয় হয়। ইন্টারনেটের ব্যবহার জীবনকে সহজতর করেছে ঠিকই, তবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রার সাথে এর সামঞ্জস্যতা ঠিক না থাকলে বিভিন্ন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয়। ব্যক্তিগত বা পেশাগত যে কারণেই তুমি ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকো না কেন, তোমাকে অবশ্যই ইন্টারনেটের জালে পেচিয়ে থাকা ঝুঁকিগুলি সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ যে কয়েকটি সম্ভাব্য বিপদের সম্মুখীন হতে পারে তার মধ্যে আর্থিক, সামাজিক ও মানসিক ক্ষয়ক্ষতিগুলো উল্লেখযোগ্য।
সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি: ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ যে সকল সামাজিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারে তার মধ্যে প্রধান হলো –
১। পরিচয় নকলকারীর মাধ্যমে কোনো আপত্তিকর অথবা বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারী তথ্য ছড়ানোর কারণে হয়রানির শিকার হওয়া।
২। থার্ড পার্টি অ্যাপের ব্যবহারের কারণে ব্যক্তিগত গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাওয়া।
৩। যোগাযোগের জন্য অধিক ইন্টারনেট নির্ভরতার কারণে ব্যক্তিপর্যায়ের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ও সামাজিক মেলামেশায় অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়।
৪। ধর্মীয়, ভাষাগত বা জাতিগত কারণে প্রতিহিংসামূলক আচরণের শিকার হতে পারে।
৫। অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের কাছে আপত্তিকর কন্টেন্ট (ছবি, লেখা বা ভিডিও) ছড়িয়ে যেতে পারে।
৬। কর্মক্ষেত্রে দুর্ভোগ, যেমন, কাজে ক্রমাগত দেরি হওয়া, সময়সীমা মিস করা, ত্রুটিপূর্ণ কাজ জমা দেওয়া, ইত্যাদি ঘটনার মুখোমুখি হতে পারে।
৭। অনলাইন কার্যাবলি ও বন্ধুদেরকে অন্যান্য বিষয়ের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে।
৮। 'বাস্তব বিশ্ব' থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং বন্ধু ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ কমে যেতে পারে।
মানসিক ক্ষয়ক্ষতি: ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ যে সকল মানসিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারে তার মধ্যে প্রধান হলো –
১। নিদ্রাহীনতা অথবা রাতে নির্বিঘ্ন ঘুমে ব্যাঘাত ঘটা।
২। হতাশা, উদ্বেগ এবং দুঃখ। যারা ইন্টারনেটে অত্যধিক সময় ব্যয় করে তারা বাস্তবতার সাথে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে এবং একটি কল্পনার জগতে বাস করে। যার ফলে হতাশা-উদ্বেগের মতো ব্যাপারগুলো নিত্যসঙ্গী হয়ে থাকে।
৩। সময়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে অক্ষম হওয়া।
৪। মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকা, ইত্যাদি।
আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি: ইন্টারনেট ব্যবহারকারীগণ যে সকল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে পারে তার মধ্যে প্রধান হলো –
১। পাসওয়ার্ড/পিন কোড চুরির মাধ্যমে হ্যাকাররা তোমার সঞ্চিত অর্থ-সম্পদ চুরি করতে পারে।
২। ইন্টারনেটে কোনো ব্যাক্তির অগোছালোভাবে ছড়িয়ে থাকা ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে ভুয়া ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড, ব্যাঙ্ক একাউন্ট বানিয়ে প্রতারকরা আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি করতে পারে।
৩। প্রতারক চক্র বিভিন্ন লোভনীয় অফার এর কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে।
৪। প্রতারক চক্র বিভিন্ন মোবাইল ব্যাঙ্কিং কোম্পানির কাস্টোমার সেবাদানকারী ব্যক্তি সেজে ফোন কল অথবা এসএমএস-এর মাধ্যমে পিন নম্বর সংগ্রহ করে থাকে। এভাবেই আমাদের দেশে বিকাশ,নগদ প্রভৃতির মোবাইল ব্যাঙ্কিং সেবা ক্ষেত্রে প্রতারকরা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
উপরোক্ত ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াও ইন্টারনেট এর অধিক এবং অসচেতন ব্যবহার আমাদের বিভিন্ন বিপর্যয়ের কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই, ইন্টারনেটের উপর অত্যাধিক মাত্রায় নির্ভরশীল না হয়ে বাস্তব-স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ইন্টারনেটের সুষম ও সচেতন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।